শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ওমর ফারুক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম

ভ্রমণ অভিজ্ঞতা

বরিশালের লাল গির্জায় একদিন

ওমর ফারুক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম

বরিশালের লাল গির্জায় একদিন

ছবি: সংগৃহীত

কাজের ফাঁকে নেট ব্রাউজিং করছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ল এক গির্জা। যেখানে প্রেমের কবি জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে তার প্রথম প্রেমিকা মুনিয়ার দেখা হয়েছিল। জানলাম এটি বরিশালের অক্সফোর্ড মিশনের গির্জা। মুনিয়ার মা এই গির্জায় সেবিকার কাজ করতেন। শুধু কি তাই? বরিশালের এই পুরোনো গির্জাটির সঙ্গে কবির নাকি অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্কও ছিল।

ছাত্রাবস্থায় অক্সফোর্ড মিশনের ছাত্রাবাসে থাকতেন তিনি। ফলে এখানকার ফাদার ও মাদারদের সঙ্গেও ছিল তার ঘনিষ্ঠতা।
এটুকু জেনেই আর লোভ সামলাতে পারলাম না। মন আনচান করছিল বরিশাল যাবার জন্য। যেই ভাবা সেই কাজ। নিয়ে ফেললাম সিদ্ধান্ত। যাত্রা শুরু বরিশালের উদ্দেশ্যে। ঢাকার সদর থেকে সুন্দরবন ১২ তে চেপে চলে গেলাম বরিশাল। সারা রাতের লঞ্চের জার্নিটাও ছিল বেশ রোমাঞ্চকর। লঞ্চ থেকে নেমে বরিশাল সদর ঘাটের সামনের একটি রেস্টুরেন্টে নাশতা সেরে সোজা গির্জায় যাওয়ার জন্য রিকশায় চেপে বসলাম। সকাল তখন ৮টা। গির্জার সীমানায় পৌঁছাতেই অপর এক মুগ্ধতা গ্রাস করল। সীমানা প্রাচীরে ঘেরা লাল ইটের তৈরি গির্জা চোখে পড়তেই আনন্দের ঢেউ বয়ে গেল মনের বালুচরে।

এই হলো বরিশালের অক্সফোর্ড মিশন গির্জা। মূল ফটকের সামনে বড় করে লেখা ‘এপিফানি গির্জা, বাংলাদেশ’। ফটক ভেতর থেকে লাগাল। টোকা দিয়ে ভেতরে জানান দিলাম বাইরে কেউ অপেক্ষা করছে। একটু পরেই একজন ভেতর থেকে জানাল কোথায় যাবেন? বললাম ঢাকা থেকে এসেছি গির্জাটা ঘুরে দেখতে চাই। প্রতিউত্তর আসল এখন ঢোকার অনুমতি নেই বিকেলে আসেন ৪টার দিকে। একটু আফসোস নিয়ে ফিরে গেলাম হোটেলে। কিন্তু বিকেলে যখন গেলাম সেই আফসোস উচ্ছলতায় পরিণত হলো।

ভেতরে প্রবেশ করতেই অনিন্দ্য এক প্রশান্তির সাগরে ডুবে যাবেন আপনি। নিজেকে অনেক পরিশুদ্ধ লাগবে। স্থানীয় একজন পেয়ে গেলাম যিনি আমাদের পুরো গির্জাটি ঘুরিয়ে দেখালেন সেই সঙ্গে বললেন এই কিছু ইতিহাস। মূল গির্জার পাশে রয়েছে বেল টাওয়ার। বেল টাওয়ারটি গির্জার আকর্ষণীয় অংশ। দিনে সাতবার ঠিক প্রার্থনার ৫ মিনিট আগে ঘণ্টাধ্বনি বাজানো হয় এবং এত বড় ঘণ্টা এশিয়ার অন্য কোনো দেশে নেই।

বের হওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম দূর থেকে একজন ফাদার আমাদের বেশ গুরুত্বসহকারে দেখছেন। তিনি কি বিরক্ত নাকি স্বাভাবিক তা দূর থেকে বুঝতে না পারলে কাছে আসার পর টের পেলাম। আমরা গিয়েছিলাম পুরো পরিবার। ফাদার কাছে এসেই আমার সর্ব কনিষ্ঠ কন্যাকে কোলে তুলে নিলেন। মনে হলো তার সঙ্গে আমার কন্যার অনেক দিনের পরিচয়। সব বাচ্চাদের জন্য উপহার দিলেন। ফাদারের সঙ্গে সেই ৫ মিনিট আমার মনে থাকবে আজীবন। অপার এক মুগ্ধতা নিয়ে আমাদের ফিরতে হবে রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের স্মৃতি বিজরিত লাল গির্জা থেকে।

এই ফাঁকে আপনাদের গির্জাটি সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়ে রাখি। ১৯০৪ সালে তৈরি হওয়া গির্জাটির নির্মাণশৈলীতে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য ও শিল্পসৌকর্য। ধানসিঁড়ি নদী থেকে একটু পূর্ব দিকে এগোলেই চোখে পড়বে পামগাছ ঘেরা অক্সফোর্ড মিশন। গাছের ফাঁক দিয়ে তাকালেই দেখা যাবে টেরাকোটা রঙের সুউচ্চ আর্চওয়ে চার্চ।

লাল গির্জার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, এটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যেন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগেও এর স্থাপত্যশৈলী বিনষ্ট না হয়। ১৯৬০ ও ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে বরিশাল অঞ্চলে ১০ লাখ মানুষ মারা যায়। ওই সময় ধ্বংস হয়ে যায় বরিশালের অসংখ্য ভবন। গির্জাটি অক্ষত দাঁড়িয়ে ছিল তখনো। বরিশালের প্রাণকেন্দ্র কবি জীবনানন্দ দাশ রোডে অবস্থিত শতবর্ষী এই গির্জাটির সমানে গেলেই নানা প্রশ্নের উঁকি মারে মনের কোনে।  কবির সঙ্গে কতটা সখ্য ছিল এই গির্জার? তার প্রথম প্রেমিকা মুনিয়ার সঙ্গে আদৌ কি দেখা হয়েছিল এখানে?

এখানে দাঁড়িয়ে মুনিয়াকে কবি কি বলেছিলেন? আরও কত কত প্রশ্ন! এসব প্রশ্নের সামনে এ উপাসনালয়টি আজও 
দাঁড়িয়ে আছে, দাঁড়িয়ে আছে ‘লাল গির্জা’ হিসেবে। চাইলে আপনি যেতে পারেন এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে। উত্তর নিয়ে না ফিরতে পারলেও আপনি ফিরবেন অপার এক মুগ্ধতা আর পরিশুদ্ধতা নিয়ে। 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!