কিছু ফল আছে যাদের শুধু স্বাদই নয়, রূপ, গন্ধ আর গুণও মনকে খুশি করে তোলে নিমেষেই। তেমনই একটি ফল হলো আনারস।
বাইরের কাঁটাময় খোলসের আড়ালে লুকিয়ে থাকে সোনালী রসালো সুখ! এটি শুধু আপনার জিভেই আনন্দ বয়ে আনে না বরং শরীরের ভিতরেও জাগিয়ে তোলে নানা উপকারিতা। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো থেকে শুরু করে হজমে সহায়তা, এমনকি ত্বকের যত্নেও এর ভূমিকা অপরিসীম।
তবে, যেমন এর উপকার আছে, তেমনি কিছু সাবধানতাও আছে যা জানা জরুরি। চলুন, আজকে জেনে নিই আনারস সম্পর্কে বিস্তারিত।
আনারসে যেসব পুষ্টি উপাদান থাকে
এক কাপ (প্রায় ১৬৫ গ্রাম) কাটা আনারসে থাকে:
# শক্তি: প্রায় ৮২ ক্যালোরি
# ভিটামিন সি: দৈনিক প্রয়োজনের ১৩১ ভাগ
# ম্যাঙ্গানিজ: ৭৬ ভাগ
# ভিটামিন বি৬: ৯ ভাগ
# তামা: ৯ ভাগ
# খাদ্যআঁশ: প্রায় ২.৩ গ্রাম
# শর্করা: প্রায় ২২ গ্রাম
# প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ: প্রায় ১৬ গ্রাম
# ব্রোমেলিন: প্রাকৃতিক হজমকারী এনজাইম
আনারস খাওয়ার উপকারিতা
# রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: সি ভিটামিন সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
# হজমে সাহায্য করে: ব্রোমেলিন প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে।
# স্ফীতি ও প্রদাহ কমায়: ব্রোমেলিন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
# হাড়ের জন্য উপকারী: ম্যাঙ্গানিজ হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
# শরীরচর্চার পরে পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে
# চর্মের স্বাস্থ্য উন্নত করে: সি ভিটামিন ত্বকে কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে।
আনারস খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
# অম্লীয়তা: কিছু মানুষের মুখে জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি হতে পারে।
# অ্যালার্জির ঝুঁকি: কারো কারো দেহে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
# অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা: গ্যাস, ফাঁপা বা পাতলা পায়খানা হতে পারে।
# রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়াতে পারে:এতে প্রাকৃতিক চিনি বেশি থাকে।
# ঔষধের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে: বিশেষত যেসব ওষুধ রক্ত পাতলা করে বা সংক্রমণ রোধ করে।
কখন আনারস খাওয়া উচিত এবং কখন নয়
খাওয়ার সঠিক সময়:
# সকালে বা দুপুরে খাওয়া ভালো।
# শরীরচর্চার পরে শক্তি ও জলের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে উপকারী।
যখন না খাওয়াই ভালো:
# একেবারে খালি পেটে খেলে অম্লতা বাড়তে পারে।
# রাতে খাওয়া ঠিক নয় কারণ এতে চিনি বেশি থাকে।
# যাদের গ্যাস্ট্রিক, অম্বল বা পেপটিক আলসার আছে তাদের জন্য উপযুক্ত নয়।
আনারস খাওয়ার আগে যে নিয়মগুলো মানা উচিত
# ভালভাবে খোসা ছাড়াতে হবে: বাইরের শক্ত খোসা ও মাঝখানের অংশ খাওয়ার উপযোগী নয়।
# পরিপক্ব কিনা দেখুন: মিষ্টি গন্ধ ও সামান্য নরম হলে বুঝবেন ফলটি পাকেছে।
# দুধের সঙ্গে খাওয়া যাবে না: হজমে সমস্যা হতে পারে।
# খাওয়ার পর মুখ ধুয়ে ফেলুন: দাঁতের ক্ষয় রোধে সহায়ক।
# পরিমাণমতো খান: প্রতিদিন কয়েক টুকরো যথেষ্ট।
আনারস কি গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে?
হ্যাঁ, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে আনারস গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে:
# এতে থাকা আঁশ ও প্রাকৃতিক চিনির কারণে।
# ব্রোমেলিন হজমের এনজাইমে প্রভাব ফেলতে পারে।
# একবারে বেশি খেলে সমস্যা বাড়তে পারে।
আনারস সম্পর্কিত মজার তথ্য
# এক সময় ইউরোপে আনারস এতই দামী ছিল যে লোকেরা এটি শুধুমাত্র সাজসজ্জার জন্য ভাড়া করত।
# এটি একটি একক ফল নয়, বরং অনেকগুলো ছোট ফল একসঙ্গে মিলিত হয়ে তৈরি হয়।
# একটি গাছ থেকে একটি আনারস পেতে প্রায় ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগে।
# এর মাথার অংশ কেটে মাটিতে পুঁতলে আবার গাছ জন্মানো যায়।
# আগে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ ছিল বিশ্বে আনারস রপ্তানির শীর্ষস্থান, এখন তা বিশ্ব উত্পাদনের মাত্র ১০ ভাগ।