লাল রঙের দানাগুলো দেখতে যেমন লোভনীয়, তেমনি রসালো এই ফলটির রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। প্রাচীনকাল থেকেই বেদানা বা ডালিম শুধু ফল হিসেবেই নয়, বরং একে চিকিৎসার উপাদান হিসেবেও বিবেচনা করা হয়েছে। তবে বেদানার রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতাও, যা জানাও গুরুত্বপূর্ণ।
চলুন জেনে নিই বেদানার উপকারিতা ও সম্ভাব্য অপকারিতা—
বেদানার উপকারিতা
হৃদয়ের জন্য নিঃস্বার্থ বন্ধু
বিশ্বব্যাপী হৃদরোগের হার দ্রুত বাড়ছে। প্রতিদিন এক গ্লাস বেদানার রস হৃদপিণ্ডের সুস্থতায় অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ধমনিতে জমে থাকা চর্বি কমাতে সহায়তা করে। এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদস্পন্দনকে সঠিক রাখে।
ত্বকে আনে দীপ্তি
বেদানার রসে থাকা ভিটামিন সি, ট্যানিন ও ফলিক অ্যাসিড ত্বকের কোষ পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে। নিয়মিত সেবনে ত্বক হয় মসৃণ ও উজ্জ্বল। এমনকি এর খোসা গুঁড়ো করে গোলাপজলের সঙ্গে ব্যবহার করলে ব্রণ কমে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
দাঁত ও মাড়ির যত্নে
বেদানার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দাঁতের প্লাক কমাতে সাহায্য করে এবং মাড়ির সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। খোসা ফুটিয়ে কুলকুচি করলে মুখের দুর্গন্ধ ও দাঁতের ব্যথা কমে।
রোগ প্রতিরোধে সৈনিক
বেদানার তিনটি প্রধান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট—ট্যানিন, অ্যান্থোসায়ানিন ও এলাজিক অ্যাসিড দেহে ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে। এতে ভিটামিন ‘সি’ ও পটাশিয়াম রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।
হাড় ও পেশির সুরক্ষা
বেদানার রসে থাকা পলিফেনল ও পটাশিয়াম হাড়ের কার্টিলেজ ক্ষয় রোধ করে এবং অস্টিওআর্থারাইটিস, বাত ও পেশির ব্যথা উপশমে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
রক্তস্বল্পতায় উপকারী
বেদানায় আয়রনের পরিমাণ বেশি। এটি হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্তস্বল্পতা দূর করে। পাশাপাশি এটি হজমে সহায়তা করে, রুচি বাড়ায় এবং পেটের নানা সমস্যা উপশমে কার্যকর।
মানসিক চাপ ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
সিস্টোলিক রক্তচাপ কমাতে বেদানার রস কার্যকর। মানসিক চাপ ও টেনশন কমাতে সাহায্য করে, যা স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা
গবেষণায় প্রমাণিত, বেদানার নির্যাস প্রস্টেট ও স্তন ক্যানসারের কোষের বৃদ্ধি রোধে সহায়ক। এটি শরীরের কোষগুলোকে সুস্থ রাখে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়।
বেদানার অপকারিতা
অতিরিক্ত সেবনে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা
বেশি পরিমাণে বেদানা খেলে কারো কারো পেটে গ্যাস ও অম্বলের সমস্যা হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সতর্কতা
বেদানায় প্রাকৃতিক চিনি থাকায় এটি রক্তে গ্লুকোজ বাড়াতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
ঔষধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া
বেদানার রস কিছু ওষুধের (বিশেষত উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ওষুধ) কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলতে পারে।
অ্যালার্জির ঝুঁকি
বেদানায় কারো কারো অ্যালার্জি হতে পারে, যেমন: ত্বকে র্যাশ, চুলকানি বা নিঃশ্বাসের সমস্যা।
আপনার মতামত লিখুন :