ঢাকা রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫

খালি পেটে করলার জুস খাওয়ার উপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম
করলার জুস। ছবি- সংগৃহীত

প্রাকৃতিক উপায়ে শরীর সুস্থ রাখার উপকারিতা নিয়ে আজকাল অনেকেই আগ্রহী। এ ধারার অন্যতম জনপ্রিয় উপাদান হলো করলা বা উচ্ছে। যদিও এর স্বাদ কিছুটা তিতা, তবে করলার পুষ্টিগুণ অতুলনীয়।

বিশেষ করে খালি পেটে করলার জুস পান করলে শরীরের বিভিন্ন উপকার হয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা এবং গ্রামীণ জীবনধারায় করলার ব্যবহার হয়ে আসছে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, খালি পেটে করলার জুস খাওয়ার উপকারিতা কী কী—

১. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

করলার অন্যতম প্রধান গুণ হলো এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর। করলায় ‘চ্যারান্টিন’ এবং ‘পলিপেপ্টাইড-পি’ নামক যৌগ থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। খালি পেটে করলার জুস পান করলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে, ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা বিশেষ উপকার পেতে পারেন।

২. ওজন কমাতে সাহায্য করে

করলার জুস চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে এবং বিপাকক্রিয়া (মেটাবলিজম) বাড়ায়। এতে ক্যালরির পরিমাণ কম, কিন্তু ফাইবার বেশি—যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে। যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য করলার জুস অত্যন্ত উপকারী।

৩. লিভার পরিষ্কার রাখে

খালি পেটে করলার জুস পান করলে লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন) বের হতে সহায়তা করে। এতে লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়। নিয়মিত করলার জুস পান করলে লিভার সুস্থ থাকে।

৪. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়

করলায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং বিটা-ক্যারোটিন থাকে, যা ত্বকের কোষগুলোর ক্ষয় রোধ করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে। ব্রণ, একজিমা বা চর্মরোগের উপশমেও করলার জুস কার্যকর ভূমিকা রাখে।

৫. হজম শক্তি বাড়ায়

খালি পেটে করলার জুস খেলে হজমে সহায়তা করে এবং গ্যাস, বদহজম বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়। এতে থাকা এনজাইমসমূহ পাচনতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।

৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়

করলার জুস অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। ফলে এটি সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

৭. রক্ত পরিষ্কার করে

প্রতিদিন খালি পেটে করলার জুস পান করলে রক্তের অশুদ্ধি দূর হয়। এটি শরীরের ভেতরকার টক্সিন দূর করে, যার ফলে শরীর সতেজ এবং প্রাণবন্ত থাকে।

করলার জুসের উপকারিতা অনেক। যদিও স্বাদে তিতকুটে, কিন্তু এর পুষ্টিগুণ এবং রোগপ্রতিরোধী ক্ষমতা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে যারা ওষুধ সেবন করেন বা বিশেষ কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করলার জুস গ্রহণ করাই বাঞ্ছনীয়।

কীভাবে খাবেন করলার জুস?

১. তাজা, সবুজ ও মাঝারি আকারের করলা নির্বাচন করুন। খুব বেশি পুরোনো বা শুকনো করলা না নেওয়াই ভালো।

২. করলাগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন। লম্বালম্বি কেটে ভেতরের বীজ ও সাদা অংশ ফেলে দিন (এই অংশ তিতকুটে স্বাদের জন্য দায়ী)। ছোট ছোট টুকরো করে নিন।

৩. টুকরোগুলো ব্লেন্ডারে দিন। পরিমাণমতো পানি যোগ করে ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন। মিহি ছাঁকনিতে ছেঁকে করলার জুস তৈরি করুন।

৪. করলার তিতা স্বাদ কমাতে চাইলে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মেশাতে পারেন। এক চিমটি লবণ বা একটু আদার রসও মেশানো যায়। চাইলে ২-৩টি পুদিনা পাতা বা শসার রস মিশিয়েও পান করতে পারেন। এতে জুসটি কিছুটা মোলায়েম হয়।

সতর্কতা

গর্ভবতী মহিলা বা যারা রক্তচাপজনিত ওষুধ খান, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই জুস খাওয়া ঠিক নয়। ডায়াবেটিস রোগীরা ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রেখে খেতে হবে।