ঢাকা শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

ভ্রমণে বমি বমি ভাব হয়, মাথা ঘোরে?

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২৫, ০১:৫৭ পিএম
ভ্রমণকালীন বমির ভাব কাটিয়ে উঠবেন যেভাবে। ছবি- সংগৃহীত

অনেকেই আছেন যাদের গাড়ি, বাস, ট্রেন বা নৌকায় ভ্রমণ করলে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা কিংবা অস্বস্তি হতে শুরু করে। এই সমস্যাটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘মোশন সিকনেস’ বা গতিজনিত অসুস্থতা বলা হয়। যাত্রা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে চোখ, কান ও শরীরের ভারসাম্য রক্ষাকারী অংশগুলো মস্তিষ্কে ভিন্ন ভিন্ন সংকেত পাঠাতে শুরু করে। এই বিভ্রান্তির কারণে সৃষ্টি হয় মাথা ঘোরা, বমি কিংবা ক্লান্তির মতো উপসর্গ। তবে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা একেবারে অসম্ভব নয়। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

মোশন সিকনেসের কারণ:

চোখ ও কান থেকে ভিন্ন সংকেত: যাত্রা চলাকালীন চোখ যদি মনে করে আপনি স্থির আছেন কিন্তু আপনার অন্তঃকর্ণ বলে আপনি নড়ছেন এই দুই বিপরীত তথ্য মস্তিষ্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।

ভ্রমণের ধরন: বিশেষ করে পাহাড়ি রাস্তা, বাঁকযুক্ত পথ, জোরালো ব্রেক কিংবা উঁচু-নিচু পথে চললে এই সমস্যা বেড়ে যায়।

গন্ধ: বাস বা গাড়ির ভিতরের গন্ধ, ধূমপান কিংবা জ্বালানি তেলের গন্ধও মোশন সিকনেসের কারণ হতে পারে।

দৃষ্টিনন্দন পরিবর্তন: দ্রুত পাল্টে যাওয়া দৃশ্যপট অনেক সময় চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে।

ভ্রমণজনিত অসুস্থতার লক্ষণ: বমি বমি ভাব বা বমি, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, ঠান্ডা ঘাম, ক্লান্তি ও দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস। হঠাৎ বিষণ্নতা বা অস্বস্তি অনুভব

এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার উপায়:

সিট বেছে নেওয়ার কৌশল: যদি সম্ভব হয় তবে বাস বা গাড়ির সামনের সিটে বসুন। সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলে মোশন সিকনেস কম হয়। ট্রেনে জানালার পাশে এবং জাহাজে মাঝখানের দিকে থাকা ভালো।

চোখ বন্ধ রাখা ও বিশ্রাম: ভ্রমণকালে চোখ বন্ধ রেখে মাথা পিছনে হেলিয়ে বিশ্রাম নিন। এতে চোখ ও কানের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় থাকে।

গন্তব্যের দিকে তাকানো: গাড়ির ভিতরের জিনিসপত্রের দিকে না তাকিয়ে বাইরে রাস্তার দৃশ্যপটে মন দিন।

হালকা খাবার: ভ্রমণের আগে পেট ভরে খাওয়া বা খালি পেটে থাকা, উভয়ই সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই হালকা, সহজপাচ্য খাবার খান এবং অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। দুধ, দই বা তেলচর্বিযুক্ত খাবারও এড়ানো উচিত।

আদা ব্যবহার: আদা প্রাকৃতিকভাবে বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে। ভ্রমণের আগে এক টুকরো আদা চিবিয়ে খেতে পারেন বা আদা চা পান করতে পারেন।

মিন্ট বা লেমন চুষন: লেবু বা মিন্ট ফ্লেভারের চুষন জাতীয় ক্যান্ডি কিংবা লজেন্স বমি ভাব কমাতে পারে।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন: ভ্রমণের সময় হাইড্রেট থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানিশূন্যতার কারণে মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাব বাড়তে পারে। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং শরীরকে তরতাজা রাখুন।

মোবাইল ফোন বা বই পড়া এড়িয়ে চলুন: যাত্রাপথে মোবাইল বা বই পড়লে চোখের ফোকাসে সমস্যা হয় এবং মোশন সিকনেস বাড়তে পারে।

পর্যাপ্ত বাতাস: গাড়ির জানালা খুলে রাখুন বা এসি ব্যবহার করুন যেন ফ্রেশ বাতাস পেতে পারেন।

অ্যান্টি-মোশন সিকনেস ওষুধ: যাদের মোশন সিকনেস খুব বেশি হয়, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টি-মোশন সিকনেস ওষুধ নিতে পারেন। তবে এই ওষুধগুলো ভ্রমণের আগে খেতে হবে এবং এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকতে পারে।

বিশ্রাম নিন: ভ্রমণের মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়া এবং গাড়ি থেকে নেমে কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করলে মোশন সিকনেসের সমস্যা কমে আসতে পারে। দীর্ঘ ভ্রমণে এ ধরনের বিরতি নেওয়া খুবই উপকারী।

শিশুদের ক্ষেত্রে করণীয়:

শিশুদের মোশন সিকনেস বেশি হয়। তাদের জন্য:

  • মাথা ঠান্ডা রাখুন
  • বেশি কথা বলতে নিরুৎসাহিত করুন
  • জানালার বাইরে মনোযোগী করতে পারেন
  • খেলাধুলা বা গল্প বলার মাধ্যমে মনোযোগ অন্যদিকে সরান

ঘরোয়া টিপস:

  • ছোট টুকরো শুকনো আদা মুখে রাখুন
  • তুলসি পাতার রস পান করতে পারেন
  • এক চা চামচ মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন
  • পুদিনা পাতার রসও বমিভাব কমায়
  • কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন?
  • প্রতিবার ভ্রমণে গুরুতর বমি হলে
  • ওষুধেও উপসর্গ না কমলে
  • জ্বর বা ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ দেখা দিলে
  • শিশু বেশি দুর্বল হয়ে পড়লে

ভ্রমণের সময় বমি বা মাথা ঘোরার সমস্যা অনেকের জন্য ভয়াবহ হয়ে ওঠে। কিন্তু সঠিক প্রস্তুতি, সিট নির্বাচন, হালকা খাদ্যাভ্যাস এবং কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনি সহজেই এই সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। সুস্থ থেকে উপভোগ করুন আপনার ভ্রমণ।