শীত এলেই মনে হয়, খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে গেছে। সাধারণ সময়ে ক্ষুধা মেটাতে মানুষ ঠিক যতটুকু খায়, তাতে তৃপ্তি পাওয়া যায়। কিন্তু শীতকালে তা সম্ভব হয় না। পেট ভরে খাবার খাওয়ার পরও মনে হয় আরও খেতে হবে। গরম চা, স্যুপ, খিচুড়ি, পিঠা বা ভাজা–পোড়া খাবার—সবকিছুই যেন আরও লোভনীয়।
শীতকালে ঘন ঘন খিদে লাগার এই অভিজ্ঞতা অনেকেরই পরিচিত। কেউ হয়তো বলবেন, ‘শীত মানেই খিদে।’ কিন্তু এর পেছনে শুধু খাবারের স্বাদ নয়, রয়েছে বৈজ্ঞানিক ও শারীরিক নানা কারণ। চলুন জেনে নিই শীতকালে কেন ক্ষুধা বেড়ে যায়।
১. শরীরকে উষ্ণ রাখতে বাড়তি ক্যালরি প্রয়োজন
শীতকালে বাইরের তাপমাত্রা কমে গেলে শরীর নিজের স্বাভাবিক উষ্ণতা (৩৭°C) ধরে রাখতে বেশি শক্তি খরচ করে। এই অতিরিক্ত শক্তি পূরণ করতে শরীর খাবারের জন্য সঙ্কেত দেয়। ফলে ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা স্বাভাবিক বিষয়।

২. সূর্যালোক কমে হরমোনের ভারসাম্য বদলায়
দিন ছোট হয়ে যাওয়ায় এবং রোদ কম পাওয়ায় শরীরে “সেরোটোনিন” হরমোনের মাত্রা কমে। সেরোটোনিন আমাদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ক্ষুধা কমাতে ভূমিকা রাখে। কম হরমোন মানে কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়া—যেমন ভাত, রুটি, পাস্তা, নুডলস বা মিষ্টি।
৩. কমফোর্ট ফুডে বাড়ে আকর্ষণ
ঠান্ডা আবহাওয়া আমাদের মানসিক ও শারীরিক উষ্ণতা খুঁজতে বাধ্য করে। গরম চা, স্যুপ, খিচুড়ি বা ভাজা–পোড়া খাবার ‘ডোপামিন’ হরমোন বাড়িয়ে আনন্দ দেয়। ফলে আমরা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেতে থাকি।
৪. কম নড়াচড়া, বেশি খাওয়া
শীতকালে ঘরে বেশি সময় কাটায় মানুষ। হাঁটা বা ব্যায়ামের পরিমাণ কমে যায়। কম শারীরিক কার্যক্রম মানে কম ক্যালরি খরচ। তাই সময় কাটানো বা উষ্ণতা বজায় রাখতে খাবারের পরিমাণ বেড়ে যায়।

৫. পানি কম পান, ক্ষুধার ভুল বোঝা
শীতকালে পিপাসা কম অনুভূত হয়, তাই অনেকেই কম পানি পান করেন। কিন্তু ডিহাইড্রেশন অনেক সময় ক্ষুধার মতো অনুভূতি তৈরি করে। ফলে মানুষ খাবার বেশি খেতে শুরু করে।
৬. শীতকালীন অবসাদ (‘উইন্টার ব্লুজ’)
রোদ কম থাকায় ভিটামিন-ডি শোষণ কমে এবং মানসিক প্রভাব পড়ে। এই শীতকালীন অবসাদ অনেক সময় বারবার ক্ষুধার অনুভূতি জন্মায়।
শীতে বেশি খিদে লাগা একেবারেই স্বাভাবিক। শরীরের উষ্ণতা বজায় রাখা, হরমোন পরিবর্তন, মানসিক প্রভাব এবং আচরণগত অভ্যাস—সব মিলিয়ে এই প্রবণতা তৈরি হয়। তাই শীতের সময় ক্ষুধা লাগলে সতর্কভাবে পুষ্টিকর ও ব্যালান্সড খাবার খাওয়া সবচেয়ে ভালো উপায়।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন