প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আগামী চার-পাঁচ দিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য একটি ‘ক্রুশিয়াল’ (খুব গুরুত্বপূর্ণ) সময়। এই কয়েক দিনে বোঝা যাবে, সামনে কোথায় যাচ্ছে দেশ। কিন্তু একটি বিষয় নিশ্চিত, নির্বাচন দেরি হবে না। তিনি বলেন, আগামী পাঁচ-ছয়টা দিনে বুঝব যে আমরা সামনে কোথায় যাচ্ছি। কিন্তু একটি বিষয় আপনি নিশ্চিত থাকেন, নির্বাচন দেরি হবে না। নির্বাচন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যে সময়ে বলেছেন, তার থেকে একটা দিনও দেরি হবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আরও বক্তব্য দেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামূল কবীর, বিএসআরএফের সভাপতি মাসউদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদল।
নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রেস সচিব আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রথমে বলেছিলেন, নির্বাচন এপ্রিলের প্রথমার্ধে হবে। পরবর্তী সময়ে লন্ডনে বলা হয়েছে, যদি অনেকগুলো সংস্কার হয় এবং বিচারের কাজগুলো এগিয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে এটা ফেব্রুয়ারিতে হবে। তারা সেই জায়গায় এখনো আছেন। এটি এক দিন দেরি হবে না, যা-ই হোক না কেন। সনদ বা ঘোষণাপত্র যা-ই হোক না কেন যেটা, যেভাবেই সনদ গ্রহণ করা হোক না কেন। নির্বাচন তার সময়মতো হয়ে যাবে। এ বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূসের দৃঢ় অবস্থান, পুরো উপদেষ্টা পরিষদেরই এখানে দৃঢ় অবস্থান। উপদেষ্টারা তাদের পুরোনো কাজে ফিরে যেতে চাচ্ছেন। খুবই উৎসবমুখর পরিবেশে ভালো নির্বাচন হবে বলে আশা প্রকাশ করে প্রেস সচিব বলেন, প্রতি নির্বাচনে কিছু না কিছু সহিংসতা হয়, তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে সহিংসতাকে একেবারে জিরোতে নামিয়ে আনা।
অন্তর্বর্তী সরকার সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার নীতিতে আছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আমাদের ফরেন পলিসি (পররাষ্ট্রনীতি) একটা দেশের কাছে বন্ধক দেওয়া হয়েছিল। এখন ফরেন পলিসি ইনডিপেনডেন্ট। আমরা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখছি। সেটা ভারত হোক, চীন হোক, ইউএস হোকÑ সবার সঙ্গে আমরা একটা সুসম্পর্ক রাখছি। আমি চাই আমার সঙ্গে সম্পর্ক হোক মর্যাদার ও ন্যায্যতার এবং সেই জায়গায় আমরা গিয়েছি।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কোনো কিছুই বাধা হবে না। বাংলাদেশের জনগণের যদি অংশগ্রহণ থাকে, কোনো কিছুই বাধা না। আগে তো জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়নি। যখন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হয়, তখন মানুষই প্রটেক্টিভলি কাজ করে।
তিনি বলেন, ভালো নির্বাচনে একটা উৎসবের আমেজ হয়। কারণ আপনি যান, আমিও যাই। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে যাচ্ছি, উনি ওনার বৃদ্ধা মা-বাবাকে নিয়ে যাচ্ছেন। সবার অংশগ্রহণ থাকলে নির্বাচন সুন্দর হবে। আমরা আশা করি, এ নির্বাচনটা খুবই উৎসবমুখর পরিবেশে, ভালো নির্বাচন হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতি নির্বাচনে আমাদের কিছু না কিছু সহিংসতা হয়। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে সহিংসতা শূন্যতে নামিয়ে আনা। সেটার জন্য আমরা কয়েক দফা মিটিং করেছি। আমরা গত মিটিয়ে বলেছি, দেড় লাখ পুলিশ সদস্য নির্বাচনি দায়িত্বে থাকবেন এবং তাদের ট্রেনিং শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনীর কথা বলেছি। আশা করা যায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন হবে।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে শফিকুল আলম বলেন, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করা কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। গত ১২ মাসে বর্তমান সরকার এখানে অনেক শ্রম দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি, আপনারা দেখেছেন এখন অনেকেই নিরপেক্ষ। আমরা আশা করি, আওয়ামী লীগের অপশাসন থেকে আমাদের সমাজের সবাই এখান থেকে শিক্ষা নেবেন। সাংবাদিকদের জন্যও একটা বড় শিক্ষা।
তিনি বলেন, আমি আসলে একটা পার্টির সঙ্গে নিজেকে কতখানি জড়িয়ে ফেলব। আপনি একটা রাজনৈতিক দলকে সাপোর্ট করতেই পারেন। কিন্তু ওটা করতে গিয়ে যদি আপনি হত্যাযজ্ঞকে বৈধতা দেন, নির্বাচনহীনকে বৈধতা দেন, তখন তো আর আপনার নিরপেক্ষতা থাকে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রত্যেকটা সেক্টরে দোসর ছিল। হাসিনার মতো একটা মনস্টার তৈরি হয়েছে এদের দ্বারা। আপা আপা বলতে বলতে তো ফেনা ফেলত। ভবিষ্যতে আবার রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসবে, আমি আমাকে কতটুকু সংযত করব, সেটার শিক্ষা নিতে হবে। একটা দলকে আপনি সাপোর্ট করতেই পারেন, তাই বলে তার হত্যাযজ্ঞকে, ব্যাংক লুটকে বৈধতা দেবেনÑ এ কাজগুলো সে সময় হয়েছে। এটা থেকে যদি আমরা সবাই শিক্ষা নেই, তাহলে আমাদের দেশে আরেকটা মনস্টার তৈরি হবে না।
চাঁদাবাজি নিয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে কিন্তু হাই প্রোফাইলের চাঁদাবাজ গ্রেপ্তার হয়েছে। চাঁদাবাজির বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি। সরকার যথেষ্ট কাজ করেছেন, পুলিশ প্রশাসনকে বলে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলে আপনাদের কাছে প্রমাণ থাকলে দেবেন আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব। জনশক্তি রপ্তানির ও ভিসা জটিলতার ক্ষেত্রে এই সরকার কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে কত লোক প্রতি মাসে বিদেশ যাচ্ছে সেই ডেটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আছে। আমরা সে তথ্য লুকাচ্ছি না। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতি মাসে ডেটা দেয়, সেখানে কোনো মাসে বাড়ে, কোনো মাসে কমে, সেটা আপনারা দেখেছেন।
তিনি আরও বলেন, এ সরকারের বড় সাফল্য হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে জনশক্তি নেওয়া বন্ধ ছিল ও ভিসা দেওয়া বন্ধ ছিল, সে জায়গায় জট ছাড়াচ্ছি। মালয়েশিয়া ও জাপান নিয়ে কাজ করছি। এক লাখ লোক জাপান নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিটি জায়গায় আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি। কোরিয়ায়ও আমাদের কাজ হচ্ছে, আমাদের চেষ্টার কোনো অন্ত নেই। ভিসা জটিলতা নিয়ে প্রেস সচিব বলেন, এটা আগের সরকারের আমল থেকেই শুরু হয়েছে। ইউএই ভিসা বন্ধ হয়েছে কিন্তু আমাদের আমলে না, ২০১২-১৩ সাল থেকেই বন্ধ ছিল। আমরা চেষ্টা করছি সামনেও অব্যাহত থাকবে। আস্তে আস্তে যে ঝামেলাগুলো হচ্ছে সেটা কেটে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে শফিকুল আলম বলেন, ২৫টি বিমানতো একদিনে কেনা হচ্ছে না, সময়টা দেখেন অনেক বছর ধরে কেনা হবে। ততদিনে আমাদের এয়ার ট্রাফিকের উন্নয়ন হবে। প্রতি বছরই তো উন্নয়ন হচ্ছে। কোনো কোনো বছর তো ডাবল ডিজিটের ইনক্রিজ হয়। আমরা বোয়িং কেন নিচ্ছি, আমাদের পাইলটদের প্রশিক্ষণ হয় বোয়িংয়ে। পৃথিবীতে দুইটা এয়ারলাইনস আছেÑ কেউ এয়ারবাসকে নিচ্ছে, কেউ বোয়িংকে নিচ্ছে। আমরাও নিচ্ছি, ইন্দোনেশিয়াও নিচ্ছে। এখন নেওয়ার মানে হচ্ছে- আমরা যাতে ঠিকমতো সাপ্লাই পাই। প্রথম সাপ্লাই কবে আসে সেটা দেখে নিয়েন। এটা যদি কালকে আনা হতো তাহলে বলতে পারতেন কোথায় রাখব। কিন্তু আমাদের প্রতি মাসে একটা গ্রো আছে।