বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসানাত লোকমান

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৬, ২০২৪, ১১:৩২ এএম

বিজয়ের মহাকাব্য: মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নতুন পাঠ

হাসানাত লোকমান

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৬, ২০২৪, ১১:৩২ এএম

বিজয়ের মহাকাব্য: মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নতুন পাঠ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রারম্ভিকা : ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১—কেবল তারিখ নয়। বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস। বিশ্ব ইতিহাসেও স্বাধীনতার অনন্য প্রতীক হিসেবে তারিখটি প্রতিষ্ঠিত।

এই দিনটি বাঙালি জাতির দীর্ঘ সংগ্রামের বিজয়গাথা এবং মুক্তির প্রতীক। তবে, বিজয় দিবস উদযাপন কি শুধুই স্মৃতিচারণ, না কি এর গভীরে লুকিয়ে থাকা চেতনার এক নতুন ব্যাখ্যার প্রয়োজন? প্রয়োজন আছে বৈকি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নতুনভাবে বিশ্লেষণ করবো এবং বিজয়ের অর্থকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রাসঙ্গিক করে তুলবো অবশ্যই।

১. বিজয়ের মানে

ইতিহাসের পুনর্মূল্যায়ন করলে বলতেই হয়- বিজয় দিবসের মূল প্রতীক হচ্ছে একটি স্বাধীন জাতি। তবে এই বিজয়ের মূল চেতনা কী কেবল ভূখণ্ডের দখল পুনরুদ্ধার, নাকি একটি স্বতন্ত্র জাতীয় সত্তার প্রতিষ্ঠা? আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কোনো সামরিক বিজয় নয়, এটি ছিল ভাষা, সংস্কৃতি, এবং ভৌগলিক সীমারেখার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সামগ্রিক সামাজিক আন্দোলন।

তবু প্রশ্ন থাকে—আমরা কি এই চেতনাকে সঠিকভাবে রক্ষা করতে পেরেছি? রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, বৈষম্য, এবং ক্ষমতার অপব্যবহার কি আমাদের বিজয়ের মূল আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে না? করছে অবশ্যই। তার জন্যেই বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার প্রয়োজন। সর্বাগ্রে প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কার। কেনো না রাজনীতি নষ্ট হলে সমাজের সবই নষ্ট হয় এবং হয়েছেও। সুতরাং রাজনৈতিক সংস্কার সাধিত হলে যে বাংলাদেশ আমরা পাবো, তা অবশ্যই হবে আমজনতার নতুন বাংলাদেশ।

২. মুক্তিযুদ্ধ: মানবিক বিপ্লবের প্রতীক

মুক্তিযুদ্ধের মূল শক্তি ছিল মানুষ। এই যুদ্ধে কৃষক, শ্রমিক, নারী, ছাত্র- এক কথায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে গড়ে উঠেছিল এক মানবিক বিপ্লব। এটি ছিল নিপীড়কের বিরুদ্ধে, দুঃশাসন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সামগ্রিক মানবিক প্রতিরোধ।
আজকের প্রেক্ষাপটে, আমরা কি মুক্তিযুদ্ধের এই মানবিক চেতনাকে সমাজে বাস্তবায়িত করতে পেরেছি? পুঁজিবাদ, সামাজিক বৈষম্য, এবং নারীর প্রতি সহিংসতা কি সেই মানবিক বিপ্লবের আত্মাকে ক্ষুণ্ণ করছে না ? অবশ্যই করছে। বারবার আমরা স্বাধীন দেশে দুঃশাসনের খড়গ তলে রক্তাক্ত হয়েছি।

৩. বিজয়ের অর্থনীতি: ভৌগলিক মুক্তির পরিমণ্ডল

স্বাধীনতার পরে অর্থনৈতিক মুক্তি ছিলো আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। ‍‍`ক্ষুধাতুর শিশু স্বরাজ চায় না, রুটি চায়।‍‍` আমরা স্বরাজ পেয়েছি, স্বাধীনতা পেয়েছি। তবে বিজয়ের এত বছর পরেও আমরা দারিদ্র্য, বেকারত্ব, এবং বৈষম্যের মতো চ্যালেঞ্জ থেকে মুক্ত হতে পারিনি।

একটি সত্যিকারের স্বাধীন রাষ্ট্র কি কেবল ভূখণ্ডেই সীমাবদ্ধ, নাকি এটি প্রতিটি নাগরিকের অর্থনৈতিক মুক্তির নিশ্চয়তা দেয়? আজকের প্রেক্ষাপটে, বিজয়ের চেতনাকে আমরা যদি অর্থনৈতিক সমতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন না করি, তাহলে স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ হারিয়ে যাবে। বিগত সরকারগুলোর লুটপাট, সীমাহীন দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। আমরা আশা করি আজকের দেশের অন্তর্বতী সরকার পেছনের তাবৎ কালিমা থেকে জাতিকে নিয়ে আসবে অর্থনৈতিক মুক্তির সোপান তলে।

৪. নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিকোণ: মুক্তিযুদ্ধের আধুনিক চেতনা

আজকের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কতটুকু জানে? ডিজিটাল যুগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি শুধু ইতিহাসের পাঠ হয়ে থাকবে, নাকি তা নতুন চিন্তা ও কর্মে উদ্ভাসিত হবে?

আমাদের উচিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও গল্পগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তরুণদের কাছে তুলে ধরা—ডিজিটাল আর্কাইভ, চলচ্চিত্র, এবং অন্যান্য শিল্প মাধ্যমের ভেতর দিয়ে তরুণদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে  সচেতন করে তোলা। বিজয়ের গল্প শুধু পাঠ নয়, এটি হওয়া উচিত ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রেরণা, শক্তি ও সাহসের উৎসস্থল।

৫. বিজয়ের চেতনার নতুন পাঠ: একটি মানবিক দৃষ্টিকোণ

১৬ ডিসেম্বর উদযাপন মানে কেবল স্মৃতিচারণ নয়, বরং এটি আমাদের দায়িত্বকে পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ। বিজয়ের মূল চেতনা মানবিকতা, গণতন্ত্র,  সাম্য, এবং স্বাধীনতাকে ধরে রাখা।

তবে আজকের দিনে এই চেতনার নতুন অর্থ হতে পারে—পরিবেশ রক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, এবং প্রযুক্তিনির্ভর, বৈষম্যহীন একটি সমতাপূর্ণ সুষম সমাজ গঠন। বিজয় দিবস কেবল অতীতের জয় নয়; সমৃদ্ধিময় ভবিষ্যতের স্বপ্নকেও ধারণ করে।

সারকথা :

১৬ ডিসেম্বর শুধু একটি তারিখ নয়; এটি একটি চেতনার প্রতীক। তবে এই চেতনাকে সজীব রাখতে আমাদের প্রয়োজন এর আধুনিক ব্যাখ্যা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের শিখিয়েছে অন্যায়, বৈষম্য, এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। শিখিয়েছে শ্রেণি বিভাজন নির্মূলে উচ্চকিত অঙ্গীকার।

বিজয় দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত—স্বাধীনতার চেতনায় সর্ব স্তরের অন্ধকারে নতুন আলো ফেলবো। তিমির হননের ভেতর দিয়ে সাধারণের জীবন বোধকে প্রদীপ্ত করবো। মনে রাখতে হবে বিজয় শুধু স্মৃতি নয়, একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা আমাদের ভবিষ্যতকে গড়ে তুলবে। "বিজয়ের মহাকাব্য"— আমাদের জন্য একটি শুরু, যার শেষ নেই।

আরবি/এফআই

Link copied!