সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৫, ০৬:০২ পিএম

সামুদ্রিক নারকেল ও শতবর্ষী কচ্ছপের স্বর্গরাজ্য সেশেল

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৫, ০৬:০২ পিএম

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

দ্বীপরাষ্ট্র সেশেল ভারত মহাসাগরের একটি সবুজ পাহাড়বেষ্টিত ছোট দেশ। ১১৫টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত এ দেশের জনসংখ্যা মাত্র এক লাখ পাঁচ হাজার। এর বৃহত্তম দ্বীপ মাহেতে রাজধানী ভিক্টোরিয়া অবস্থিত। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে মাদাগাস্কার, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালদ্বীপ, মরিশাস এবং তুলনামূলক বেশি দূরত্বে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। দ্বীপরাষ্ট্রটি নিয়ে হৃদয়ের অনুভূতি শেয়ার করেছেন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের (আয়েবা) মহাসচিব ও প্রবাসী কমিউনিটির শীর্ষ ব্যক্তিত্ব কাজী এনায়েত উল্লাহ।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে সেশেল সম্পর্কে তিনি লেখেন, দেশটির জনসংখ্যা মূলত আফ্রিকান, ভারতীয় ও প্রায় ১০ শতাংশ ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত। ১৫০৩ সালে পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা তার দ্বিতীয় ভারত অভিযানের সময় দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করেন। যদিও তিনি বেশিদিন সেখানে অবস্থান করেননি।

১৬০৯ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ঘাঁটি স্থাপন করে। তবে ১৭৩৫ থেকে ১৭৯৪ সাল পর্যন্ত দেশটিতে ফরাসিদের আধিপত্য বিস্তার ঘটে। এ সময় আফ্রিকান ক্রীতদাসদের আনা হয় এবং তাদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দ্বীপগুলোকে বসবাসযোগ্য করা হয়। পরবর্তীতে ১৭৯৪ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত দেশটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল।

ঔপনিবেশিক শাসনের নানা চিহ্ন দেশটিতে এখনও বিদ্যমান। ইতিহাসে জানা যায়, প্রথম আনা ক্রীতদাসদের মধ্যে ছিলেন ২৬ জন পুরুষ ও একজন নারী। কথিত আছে, ওই নারীই বহু সন্তানের জন্ম দিয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সূচনা করেছিলেন। তাকে ‘সেশেলের মাতা’ হিসেবে সম্মান জানানো হয়। তার সন্তানদের শিক্ষার জন্য একটি এককক্ষবিশিষ্ট শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হয়েছিল, যেখানে ২১ জন ছাত্র পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিল।

বর্তমানে দেশটির প্রধান দ্বীপ হলো ভিক্টোরিয়া, প্রালা এবং লা ডিগ। এ দ্বীপগুলোতেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেশি। পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় সমুদ্রসৈকতের মধ্যে প্রালার ‘অঁজ লাজিও’ এবং লা ডিগের ‘অঁজ সুর্স দারজঁ’ উল্লেখযোগ্য। এ সৈকতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, চারপাশে ছড়িয়ে থাকা বিশাল শিলাখণ্ড।

দ্বীপগুলো পাহাড় ও সবুজ বনাঞ্চলে ঘেরা। সূর্যের আলোয় মেঘের খেলা পাহাড়ে বিচ্ছুরিত হলে প্রকৃতির সৌন্দর্য মন ভরিয়ে তোলে। দেশটিতে প্রচুর ট্রপিক্যাল ফল জন্মে, যা বাংলাদেশের কথা মনে করিয়ে দেয়।

সেশেলের দুটি বিশেষ দিক হলো সামুদ্রিক নারকেল ও শতবর্ষী কচ্ছপ। ‘সামুদ্রিক নারকেল’ নামে পরিচিত বৃহদাকার নারকেল দেখতে অনেকটা মানুষের নিতম্বের মতো। এ গাছ দুটি ভিন্ন প্রজাতির হয় পুরুষ ও মহিলা। এ ফল দেশটির জাতীয় প্রতীক এবং বিশেষ অনুমতি ছাড়া বাইরে নেওয়া নিষিদ্ধ। অন্যদিকে, এখানকার সামুদ্রিক কচ্ছপের আয়ুষ্কাল ১৫০ থেকে ২০০ বছর।

এ বছর দেশটিতে মরিশাস ম্যারাথন, বাস্তিল ডে, আফ্রিকান ফুড ফেয়ার, মিলাদুন্নবী, ইহুদি নববর্ষ রোশ হাসানাসহ নানা অনুষ্ঠান উদযাপিত হচ্ছে। এগুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করতেই আয়োজন করা হয়।

ফরাসি ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রভাব প্রবল হওয়ায় ‘ক্রেয়ল’ দেশটির জাতীয় ভাষা। পাশাপাশি ইংরেজি ও ফরাসিও বহুল প্রচলিত। ভ্রমণকারীদের মধ্যে ফরাসি ও জার্মান নাগরিক সংখ্যায় বেশি, এরপর রাশিয়ান ও ইতালীয় এবং তৃতীয় স্থানে ব্রিটিশরা।

খ্রিস্টান অধ্যুষিত দেশ হলেও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা রয়েছে। রাজধানী মাহেতে চার্চ, মন্দির ও একমাত্র মসজিদ বিদ্যমান। ১৯৭৬ সালে দেশটি ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার এক বছর পর সামরিক ক্যু হলেও বর্তমানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী প্রচারণা শান্তিপূর্ণভাবেই চলছে।

অর্থনৈতিকভাবে সেশেল লিবারেল নীতির কারণে বহু বিদেশি অফশোর কোম্পানি এখানে হেডকোয়ার্টার স্থাপন করেছে। আরব আমিরাতের সুলতান বিন নাহিয়ান উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছেন। পুলিশ বাহিনীর সদস্যসংখ্যা মাত্র ৫০০ হলেও আইনশৃঙ্খলা বজায় রয়েছে।

দেশটির জনসংখ্যা এক লাখ হলেও গাড়ির সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। রাস্তাঘাটে শৃঙ্খলা বজায় রেখে গাড়ি চালানো হয়, হর্নের শব্দও শোনা যায় না। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবায় সরকার বিশেষভাবে সচেতন। তবে এখানকার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যয়বহুল হওয়ায় মূলত ধনী পর্যটকরাই ভ্রমণ করেন।

তরুণ সমাজের মধ্যে মাদকাসক্তির প্রবণতা এবং ক্যাসিনো ব্যবসার প্রভাব সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করছে।

বাংলাদেশিদের উপস্থিতিও এখানে উল্লেখযোগ্য। প্রায় ছয় হাজার বাংলাদেশি বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন। বেতন ৭০০ থেকে ১২০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত। অধিকাংশ শ্রমিক একা থাকলেও কয়েকজন পরিবার নিয়েও বসবাস করছেন। এছাড়া ১৯৯০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মেহেরপুরের মাজহারুল ইসলাম চাকরির মাধ্যমে এখানে আসেন। তিনি এলাকার বহু মানুষকে সেশেলে কাজে আসতে সহায়তা করেছিলেন।

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কলম্বো হয়ে সেশেলে যাওয়া যায়। টিকিট ভাড়া একমুখী প্রায় ৬৫ হাজার এবং আসা-যাওয়া ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মতো। তবে মরিশাসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সেশেলের দায়িত্ব পালন করায় বছরে মাত্র একবার কনস্যুলার সেবা দেওয়া হয়, যা স্থানীয় বাংলাদেশিদের কাছে পর্যাপ্ত নয়।

বাংলাদেশিদের মতে, আরব দেশের তুলনায় এখানে বেতন ও সুবিধা ভালো। তবে কঠোর পরিশ্রম ও সময়ের অভাবে কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক সংগঠন গড়ে ওঠেনি। অনেকেই ইউরোপ বা উন্নত দেশে যাওয়াকেই জীবনের সাফল্য মনে করেন।

Link copied!