পবিত্র কোরআন মানবজীবনের পূর্ণ দিকনির্দেশনা। জীবন যেমন একটি বাস্তবতা, মৃত্যু তেমনি একটি অবশ্যম্ভাবী নিয়তি। মহান আল্লাহ কোরআনের বহু আয়াতে মৃত্যুর অবধারিততা, তা পরবর্তী বিচার ও পুনরুত্থানের বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন।
“আল্লাহই তোমাদের জীবন দান করেছেন, তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং আবার তোমাদের পুনরুত্থিত করবেন। তবুও মানুষ অত্যন্ত অকৃতজ্ঞ।” (সূরা হজ: ৬৬)
“নিশ্চয়ই কখন কেয়ামত হবে, তা শুধু আল্লাহই জানেন। তিনি মেঘ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, জানেন গর্ভের ভেতরে কী আছে। কেউই জানে না আগামীকাল তার জন্য কী অপেক্ষা করছে, এবং কেউ জানে না কোথায় তার মৃত্যু হবে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ, সব বিষয়ে সুপরিজ্ঞাত।” (সূরা লোকমান: ৩৪)
“দূরাচারীরা কি মনে করে, বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীলদের মতো তাদের জীবন ও মৃত্যু হবে? কতই না ভ্রান্ত ধারণা!” (সূরা জাসিয়া: ২১)
“কারো মৃত্যু আল্লাহর অনুমতি ছাড়া হতে পারে না। এটি একটি নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ঘটে। কেউ দুনিয়াবি পুরস্কারের জন্য কাজ করলে তা দান করা হবে, আর কেউ পরকালের জন্য কাজ করলে সে তার পুরস্কার সেখানে পাবে।” (সূরা আলে ইমরান: ১৪৫)
“তোমরা স্বাভাবিকভাবে মৃত্যু বরণ করো বা নিহত হও—সবাই আল্লাহর কাছেই সমবেত হবে।” (সূরা আলে ইমরান: ১৫৮)
“প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। বিচার দিবসে তোমাদের পূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে। যারা জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাবে ও জান্নাতে প্রবেশ করবে—তাই সফল। আর পার্থিব জীবন তো প্রতারণাপূর্ণ ভোগ ছাড়া কিছুই নয়।” (সূরা আলে ইমরান: ১৮৫)
“হে নবী! তোমার পূর্বেও আমি কাউকে অমরত্ব দান করিনি। তোমার মৃত্যু হলে কি ওরা চিরকাল বেঁচে থাকবে?” (সূরা আম্বিয়া: ৩৪)
“প্রত্যেক প্রাণই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আমি তোমাদের ভালো ও মন্দ দিয়ে পরীক্ষা করি। এবং শেষ পর্যন্ত আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন।” (সূরা আম্বিয়া: ৩৫)
“আল্লাহ মৃত্যু আসলে ও নিদ্রাকালে আত্মা তুলে নেন। যার মৃত্যু নির্ধারিত তিনি তার আত্মা রেখে দেন, আর বাকিদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ফিরিয়ে দেন। জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন।” (সূরা জুমার: ৪২)
“তোমরা যে মৃত্যুর থেকে পালিয়ে বেড়াও, তা একদিন অবশ্যই তোমাদের কাছে এসে যাবে। অতঃপর তোমরা উপস্থিত হবে অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞানসম্পন্ন আল্লাহর সম্মুখে, এবং তখন তিনি তোমাদের আমল সম্পর্কে তোমাদের জানিয়ে দেবেন।” (সূরা জুমআ: ৮)
“যারা সারাজীবন অন্যায় করে মৃত্যুশয্যায় এসে বলে—‘আমি এখন তওবা করলাম’, তাদের তওবা গৃহীত হবে না। আর যারা কুফর অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে, তাদের জন্যও নেই কোনো তওবার সুযোগ।” (সূরা নিসা: ১৮)
“যারা মুক্তমনে সত্য গ্রহণ করে, তারাই আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দেয়। বিচার দিবসে আল্লাহ মৃতদের জীবিত করবেন, অতঃপর তারা তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তন করবে।” (সূরা আনজাম: ৩৬)
“তিনিই নিষ্প্রাণ থেকে প্রাণ সৃষ্টি করেন, আবার প্রাণ থেকে করেন নিষ্প্রাণ। মৃত জমিনকে তিনিই জীবন্ত করে তোলেন। এভাবেই তোমাদেরও পুনরুত্থিত করা হবে।” (সূরা রুম: ১৯)
মৃত্যু কোনো শেষ নয়, বরং পরকালের জীবনের শুরু। এটি একটি রূপান্তর—জীবনের নতুন অধ্যায়, যেখানে কর্মফলের বিচারের ভিত্তিতে চিরস্থায়ী পরিণতি নির্ধারিত হবে। পবিত্র কোরআনের এই আয়াতগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী আর প্রস্তুতির স্থান। তাই মৃত্যু স্মরণে রাখা এবং সে অনুযায়ী জীবন গঠন করাই প্রকৃত জ্ঞানের পরিচয়।
আপনার মতামত লিখুন :