বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাহীন করিম

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪, ১২:১১ এএম

গলার কাঁটা শেখ হাসিনা!

শাহীন করিম

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪, ১২:১১ এএম

গলার কাঁটা শেখ হাসিনা!

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রক্তাক্ত ‘বিপ্লবের’ মুখে পদত্যাগ করে সাড়ে চার মাস আগে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাজারো ছাত্র-জনতাকে গণহত্যার অভিযোগে তার বিচারের প্রস্তুতি চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে ক্রমেই দিল্লির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে ঢাকা।

ইতোমধ্যে গত রোববার ভারত সরকারের কাছে একটি নোট ভারবাল (কূটনৈতিক বার্তা) পাঠিয়ে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে তাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিশও এ সপ্তাহে জারি হচ্ছে বলে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশের সম্পর্কে অনেকটা গলার কাঁটা হয়ে আছেন শেখ হাসিনা। এদিকে পুরোনো বন্ধু হাসিনা ও তার পরিবারের সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। অন্যদিকে পরিবর্তিত বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। এ অবস্থায় দেশটি উভয় কূল রক্ষার কোনো পন্থা বের করতে পারে। তবে এই ইস্যুতে ভারত যে চাপে পড়ছে সেটা অনেকটা নিশ্চিত বলে ধারণা করা যায়।

এদিকে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ঢাকার চিঠিতে কতটা সাড়া দেবে দিল্লি? শুধু বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে দিল্লি ফেরত নাও দিতে পারে আগেই আভাস দিচ্ছেন কূটনীতিকরা। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার স্বার্থে ভিন্ন পথও বেছে নিতে পারে দেশটি। হাসিনাকে ফেরতে দেওয়ার বিষয়ে ঢাকার বার্তার প্রাপ্তি স্বীকার করলেও বাড়তি মন্তব্য করছে না দিল্লি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সোমবার জানিয়েছেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের বার্তা আমরা পেয়েছি বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে। কিন্তু এ বিষয়ে এই মুহূর্তে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

দেশটির গণমাধ্যম সূত্র বলছে, হাসিনা ইস্যুতে আপাতত ধীরে চলো নীতিতে থাকতে পারে দিল্লি। ছয় দিনের আমেরিকা সফরে যাচ্ছেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে হাসিনার বিষয়টিও উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে এ বিষয়েও কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে দিল্লিকে পাঠানো চিঠির উত্তর এখনো পায়নি ঢাকা। সেই চিঠির উত্তর পেলে সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলম। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।

রফিকুল আলম বলেন, ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পন চুক্তিতে কাউকে ফেরত পাঠানোর সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। চিঠির বিষয়ে দিল্লির জবাব না পেলে আবারও তাগাদাপত্র পাঠাবে সরকার।  এর আগে সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে এবং এই চুক্তির আওতায় ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। একই দিন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারতকে একটি ‘নোট ভার্বাল’ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। বিচারের জন্যই তাকে ফেরত চাওয়া হয়েছে।

অপরদিকে বাংলাদেশি কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির বলেন, ভারতের যে বন্দি প্রত্যর্পণ বা বিনিময় চুক্তি আছে সে অনুযায়ী কেউ যদি কোনো অন্যায় করে আইনিভাবে দোষী সাব্যস্ত হন, ওইরকম ব্যক্তিবর্গ যদি বাংলাদেশ বা ভারতে আশ্রয় নেন তাহলে উভয় দেশ চুক্তি অনুযায়ী তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে পারে। গত সাড়ে চার মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রায় ২৫০টি মামলা হয়েছে গণহত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে।

চুক্তি অনুযায়ী, এ ধরনের অপরাধে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে চাইলে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে পারে ভারত। যদিও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এই চুক্তি থাকলেও এখানে যদি শেখ হাসিনার লাইফ থ্রেটের বিষয় থাকে, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার কোনো শঙ্কা থাকে, তাহলে তাকে ফেরত দেওয়ার আগে ভারত অবশ্যই সেটা ভাববে।

এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম ও কূটনৈতিক সূত্র মতে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার ও জীবনহানির শঙ্কার অজুহাত দেখিয়ে হাসিনাকে ভারত সরকার রাজনৈতিক কিংবা কূটনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত মহেশ সাচদেব জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যর্পণ অনুরোধের বিরুদ্ধে আদালতে যেতে পারেন।

ভারতের প্রত্যর্পণ অনুরোধ যেমনভাবে বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ বিভিন্ন শর্তে প্রত্যাখ্যান করেছিল, হাসিনাও ঠিক একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে তিনি বলতে পারেন যে, দেশের সরকারকে বিশ্বাস করেন না এবং তার প্রতি অবিচার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ভারতে যে ভারবাল নোট দিয়েছে তাতে ন্যায়বিচারের কথা বলা হলেও সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ উল্লেখ করেনি বলে দাবি করেন ভারতীয় কূটনীতিক।

এদিকে দেশের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিটি ২০১৩ সালে করা হলেও ২০১৬ সালে মূল চুক্তিটি সংশোধন করা হয়। সংশোধনের সময় এমন একটি ধারা যুক্ত করা হয়, যা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে বেশ সহজ করেছে।

সংশোধিত চুক্তির ১০ এর (৩) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো অভিযুক্তের হস্তান্তর চাওয়ার সময় অনুরোধকারী দেশকে সেইসব অভিযোগের পক্ষে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ না করলেও চলবে শুধু সংশ্লিষ্ট আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেশ করলেই সেটিকে বৈধ অনুরোধ হিসেবে ধরা হবে। নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশ্লেষকরা বলছেন, হাসিনাকে ফেরত চেয়ে চিঠি দেওয়া, ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি হওয়ার আগেই দেশের আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকায় বিপদ আরও বাড়ছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি বর্তমানে দু’দেশের সম্পর্কে বিশেষ করে ভারতের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। ক্রমেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপে পড়ছে ভারত। 

জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় গণহত্যাসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনা ও ওবাদুল কাদেরসহ ৪৬ জন আসামির বিরুদ্ধে গত অক্টোবর মাসে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্রাইব্যুনাল। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে ইন্টারপোলের সাহায্য নিতে রোববার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এতে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের মাধ্যমে দ্রুত হাসিনার বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিশ জারি করতে হবে। এরপর পুলিশ সদর দপ্তরে আবেদন করে আদালতের প্রশিকিউশন। এরপর কাজ শুরু করে পুলিশ। চলতি সপ্তাহেই হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে নোটিশ জারি হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই বারবার প্রশ্ন উঠেছে ভারত তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আশ্রয় দেবে কি না। দুই শতাধিক হত্যা মামলার আসামি হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ অব্যাহত রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারও এ বিষয়ে কূটনৈতিক কৌশলে এগুচ্ছে। হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়াসহ কয়েকটি ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনাও বিরাজ করছে। ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর দেশটির পার্লামেন্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর জানিয়েছিলেন, মানবিক কারণেই বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি কতদিন ভারতে থাকবেন, সে বিষয়ে সে সময় কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

আরবি/জেডআর

Link copied!