বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪, ০১:৫২ এএম

আওয়ামী মন্ত্রীদের ‘অপকর্ম’ আড়ালে ষড়যন্ত্রের আগুন

মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪, ০১:৫২ এএম

আওয়ামী মন্ত্রীদের ‘অপকর্ম’ আড়ালে ষড়যন্ত্রের আগুন

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ভারতে পালিয়ে গেলেও থেমে নেই তার ষড়যন্ত্র। ঘাপটি মেরে থাকা দলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় রেখেছেন রাষ্ট্রবিরোধী অপকর্মে। সব শেষ প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়কেও টার্গেট করে জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করে দিয়েছেন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও কয়েকটি বিভাগ। ‘রাষ্ট্র নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে, এখনো আওয়ামীমুক্ত হয়নি প্রশাসন’ সম্প্রতি এমন মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, ফ্যাসিবাদী যেসব আমলারা এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন, তারাই সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের মূল হোতা। তারাই দেশের শান্তি বিনষ্ট করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে দেশের সচেতন রাজনৈতিক মহল।

রাজনৈতিক দলীয় সূত্রমতে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠনের পর থেকেই আওয়ামী সুবিধাভোগী আমলারা নানাভাবে সংস্কার কর্মকাণ্ডে বাধা প্রদান করে আসছে। এ কারণে তারা বৃহস্পতিবার রাতে গণঅভ্যুত্থানের অগ্রনায়ক তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়ার সচিবালয়ের দপ্তরে অগ্নিসংযোগ করে। এই আগুনের ঘটনায় অবকাঠামো এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পোড়ানোর মধ্য দিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক জাহিদ আহসান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, গভীর রাতে বাংলাদেশ সচিবালয়ে দুর্নীতিবাজ এবং বিগত দিনে ফ্যাসিবাদের সহযোগী আমলাদের কর্তৃক পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ডে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পোড়ানোর বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে জেগে উঠতে হবে। দেশকে নিয়ে কাউকে ষড়যন্ত্র করতে দেওয়া হবে না।

আমলারাই আওয়ামী জালেমদের সহযোগিতা করছেন: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ সচিবালয়ে আগুনের ঘটনার বিষয়ে বলেন, আমলাদের মধ্যে যারা এই অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছেন এবং গণঅভ্যুত্থানের বিপক্ষে অবস্থান করে এখনো আওয়ামী জালেমদের সহযোগিতা করছেন, অতি দ্রুত তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

একইসঙ্গে জনপ্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধনের পক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরিপূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করছে। বাংলাদেশ সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং সুষ্ঠু তদন্তের কথা জানিয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. আনোয়ার উল্ল্যাহ্ বলেন, গত বুধবার রাতে সরকারের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনের গুরুত্বপূর্ণ চারটি মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রসাশনের লোকজন এড়িয়ে যেতে পারে না। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন ঘটনা।  বড় দিনের ছুটির পর রাতে জনমানবহীন অবস্থায় সংঘটিত ঘটনাটি সুপরিকল্পিত। এর সঙ্গে জড়িতদের শান্তির দাবি জানান তিনি।

অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এটি অবশ্যই নাশকতামূলক। এ কাজের পেছনে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট তথা স্বৈরাচারের দোসররা এখনো কর্মরত এবং ঘটনাটি তারাই ঘটিয়েছে। তা ছাড়া ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসরদের অনেকের কাছে এখনো সচিবালয়ে প্রবেশের পাস থাকায় তাঁরা সচিবালয়ে অবৈধভাবে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন। কাজেই স্বৈরাচারের দোসরদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয়।

আওয়ামী মন্ত্রীদের ‘অপকর্মের’ তথ্য সব উধাও:
পতিত সরকারের দুর্নীতিবাজ হিসেবে আলোচিত সাবেক পাঁচ মন্ত্রী- ওবায়দুল কাদের, জুনাইদ আহমেদ পলক, পাপন, তাজুল ইসলাম ও মাহমুদ আলীদের মন্ত্রণালয় পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে।  সচিবালয়ে লাগা ভয়াবহ এ আগুন নিয়ে অনেকের সন্দেহÑ এটা নাশকতা। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুইয়ার অভিযোগ, হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির নথি পুড়িয়ে দিতেই এই অগ্নিকাণ্ড।

আওয়ামী মন্ত্রীদের ‘অপকর্মের’ সব তথ্য উধাও হয়ে গেছে। আপাতত তাদের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এ বিষয়ে পুরো মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে সূত্র জানায়।

‘স্বাভাবিকভাবেই অনেকের মধ্যে কৌতূহল, যেসব মন্ত্রণালয় পুড়ে গেছে সেসব মন্ত্রণালয় হাসিনার কোনো কোনো মন্ত্রী চালাতেন। ধারণা করা হচ্ছে, মন্ত্রণালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব নথিই পুড়ে গেছে।’

ভবনটির আটতলা ও নয়তলায় রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় যা আওয়ামী সরকারের আমলে দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আওতাধীন ছিল। সরকার পতনের কয়েকদিন আগে থেকে কোনোরকম হদিস নেই প্রতাপশালী এই নেতার, গুঞ্জন রয়েছে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। আটতলায় আরও রয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, যা সাবেক সরকারের আমলে ছিল জুনাইদ আহমেদ পলকের অধীনে। 

তিনি ছিলেন এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে, সরকার পতনের কয়েকদিনের মাথায় ধরা পড়েন পলক, বর্তমানে রয়েছেন কারাগারে।

সূত্র মতে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ও ছিল ভবনটির সাততলাজুড়ে ও আটতলার কিছু অংশে। আওয়ামী সরকারের আমলে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন মো. তাজুল ইসলাম। সরকার পতনের পর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি তারও। সচিবালয়ের আটতলায় থাকা আরেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় হলো অর্থ মন্ত্রণালয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান আবুল হাসান মাহমুদ আলী হাসিনার পতনের পর হদিস নেই এই নেতার। তার আগে এই মন্ত্রণালয় সামলেছেন আ হ ম মোস্তফা কামাল, সরকার পতনের কিছুদিন আগেই পরিবারসহ পালিয়েছিলেন কামাল। ছয়তলায় রয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, যা ছিল নাজমুল হাসান পাপনের অধীনে। তবে কোথায় আছেন সাবেক এই বিসিসি সভাপতি তা জানা নেই কারও। পাঁচতলা ও ছয়তলায় আরও রয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন নজরুল ইসলাম চৌধুরী, অনেকের মতো তিনিও সরকার পতনের পর পলাতক। ভবনের পাঁচতলায় পুড়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়।  চারতলায় আগুন লাগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ বিভাগে। এসব জায়গার পুড়ে যাওয়া কাগজপত্রগুলোর মধ্যে কিছু ডিজিটাল করা হয়েছে আবার বেশকিছুর তথ্য এখনো আর পাওয়া সম্ভব নয় বলে সচিবালয়ের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

টাকা পাচারের প্রমাণ মুছতেই সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড: আমলারা বড় ষড়যন্ত্র করছে এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়েছে।  যাদের ব্যাপারে এ দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা পাচার ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে- তারাই পাচারের তথ্য ও কাগজপত্র মুছে ফেলতেই সচিবালয়ে আগুন দিয়েছে।  অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সচিবালয়ে প্রবেশের অস্থায়ী সব পাস বাতিল, ঢুকতে পারবেন না সাংবাদিকরাও
আগুনের ঘটনার পর সচিবালয়ে প্রবেশের অস্থায়ী সব পাস বাতিল করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির স্বার্থে সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুকূলে ইস্যুকৃত স্থায়ী প্রবেশ পাস (ডিজিটাল অ্যাক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম) এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ইস্যুকৃত অস্থায়ী প্রবেশ পাস ছাড়া সব ধরনের অস্থায়ী (বেসরকারি ব্যক্তিদের জন্য) সচিবালয় প্রবেশ পাস বাতিল করা হলো। এতে আরও বলা হয়, সাংবাদিকদের অনুকূলে ইস্যুকৃত অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এতদ্বারা বাতিল করা হলো।

সচিবালয়ে প্রবেশে সাময়িক অসুবিধার জন্য সরকারের দুঃখ প্রকাশ..
এদিকে আগুনের ঘটনায় সমালোচনার পর সচিবালয়ে প্রবেশ ইস্যুতে সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছে সরকার। গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কি পয়েন্ট ইন্সটলেশনের (কেপিআই) নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশ সীমাবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‘সচিবালয়ে আগুন গভীর ষড়যন্ত্র, সেখানে শেখ হাসিনার মুখ্য সচিবের ফাইল ছিল’
অন্যদিকে আগুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সচিবালয়ে আগুন গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মুখ্য সচিবের অর্থ পাচারের ফাইলসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ নথি ছিল সেখানে।’ রিজভীর বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও রন্ধ্রে রন্ধ্রে আছে তাদের দোসররা। বিশেষ করে আমলাতন্ত্র এখনো ফ্যাসিবাদের তোষামোদি করছে।’ তিনি বলেন, ‘আমলা কিংবা পুলিশ সর্বত্র ঘাপটি মেরে ফ্যাসিবাদের দোসররা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসে আছেন। কোথায় কোন নাশকতা আর কোথায় কোন চক্রান্ত চলছে তার কোনোটিই ঠিক নেই।

আরবি/জেডআর

Link copied!