শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৫, ০৯:৫৪ এএম

ভয়ংকর লুটেরা নারী চক্র

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৫, ০৯:৫৪ এএম

ভয়ংকর লুটেরা নারী চক্র

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দুই তরুণী রাজধানীর মিরপুর এক নম্বর গোল চত্বরের ফুটপাতে কেনাকেটা করছিলেন। তাদের মধ্যে তন্বী আক্তার নামের তরুণী পোশাক কিনে দোকানের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন। অপর তরুণী তামান্না দোকানে কেনাকাটায় ব্যস্ত। তন্বীর বাম পাশে বোরখাপরা দুজন নারী তার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দোকানির সঙ্গে পণ্যের দর কষাকষি করছিলেন। মূল্য বেশি চাওয়ার অভিযোগ তুলে দোকানদারের সঙ্গে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। এ সময় এক নারী তন্বীর চোখের দিকে তাকিয়ে একটু পাশে দাঁড়াতে বলেন। এই কথা বলার ঠিক এক-দেড় মিনিটেই অবচেতন হয়ে যান তন্বী। এই সময়ে তার সঙ্গে কী হয়েছে ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তিনি। জ্ঞান ফিরে দেখেন, ভ্যানিটি ব্যাগের চেইন খোলা। ভেতরে থাকা মোবাইল নেই। ততক্ষণে সটকে পরেন ওই দুই নারী। কিছুক্ষণের জন্য তন্বীকে অবচেতন করে তারা মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যান। তন্বীর সঙ্গে থাকা তরুণী তামান্না তাকে জানান, দুই নারীকে তিনি একরকম দৌঁড়িয়ে চলে যেতে দেখেছেন। তখন তন্বীকে অবচেতন মনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন তিনি। ঘটনাটি সম্প্রতির।

ভুক্তভোগী তন্বী আক্তার বলেন, বোরখা পরা নারী আমার সঙ্গে কথা বলার পরপরই আমার কী হয়েছে মনে করতে পারছি না। এক-দেড় মিনিট নিজের মধ্যেই ছিলাম না। বুঝলাম না কীভাবে কী হয়েছে। এ ঘটনায় মিরপুর থানায় অভিযোগ করা হয়। জিডি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে পুলিশ। 

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার শিকার শুধু নারীরাই নয়, পুরুষরাও শিকার হচ্ছে। একটি চক্র পথে-ঘাটে, শপিংমলে, বাস ও বিভিন্ন স্টেশনে ওঁৎ পেতে থেকে টার্গেট ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে এভাবেই হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ অর্থ, মোবাইল-মানিব্যাগসহ স্বর্ণালঙ্কার। পুরুষ প্রতারকদের পাশাপাশি এ চক্রে রয়েছে নারী সদস্যও। এরা রাস্তা বা ফুটপাতে সুযোগ বুঝে কোনো তরুণী বা নারীকে মুহূর্তের মধ্যে অবচেতন করে স্বর্ণের গহনা, মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে। এসব ঘটনা থেকে রেহায় পেতে চলার পথে মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার বলেন, এসব ক্ষেত্রে মেডিসিন ব্যবহার করা হতে পারে, যা কোনো উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষ গ্রহণ করার ব্যবস্থা করা হয়। তখন মানুষের জ্ঞান থাকে, কিন্তু আশপাশে কী হচ্ছে সেটি বুঝতে পারে না। নিজের নিয়ন্ত্রণ নিজের মধ্যে থাকে না। অন্যের নিয়ন্ত্রণে চলে। যা বলা হবে সেই ব্যক্তি তাই শুনবে। অবশ্য এটি কিছু সময়ের জন্য। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ড্রাগের নাম স্কোপোলামিন। এক ধরনের নাইটশেড উদ্ভিদ থেকে তৈরি হয়। স্কোপোলামিন হায়োসিন নামেও পরিচিত। এটি প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত ট্রপেন অ্যালকালয়েড এবং অ্যান্টিকোলিনার্জিক ড্রাগ যা কয়েক ধরনের রোগ ও অসুস্থতা যেমন-মোশন সিকনেস, অপারেশন পরবর্তী বমি বমি ভাব এবং পার্কিনসন রোগের কাঁপুনির চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই ড্রাগ যার ওপর প্রয়োগ করা হয় তার নিজের কোনো নিয়ন্ত্রণ তার থাকে না। 

বলা হয়ে থাকে, মাদকের শিকার ওই ব্যক্তি তার নিয়ন্ত্রণকারীর কথা মতো সবকিছুই করতে পারেন। তার সব জিনিসপত্র দিয়ে দিতে পারেন এমনকি দুর্বৃত্তদের কথা মতো কাউকে খুন পর্যন্ত করতে পারেন। ভিজিটিং কার্ড, কাগজ, কাপড় কিংবা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে এই ড্রাগ রেখে যার ওপর প্রয়োগ করা হবে তার নাকের চার থেকে ছয় ইঞ্চি দূরত্বে নিয়ে আসা হয়। এর কিছুক্ষণ পর থেকেই ভুক্তভোগীর মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। কারও কারও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে এক ঘণ্টা সময় লাগে, আবার অনেকে তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময় এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা শুনেছি। এটি থেকে রেহায় পেতে মানুষকে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। চলার পথে সতর্ক থাকতে হবে। মগবাজার নয়াটোলা মাজার রোডের বাসিন্দা গৃহবধূ রেবেকা সুলতানা রেখা জানান, মাসখানেক আগে এক সন্ধ্যায় নাশতা কিনতে বাসা থেকে বের হয়ে নয়াটোলা শিশু পার্ক মাঠের পাশে যান। এ সময় এক নারী তার সঙ্গে কথা বলেন এবং ছোট একটি ঝুড়ি ধরতে দেয় তাকে। এরপর প্রায় এক মিনিট পর সম্বিত ফিরে পেয়ে দেখেন, তার দুই কানের স্বর্ণের দুল এবং হাতে থাকা টাকার ব্যাগটি নেই। ঝুড়িও নেই হাতে।

মগবাজার এলাকার আরেক বাসিন্দা হালিমা সুমিও সম্প্রতি এই ধরনের চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন। প্রায় এক মাস আগে বিকেলে তিনি মৌচাকে শপিং করতে যান। মৌচাক ফুটপাতের পাশে বাচ্চাদের পোশাক দেখছিলেন। এ সময় অচেনা এক নারী তার চোখের দিকে তাকিয়ে পোশাক পছন্দের বিষয় নিয়ে কথা বলতে থাকে। এরই মধ্যে সুমি অবচেতন হয়ে পরেন। সম্বিত ফিরে দেখেন, হাতের আঙ্গুলের স্বর্ণের আংটি ও পার্টস নেই। 

তিনি বলেন, ওই নারীর সঙ্গে কথা বলেছি, শুধু এটিই মনে আছে। এরপর কীভাবে হাতের আংটি, পার্টস নিয়েছে বলতে পারব না। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে টিঅ্যান্ডটি স্কুলের সামনে একইভাবে ৯ম শ্রেণির এক ছাত্রীর কানের দুল ছিঁড়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। অবশ্য এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা সাধারণ মামলা বা জিডি করতে আগ্রহী হন না। যে কারণে এ ধরনের ঘটনার কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এটাকে ডেভিলস ব্রিট বলে। এই ড্রাগ পাউডারের মতো। এর সাইন্টেফিক নাম হচ্ছে স্কোপোলামাইন। এটা কারও ওপর প্রয়োগ করা হলে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ভুক্তভোগীর ব্রেইনের ম্যামোরিটা আউট হয়ে যায়। ভুক্তভোগী তার নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং দুর্বৃত্তদের কথা মতো সবকিছু করে। কিন্তু চেতনা ফিরলে তার কিছুই বলতে পারে না। 
এর প্রয়োগ ইদানীং বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা মূলত ধুতরা ফুল থেকে তৈরি হয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে নাইজেরিয়ান কিছু দুর্বৃত্ত এর প্রয়োগ বেশি করছে। এর সঙ্গে লোভে পড়ে আমাদের দেশের অনেক নারী-পুরুষ নাইজেরিয়ানদের সঙ্গে জড়িয়ে এসব অপরাধ করছে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!