বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৫, ১২:১১ এএম

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগ এখন অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৫, ১২:১১ এএম

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগ এখন অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বিরুদ্ধে সঠিকভাবে নদী খনন ও ড্রেজিং না করে বরাদ্দের ৩০-৪০ শতাংশ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ বহু আগের; যা প্রায় সবারই জানা আছে। 

তবে ড্রেজার বেইসের (ড্রেজার সংরক্ষণ, পরিচালন ও মেরামত) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনেও যে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা যায়, তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। আর এ কাজই করেছেন সংস্থার ড্রেজিং বিভাগের দুই অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মজনু মিয়া এবং এ কে এম ফয়ছল। 

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের চাটুকারিতা করে প্রত্যেকে আয় করেছেন অন্তত অর্ধশত কোটি টাকা। পতিত সরকারের সর্বশেষ আশীর্বাদে তারা দুজনই সরকারের শেষ সময়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যয়বহুল প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) হয়েছেন। সেই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থেকে পদোন্নতি পেয়েছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভোল পাল্টে জাতীয়তাবাদী সেজেছেন তারা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তথ্যমতে, ড্রেজিং বিভাগের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম তালুকদারের আশীর্বাদে মজনু মিয়া ও ফয়সাল আলাদা দুটি পিডি হয়েছেন। মূলত তারা এখন প্রধান প্রকৌশলীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং ড্রেজিং বিভাগের বিভিন্ন অপকর্মের হোতা। 

তবে রকিবুল ইসলাম তালুকদারের সব ধরনের অপকর্মের মূল সহযোগী ছিলেন আরেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ছাইয়েদুর রহমান। ভাগবাঁটোয়ারা ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গী ছাইয়েদুরকে ড্রেজিং বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে সরিয়ে দিয়েছেন রকিবুল। 

তবে ছাইয়েদুর রহমানের বিরুদ্ধেও ১৫ বছরের লাগামহীন দুর্নীতির বহু তথ্য রয়েছে। এ কারণে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) তার বিরুদ্ধে একাধিক অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে।

এদিকে, নদী খনন ও ড্রেজিংয়ে সীমাহীন দুর্নীতি ও অর্থ লোপাট এবং রকিবুল তালুকদারের বিপুল অর্থবিত্ত ও অবৈধ সম্পদ নিয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করার পর নৌ মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএসহ নৌ সেক্টরজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। 

তার বিরুদ্ধে দুদকের জোর অনুসন্ধানের পাশাপাশি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন হতে পারে। এছাড়া রকিবুলের বিরুদ্ধে যেকোনো সময় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে।

নাব্যতা সংকট দূর করে সারা বছর নৌপথ সচল রাখতে নিয়মিত নদী ড্রেজিং বা পলি অপসারণের জন্য বিআইডব্লিউটিএর বহরে ড্রেজারের সংখ্যা ৪৫। এই বহরে আরও ৩৫টি যুক্ত হতে যাচ্ছে। এসব ড্রেজার সংরক্ষণ, পরিচালন ও মেরামতের জন্য আলাদা আলাদা ড্রেজার বেইস আছে। 

এর মধ্যে পদ্মা সেতু চালুর আগে মাওয়া ও নারায়ণগঞ্জ ড্রেজার বেইস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ দুই বেইসের অধীনে যেমন বেশিসংখ্যক ড্রেজার ছিল, তেমনি এগুলোর পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত খরচও ছিল অনেক বেশি। পদ্মা সেতুর কারণে মাওয়া ড্রেজার বেইসের গুরুত্ব কমে গেলেও নারায়ণগঞ্জেরটা এখনো গুরুত্বপূর্ণ। 

এ দুই ড্রেজার বেইসের একটির প্রধান ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মো. মজনু মিয়া, অন্যটির ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম ফয়ছল। তখন তারা দুজনই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, তারা দীর্ঘ প্রায় আট বছর দুটি বেইসের প্রধান ছিলেন। সেখানে দায়িত্ব পালনকালে নৌপথের পলি অপসারণের নামে ড্রেজারের জ্বালানি তেল ক্রয় এবং ড্রেজার রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের নামে সীমাহীন অর্থ লুটপাট করেছেন তারা। 

এই বিভাগের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা/প্রকৌশলী এবং কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ড্রেজার পরিচালনার জন্য জ্বালানি তেল ক্রয়, ড্রেজারগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও মেরামতের সব দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব সংশ্লিষ্ট ড্রেজার বেইসের। এখানে অর্থ লুটপাটের কয়েকটি খাত রয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রতিটি ড্রেজারের ইঞ্জিন মিটার ১০ শতাংশ টেম্পারিং করা। ড্রেজিংয়ের জন্য ৯০ লিটার তেল লোড করলে ১০০ লিটার শো করে (দেখায়)। 

একটি ড্রেজার দৈনিক ১২ ঘণ্টা চললে কাগজে-কলমে ১৮ ঘণ্টা দেখিয়ে দেড় গুণ বেশি জ্বালানি ব্যয় দেখানো হয়। ড্রেজার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়ার জন্য টাগবোটের ইঞ্জিনে যে পরিমাণ জ্বালানি প্রয়োজন হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি দেখানো হয়। যদি ৫০০ লিটার খরচ হয়, সেখানে দেখানো হয় ১ হাজার লিটার।

এভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিটি ড্রেজার থেকে মাসে অন্তত ৬ লাখ টাকা লুটপাট হয়। এই টাকার ৫০ শতাংশ পান বেইসপ্রধান। বাকি ৫০ শতাংশ তার অধীনস্থদের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা হয়। 

এভাবে মাওয়া বা নারায়ণগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ বেইসের অধীনে থাকা কমপক্ষে ১০টি ড্রেজারের তেল ক্রয় খাত থেকে প্রতি মাসে চুরি হয় ৬০ লাখ, যা বছরে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা; যার ৩ কোটি ৬০ লাখ পেয়েছেন মজনু মিয়া বা ফয়ছল। এই হিসাবে মাওয়া ও নারায়ণগঞ্জ ড্রেজার বেইসের প্রধান থাকাকালে আট বছরে প্রত্যেকেরই শুধু জ্বালানি খাত থেকে অবৈধ আয় হয়েছে ২৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

তবে এর চেয়ে চুরি বা অর্থ লোপাট বেশি হয় ড্রেজার সংরক্ষণ খাতে। আর মেরামত খাতে হয় পুকুরচুরি। সেসব ভয়ংকর অনেক তথ্যও এরই মধ্যে আসতে শুরু করেছে। 

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, র‌্যাবের সাবেক মুখপাত্র এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) সোহায়েল আহমেদ (বর্তমানে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে) রকিবুল ইসলাম তালুকদারের স্ত্রীর বড় ভাই। 

এইচ টি ইমাম, মির্জা আজম, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক এমপি শেখ হেলাল, লিটন চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে রকিবুল ইসলাম তালুকদার গত সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। ক্ষমতার জোরে তিনি বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান, সদস্য কাউকে পাত্তা দেন না। 

রকিবুল ইসলাম তালুকদার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নোয়াখালী-১ আসনের সাবেক এমপি আনোয়ার হোসেন খানের ড্রেজিং প্রতিষ্ঠানে সাবেক এমপি শেখ হেলাল এবং সাবেক চিফ হুইপ লিটন চৌধুরী, সালমান এফ রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান (তরুণ) গংয়ের নামে বেনামীয় বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার ড্রেজিং দিয়েছেন। 

রকিবুল ইসলাম তালুকদার সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) রকিবুল ইসলাম তালুকদারের মাধ্যমেই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক দুই মন্ত্রী হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে ছিল রকিবুল ইসলাম তালুকদারের অবৈধ লেনদেন।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!