২২ গজে নামটা যখন বাংলাদেশ হতাশা ও আক্ষেপ তখন সঙ্গি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়! জয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে কখনো বল হাতে আবার কখনো ব্যাট হাতে শেষ মুহূর্তে এসে হেরে বসাটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে লেগে আছে অনেক বছর ধরেই। টাইগারদের এমন পারফরম্যান্সে প্রশ্ন জাগে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে ওরা কেন এমন করে? সহজ জয় কেন মিস করে বারবার।
যদি আরেকটু সহজ করে বলি, বাংলাদেশের ২০৬ রানের জবাবে আমিরাত যখন ব্যাটিংয়ে শেষ ৮ বলে আমিরাতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ২৩ রান। ৮ বলে ২৩ যে কোনো মাঠেই জয়ের জন্য যথেষ্ট! এমন পরিস্থিতে এসে সহজ জয় পাওয়াটা ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু না! ১৮.৬ বলে এসে সহজ রান আউটের বদলে শরিফুল যেন ওভার থ্রো করে বুঝিয়ে দিলেন ‘আমি জয় চাই না, হারতে চাই।’
শেষ মুহূর্তে ওই চার রান বা পাঁচ রানেই বদলে গেলো ৩ ম্যাচের সিরিজের চিত্র।
ম্যাচ শেষে টাইগার অধিনায়ক লিটন দাস বলেন, ‘যে কোনো পরাজয়ই বেদনাদায়ক। তবু আমরা এই উইকেটে ভালো ব্যাটিং করেছি। উইকেট খুব ভালো ছিল। আমার মনে হয়েছে, ব্যাটিংয়ের সময় তারা শিশিরের সুবিধাটা পেয়েছে। তার পরও আমরা চেষ্টা করেছি। তবে ফিল্ডিং ও মাঝের ওভারের বোলিংয়ের আমরা কিছু ভুল করেছি।’
লিটন আরও বলেন, ‘বুঝতে হবে যে, এই ধরনের ছোট মাঠে খেলার সময় শিশিরের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তাই বোলিংয়ের সময় হিসেবি হতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন ব্যাটসম্যানের জন্য আলাদা পরিকল্পনা করতে হবে।’
আমিরাতের বিপক্ষে সহজ জয় পাওয়া ম্যাচ হেরে বাংলাদেশের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স গণমাধ্যমের মুখোমুখি বলেন, ‘দেখুন, খেলাটা দুই দলের। তারা খুবই ভালো ব্যাটিং করেছে, আমরাও ভালো ব্যাটিং করেছি। আমরা বেশ কিছু ক্যাচ মিস করেছি। যেটা তাদের ম্যাচে রেখেছিল। তারা খুবই ভালো ব্যাটিং করেছে।’
দলের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে সিমন্স ব্যাখা দিলেন, ‘আমি এটা নিয়ে চিন্তা করব। আমরা মাত্রই ম্যাচ হেরেছি। এখনই ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন নিয়ে ভাবতে পারছি না
২০৫ রান নিয়ে এমন পরাজয় দুশ্চিন্তার কারণ থাকাটা স্বাভাবিক। সিমন্স অবশ্য আশাবাদী, ‘এখানে কিছু ম্যাচ খেলা এবং আমরা পাকিস্তানে যেটা করতে চাই, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। এরকম প্রস্তুতিই আমরা নিচ্ছি।’
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন কিছু মুহূর্ত রয়েছে যেখানে শেষ মুহূর্তে পরাজয় বরণ করেছে দলটি। নিচে এমন কিছু উল্লেখযোগ্য ম্যাচের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো:
২০১২ এশিয়া কাপ ফাইনাল: পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হার
ঢাকার শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে বাংলাদেশ ২৩৪/৮ রান করে। পাকিস্তান ২৩৬/৯ রান করে। শেষ ওভারে ১০ রান প্রয়োজন ছিল, কিন্তু বাংলাদেশ ৭ রানেই আটকে যায়। এই ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের জন্য একেবারে শেষ মুহূর্তের হার।
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: ভারতের কাছে ১ রানে হার
বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে বাংলাদেশ ৭/১৪৬ রান করে। জয়ের জন্য ১১ রান প্রয়োজন ছিল শেষ ওভারে। মুশফিকুর রহিম দুটি চার মেরে উদযাপন শুরু করেন, কিন্তু পরপর দুই বলে আউট হন। শেষ বলে ২ রান প্রয়োজন ছিল, কিন্তু শূভাগত হোম রান নিতে ব্যর্থ হন। বাংলাদেশ ১ রানে হেরে যায়।
২০১৮ এশিয়া কাপ ফাইনাল- ভারতের কাছে হার
ডেথে আবার রুবেল হোসেন ও মুস্তাফিজুরকে ফিরিয়ে আনেন মোর্তাজা। আর ৪৭ ও ৪৮ তম ওভারে তারা ফিরিয়ে দেন যথাক্রমে জাদেজা (২৩) ও ভূবনেশ্বর কুমার (২১)-কে। ফলে আবার ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ। কিন্তু ততক্ষণে মুস্তাফিজুরের ওভার শেষ হয়ে গিয়েছিল।
৫০তম ওভার বল করতে এসেছিলেন মাহমুদুল্লা। ভারতের দরকার ছিল ৬ রান। ভূবি আউট হতে চোট নিয়েই ক্রিজে ফিরে এসেছিলেন কেদার যাদব। অপরদিকে ছিলেন কূলদীপ যাদব। শেষ পর্যন্ত একেবারে শেষ বলে সিঙ্গলস নিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে আসেন কেদার (২৩*) ও কূলদীপ(৫*)।
২০১৮ আফগানিস্তানের কাছে ১ রানে হার
ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে বাংলাদেশ ১৪৫ রান তাড়া করতে গিয়ে ১ রান কম করে। মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে শেষ মহূর্তে জয় ছিল সময়ের ব্যাপার কিন্তু সেদিনও পারলো না টাইগররা। বাংলাদেশ হেরে যায় ১ রানে ।
২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৪ রানে হার
নাসাউ কাউন্টি গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ১১৩ রান করে। শেষদিকে বাংলাদেশের ১৮ বলে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২০ রান। ১৮তম ওভারে হৃদয়ের উইকেট নিয়ে মাত্র ২ রান দেন রাবাদা।
শেষ দুই ওভারে ১৮ রান দরকার হয় বাংলাদেশের। ১৯তম ওভারে কোনো বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ ও জাকের। শেষ ওভারে ১১ রানের সমীকরণ দাঁড়ায়। বল হাতে নেন কেশভ মহারাজ।
এর আগে, নিজের প্রথম ৩ ওভারে ২২ রান দিয়ে ১ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। শেষ ওভারে এসে প্রথম বলেই দেন ওয়াইড। দ্বিতীয়টিতে সিঙ্গেলস নিয়ে দেন রিয়াদ। তৃতীয় বলে ফুলটস পেয়েও বাউন্ডারি হাঁকাতে ব্যর্থ হন জাকের। ওই বল থেকে আসে দুই রান। পরের বলে জাকের ৯ বলে ৮ রান করে আউট হয়ে যান ক্যাচ দিয়ে। পঞ্চম বলে স্ট্রাইক পাওয়ার পর ফুলটস পেয়ে যান রিয়াদ। লং অনের উপর দিয়ে তুলে মারেন তিনি।
কিন্তু অল্পের জন্য বাউন্ডারির ঠিক সামনে থেকে দারুণ এক ক্যাচ নেন মার্করাম। এখানে ভেঙে যায় বাংলাদশের স্বপ্ন! শেষ বলে ফুলটস পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি তাসকিন আহমেদ। বাংলাদেশকে ম্যাচটা হারতে হয় ৪ রানে।
এই পরিসংখ্যানগুলো বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের হৃদয়বিদারক মুহূর্তের সাক্ষ্য দেয়।
আপনার মতামত লিখুন :