২৫ দিনের টানটান উত্তেজনার পর ইউরো ২০২৫ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। রোববার সুইজারল্যান্ডের বাসেল শহরের সেন্ট জ্যাকব-পার্কে অনুষ্ঠিত হবে বহু প্রতীক্ষিত ফাইনাল।
শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে নামবে ইংল্যান্ড, আর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন খুঁজবে তাদের প্রথম ইউরো শিরোপা। আজ রোববার (২৬ জুলাই) বাংলাদেশ সময় রাক ১০টায় শুরু হবে খেলাটি।
তবে মাঠের খেলা ছাড়াও এই আসর নানা দিক থেকে নজর কেড়েছে, বিশেষ করে আয়োজনের দিক থেকে সুইজারল্যান্ড পেয়েছে উচ্চ প্রশংসা। ইউরোপের কেন্দ্রস্থ এই শান্তিপূর্ণ দেশটি প্রমাণ করেছে, ছোট পরিসরের স্টেডিয়াম দিয়েও বড়সড় ইতিহাস গড়া সম্ভব।
রেকর্ড গড়েছে দর্শকসংখ্যা
সেমিফাইনালে স্পেনের জার্মানিকে হারানোর পর ইউরো ২০২৫-এর মোট দর্শকসংখ্যা দাঁড়ায় ৬,২৩,০৮৮। আগের রেকর্ড ছিল ইউরো ২০২২ ইংল্যান্ড আসর। যেখানে ৫,৭৪,৮৭৫ জন দর্শক মাঠে এসেছিলেন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ইংল্যান্ডের মতো সুইজারল্যান্ডে ওয়েম্বলি বা ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের মতো ৭০ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়াম নেই। সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা বাসেলের সেন্ট জ্যাকব পার্ক, যেখানে মাত্র ৩৪,২৫০ দর্শক বসতে পারেন।
এডিপি-র গড় দর্শক মাত্র ৫৬৯ হলেও ইউরো ২০২৫-এর ৩১ ম্যাচের মধ্যে ২৯টি ম্যাচ ছিল পূর্ণ দর্শকে পরিপূর্ণ। ফাইনালের পর এই সংখ্যাটা ৬.৫ লক্ষ ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।
উয়েফার সহ-সভাপতি ও ওয়েলসের সাবেক অধিনায়ক লরা ম্যাকঅ্যালিস্টার বলেন, এটি নারীদের টুর্নামেন্ট হলেও, দর্শক উপস্থিতি, সম্প্রচার চুক্তি, শহরের সাড়া—সব মিলিয়ে ইউরো ২০২৫ নারী ফুটবলের জন্য একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।
ভক্তদের ঢল, প্রাণবন্ত আয়োজন
৮টি শহরে ছড়িয়ে থাকা ফ্যান জোনগুলোতে এক মিলিয়নেরও বেশি দর্শক অংশ নিয়েছেন। প্রি-ম্যাচ ফ্যান ওয়াকে অংশ নিয়েছেন ৯৫,০০০-এর বেশি মানুষ।
সুইজারল্যান্ডের প্রতিটি ম্যাচে রাস্তায় নেমে এসেছেন হাজারো ভক্ত, বিশেষ করে বার্নে স্পেনের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের আগে ২০,০০০ সমর্থকের লাল-সাদা ঢল রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করে।
খেলা শুরুর আগে জাতীয় স্লোগান, বাদ্যযন্ত্র ও উল্লাসে জমে উঠেছে উৎসব। এমনকি, দর্শকদের হাতে দেখা গেছে নানা রকমের মজার 'ফুড ওয়ার' পোস্টার—পাস্তা না প্যাস্টি? ফন্ডু না পায়েল্লা? জামোন না কারিভুর্স্ট? এসব রসিকতা বাড়িয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য।
টিকিটধারীরা পেয়েছেন ফ্রি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, যা পরিবেশবান্ধব আয়োজনের অংশ। এছাড়া, উয়েফার 'Get Trained, Save Lives' কর্মসূচির আওতায় ১০,০০০ দর্শককে CPR প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
সুইস স্বপ্ন ও নতুন ইতিহাস
সুইজারল্যান্ডের নারীরা এবারই প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। ঘরের মাঠে দলটিকে নিয়ে যেমন আগ্রহ তৈরি হয়, তেমনি পরাজয়ের পরও খেলোয়াড়দের জন্য দর্শকদের ভালোবাসা ছিল অবিস্মরণীয়।
সুইস দলের কোচ পিয়া সানডহাজ বলেন, এই অভিজ্ঞতা এককথায় অদ্ভুত সুন্দর, স্বপ্নের চেয়েও বড় কিছু। আমি অত্যন্ত গর্বিত।
শুধু আবেগ নয়, বাস্তব ফলাফলও সুইস ফুটবলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কিট প্রস্তুতকারক পুমা জানিয়েছে, ইউরো ২০২৫ চলাকালীন তারা আগের নারী বিশ্বকাপের চেয়ে সাতগুণ বেশি জার্সি বিক্রি করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :