পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির পর আইপিএলের নতুন সূচি ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে ফাইনালসহ বেশ কয়েকটি ম্যাচের ভেন্যু পরিবর্তন করা হয়েছে।
পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী এবারের আসরের উদ্বোধন ও ফাইনাল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে হওয়ার কথা ছিল।
তবে ফাইনাল সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ায় নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিসিসিআই বৃষ্টির কারণে ইডেনে ফাইনাল না হওয়ার যুক্তি দেখালেও, পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী ভিন্ন কথা বলেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস অভিযোগ করেছেন, ‘বৃষ্টি স্রেফ একটা অজুহাত মাত্র, এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে।’
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, আবহাওয়া অফিসের ঘোষণার আগেই বিসিসিআই কীভাবে বৃষ্টির পূর্বাভাস জানলো?
তিনি বলেন, ‘বিসিসিআই এবং আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল বলেছে যে বৃষ্টি হতে পারে। সিএবি (ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল) জানতে চেয়েছিল যে আবহাওয়া কেমন থাকতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, মে মাসের ২০ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টির তেমন কোনো পূর্বাভাস নেই।’
ক্রীড়ামন্ত্রী আরও বলেন, ‘২৬ মে পরবর্তী সময়ের পূর্বাভাস এখনও দেয়নি আবহাওয়া দপ্তর। আমরা জানি না কখন আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যরা আবহাওয়া দপ্তরের লোক হয়ে গেল।
আমাদের এখানে আইপিএলের প্লে-অফ আর ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল ইডেন গার্ডেনে। রাজনৈতিক কারণেই এটা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো, কেন বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের বঞ্চনা করা হবে?।
এর আগে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের সংসদ সদস্য সুকান্ত মজুমদার অবশ্য কলকাতা থেকে ম্যাচ সরিয়ে নেওয়ার ভিন্ন যুক্তি দেখিয়েছিলেন।
তার মতে, আইনশৃঙ্খলার অবনতির জন্যই ফাইনাল ইডেন থেকে সরিয়ে গুজরাটের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলছেন, ইডেন থেকে ম্যাচ সরানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলার কারণে।
কিন্তু বিবৃতিতে আইপিএলের তরফে বলা হয়েছে আবহাওয়ার জন্যই হায়দরাবাদ এবং কলকাতা থেকে ম্যাচ সরানো হয়েছে। এ
কদিকে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার মানুষকে বঞ্চনা করছে, কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। আরেকদিকে ক্রিকেটপ্রেমীদেরও ভিন্ন বুঝ দেওয়া হচ্ছে।’
অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। তিনি বলেন, ‘ইডেন গার্ডেনে ৭টা ম্যাচ হয়েছে।
প্রায় প্রতি ম্যাচেই ৬০ হাজার করে দর্শক মাঠে এসে খেলা দেখেছে। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। সিএবির সঙ্গে অনেকবার আমরা বৈঠক করেছি।’
একমাত্র রামনবমীর দিন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে আমরা যে সিদ্ধান্ত (সময় পরিবর্তন) নিয়েছিলাম, তাতে কিন্তু ম্যাচ অন্য রাজ্যে হয়নি।
শুধু দিন পরিবর্তন হয়েছিল। কলকাতার আইনশৃঙ্খলা বরাবরই ভালো, তাই এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে বলেই মনে করি।’
আগামী ৩ জুন আইপিএলের অষ্টাদশ আসরের ফাইনাল হবে মোদির রাজ্য গুজরাটে। সেখানে বৃষ্টি না হওয়ার নিশ্চয়তা বিসিসিআই কীভাবে পেল সেই প্রশ্নও তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অনুপ বিশ্বাস।
তিনি বলেন, আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল যা করেছে, তা গত ৯৩ বছরেও হয়নি। কারণ ইডেনের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অত্যন্ত আধুনিক মানের। কোনো সমস্যা ছাড়াই এখানে এবার সাতটি ম্যাচ হয়েছে।
গত চার বছরের মধ্যে তিনবারই গুজরাটের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আইপিএল ফাইনাল হওয়ার পেছনে আবহাওয়া কারণ নয়।
জুনের ৩ তারিখ আহমেদাবাদে বৃষ্টি হবে না যে সেই নিশ্চয়তা আবহাওয়া দপ্তর দিতে পারবে।
এদিকে সংঘাতপরবর্তী সময়ে আইপিএলের লিগপর্বে একটি এবং প্লে-অফের চারটি ম্যাচের ভেন্যু পুনঃনির্ধারিত হয়েছে। ২৯ মে চণ্ডিগড়ের মুল্লানপুরে হবে প্রথম প্লে-অফ ম্যাচ। পরদিনই একই মাঠে হবে এলিমিনেটর ম্যাচ।
এরপর ১ জুন দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ও আসরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচ ফাইনাল আয়োজিত হবে আহমেদাবাদ নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে।
এর আগের সূচি অনুযায়ী আসরের চূড়ান্ত চারটি ম্যাচই হায়দরাবাদ ও কলকাতায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।