দুনিয়া কাঁপানো বিলিয়ন ডলারের ক্লাবগুলো যখন একে একে ক্লাব বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজেদের নাম লেখাচ্ছে, তখন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক গল্প নিয়ে হাজির হয়েছে অকল্যান্ড সিটি।
রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি, পিএসজির মতো পরাশক্তিদের ভিড়ে নিউজিল্যান্ডের এই দলটি যেন এক ব্যতিক্রমী সুর। তাদের স্কোয়াডে নেই কোনো পেশাদার তারকা।
বরং আছেন নাপিত, দোকানকর্মী, কাঠমিস্ত্রি, বিক্রয় প্রতিনিধি আর রিয়েল এস্টেট এজেন্ট—সাধারণ পেশায় যুক্ত একদল অপেশাদার ফুটবলার।
ফুটবলের প্রতি নিবেদনই তাদের চালিকাশক্তি
অকল্যান্ড সিটির খেলোয়াড়দের ফুটবলে কোনো বেতন নেই। নিজেদের মূল পেশার পাশাপাশি ফুটবলকে তারা দিয়েছেন ভালোবাসার সর্বোচ্চটা। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন অনুশীলন আর একটি মাত্র ম্যাচ খেলেই তারা বিশ্বমঞ্চে।
ক্লাব বিশ্বকাপে অংশ নিতে অনেকেই নিজেদের চাকরি থেকে বিনা বেতনে ছুটি নিয়েছেন, এ এক অসাধারণ আত্মত্যাগের গল্প। দলের ম্যানেজার গর্ডন ওয়াটসন গর্বের সঙ্গে বলেন, আমরা অপেশাদার ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করছি।
আমাদের প্রতিটি খেলোয়াড়েরই ভিন্ন পেশা আছে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা, এমনকি এর চেয়েও বেশি সময় তাদের কর্মক্ষেত্রে দিতে হয়। এরপর এসে ট্রেনিং করা, ম্যাচ খেলা এগুলো অসাধারণ আত্মত্যাগের গল্প।
অপেশাদার তকমা সত্ত্বেও সাফল্যের চূড়ায়
অপেশাদার দল হলেও অকল্যান্ড সিটির সাফল্যের পাল্লা কিন্তু বেশ ভারী। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবটি এরই মধ্যে দশবার নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া লিগ এবং ১৩ বার ওশেনিয়া অঞ্চলের ওএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে।
এটি তাদের ১৩তম ক্লাব বিশ্বকাপ যাত্রা, যেখানে ২০১৪ সালে তৃতীয় হয়ে তারা সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল।
ওয়াটসন জানান, স্থানীয়দের কাছে আমাদের ফুটবলাররাই সত্যিকারের হিরো। ক্লাব বিশ্বকাপ নিয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত ফোন করছে, ইমেইল করছে শুভেচ্ছা জানাতে।
আশা করছি, অকল্যান্ড থেকে অন্তত ৫০ জন সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রে এসে আমাদের খেলা দেখবেন।
কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে অকল্যান্ড সিটি
আজ রবিবার জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে কিউই ক্লাবটির ক্লাব বিশ্বকাপ অভিযান। ‘সি’ গ্রুপে তাদের অন্য দুই প্রতিপক্ষ পর্তুগিজ জায়ান্ট বেনফিকা এবং আর্জেন্টাইন ক্লাব বোকা জুনিয়র্স।
নিঃসন্দেহে এটি একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ, কিন্তু এই অপেশাদার ফুটবলাররা হার মানতে রাজি নন। তাদের দলে সবচেয়ে বড় তারকা স্ট্রাইকার মেয়ার বেভান, যিনি মাত্র ২ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে হ্যাটট্রিক করে বিশ্ব মিডিয়ার নজর কেড়েছেন।
গল্পটা অনেকটা যেন গ্যালিভার আর লিলিপুটের লড়াইয়ের মতো। কিন্তু ফুটবল তো এমন এক খেলা, যেখানে কখনও কখনও বাস্তবও রূপ নেয় রূপকথায়।
অকল্যান্ড সিটি মাঠে নামবে সেই রূপকথার নতুন অধ্যায় লেখার আশায়।
ক্লাব বিশ্বকাপে অকল্যান্ড সিটির পারফরম্যান্স
অকল্যান্ড সিটি ক্লাব বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ১৭টি ম্যাচ খেলেছে। তারা সাধারণত প্রথম দিকের ম্যাচগুলোতেই হেরে বিদায় নেয়, তবে তাদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য জয়ও রয়েছে।
তাদের ক্লাব বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে ২০১৪ সালে, যখন তারা টুর্নামেন্টে তৃতীয় স্থান অর্জন করে ব্রোঞ্জ মেডেল জয় করে।
সে আসরে তারা আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন এস সেতিফকে কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়েছিল এবং সেমিফাইনালে দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়ন সান লরেঞ্জোর বিপক্ষে অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত লড়াই করে ২-১ গোলে হেরেছিল।
তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মেক্সিকোর ক্রুজ আজুলের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করার পর পেনাল্টি শুটআউটে ৪-২ গোলে জয়লাভ করে তারা।
অন্যান্য আসরে, অকল্যান্ড সিটি প্রায়শই প্রথম রাউন্ড বা প্লে-অফ ম্যাচগুলিতে হেরেছে। তবে, তারা প্রায়শই শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সম্মানজনক পারফরম্যান্স দেখিয়েছে।