আটলান্টার বিশাল স্টেডিয়ামে ৬৫ হাজার দর্শকের সামনে হয়তো শেষবারের মতো বিশ্বমঞ্চে দেখা গেল ফুটবলের জাদুকর লিওনেল মেসিকে।
ক্লাব বিশ্বকাপে নিজের সাবেক ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইনের (পিএসজি) বিপক্ষে ৪-০ গোলে হেরে বিদায় নিলো মেসির ইন্টার মিয়ামি। ম্যাচটি ছিল একদিকে পুনর্মিলনের, অন্যদিকে বিদায়ের সম্ভাব্য সূচনা।
ম্যাচের পরও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ৩৮ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।
ইন্টার মিয়ামির কোচ ও মেসির সাবেক সতীর্থ হাভিয়ের মাশচেরানো বললেন, পিএসজি এখন বিশ্বসেরা দলগুলোর একটি। তবুও মানুষ টিকিট কেটে আসে মেসিকে দেখতেই—এখনো। এটাই বলে দেয়, তিনি কতটা ব্যতিক্রম।
অতীতের ছায়া, তবু এখনো আলোর রেখা
ম্যাচে বড় হার মেনে নিতে হলেও মেসির পায়ে ছিল পরিচিত সেই জাদুর ছোঁয়া। শেষ মিনিটে একটি ফ্রি-কিক প্রতিপক্ষের দেয়ালে লেগে ফিরলেও, মাঝেমাঝেই তিনি মাঠে দেখিয়েছেন চমক।
তার একটি দুর্দান্ত লব পাসে গোল করতে পারতেন সুয়ারেজ, কিন্তু শেষ মুহূর্তে সুযোগ নষ্ট হয়।
সাবেক স্কটিশ মিডফিল্ডার ও বিশ্লেষক ডন হাচিসন বলেন, ওই পাসটাই এই টুর্নামেন্টের সেরা মুহূর্ত। একজন ডিফেন্ডারকে মাথার ওপর দিয়ে এমন নিখুঁত পাস কেবল মেসির পক্ষেই সম্ভব।
মেসি কি থামছেন?
২০২৫ সালে ইন্টার মিয়ামির সঙ্গে মেসির বর্তমান চুক্তি শেষ হচ্ছে। এরপর কী হবে—এ নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। কেউ জানে না, এমনকি মেসি নিজেও না।
তবে মেসির পরিবার মিয়ামিতে স্বাচ্ছন্দ্যেই আছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আত্মজীবনী লেখক গুইলেম বালাগে।
বালাগে লিখেছেন, সে এখন ম্যাচ ধরে ভাবছে, টুর্নামেন্ট ধরে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। বিশ্বকাপে খেলবে কি না—তা এখনো বলেনি কাউকে।
এদিকে, আর্জেন্টিনার সতীর্থ ওটামেন্দি এবং ক্লাব সতীর্থ সুয়ারেজ আশা করছেন, মেসি অন্তত ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলবেন।
পরিসংখ্যানে মেসি এক অনন্য কিংবদন্তি
বার্সেলোনার সর্বোচ্চ গোলদাতা (৬৭২)
আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা (১১২)
ইন্টার মিয়ামির সর্বোচ্চ গোলদাতা (৫০)
পিএসজি অধ্যায় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার পুনর্মিলন
এই প্রথম মেসি খেললেন নিজের সাবেক কোনো ক্লাবের বিপক্ষে। পিএসজির হয়ে তার পারফরম্যান্স মোটামুটি হলেও, ক্লাবটির বড় সাফল্য এসেছিল মেসি-নেইমার-এমবাপ্পে যুগ শেষ হওয়ার পরই।
এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ঘরোয়া শিরোপা জিতে ক্লাব বিশ্বকাপেও ফাইনালে উঠেছে তারা।
মেসির শেষটা কি এখানেই?
২০২৯ সালের আগে এই টুর্নামেন্ট আর হবে না। তখন মেসির বয়স হবে ৪২। বাস্তবতা হলো, এই ম্যাচ হয়তো বিশ্বমঞ্চে মেসিকে দেখার শেষ সুযোগ ছিল।
এখন থেকে হয়তো শুধু উত্তর আমেরিকান ফুটবলেই দেখা যাবে তাকে।
তবুও, ফুটবল বিশ্ব জানে—মেসির নাম ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। ফুটবলের এক অনন্ত ধ্রুবতারা হয়তো এবার একটু একটু করে অস্ত যাচ্ছেন।
তবুও তার প্রতিটি ছোঁয়া, প্রতিটি পাস, প্রতিটি মুহূর্ত—থেকে যাবে অনন্ত কালের স্মৃতিতে।