পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশ পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। হামলা পাল্টা হামলায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতিসহ নিহতের সংখ্যা। তবে এই সংঘাতে ভারতের চেয়ে পাকিস্তানের জয়ের সম্ভাবনায় বেশি।
পেহেলগাম ইস্যুকে কেন্দ্র করে বেশকিছু কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে দুই দেশ। ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে, আতারি সীমান্ত বন্ধ করেছে, কূটনৈতিক সম্পর্কও কমিয়ে দিয়েছে।
পাল্টা জবাব হিসেবে পাকিস্তানও ভারতের সব ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করেছে। এমনকি তৃতীয় দেশের মাধ্যমে চলা বাণিজ্যও বন্ধ করেছে দেশটি। একইসঙ্গে আকাশসীমাও বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় উড়োজাহাজের জন্য।
এছাড়াও দুদেশ তাদের পণ্য বর্জনের পাশাপাশি নৌ বন্দরও বন্ধ করে দিয়েছে একে অপরের জন্য।
তবে সামরিক শক্তিতে পাকিস্তানের চেয়ে ভারত এগিয়ে থাকলেও যুদ্ধে পাকিস্তান জেতার সম্ভাবনা বেশি। এর কয়েকটি কারণ নিচে আলোচনা করা হলো-
কৌশলগত এবং ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা
পাকিস্তান ভূ-রাজনৈতিকভাবে ভারতের তুলনায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা লাভ করেছে। পাকিস্তানের ভূখণ্ডের অবস্থান ভারতীয় বাহিনীর জন্য কৌশলগতভাবে কিছুটা কঠিন। সীমান্তে অবস্থিত পাহাড়ি অঞ্চলের কারণে পাকিস্তান দ্রুত সেনা মোতায়েন করতে এবং কঠিন পরিস্থিতিতে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম।
কাশ্মীরের নীলম ভ্যালি, রাজৌরি এবং পুঞ্চের মতো এলাকা পাকিস্তানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে ভারতীয় বাহিনীর আক্রমণ সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
শক্তিশালী সেনাবাহিনী এবং প্রশিক্ষিত কমান্ডো বাহিনী
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, বিশেষ করে এসএসজি (স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ) কমান্ডো, খুবই প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ। তারা বিশ্বের অন্যতম সেরা কৌশলগত বাহিনী হিসেবে পরিচিত। ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে সামরিক সংঘর্ষে, পাকিস্তানি সেনারা তাদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার কারণে ভারতীয় বাহিনীর যে কোনো আগ্রাসন প্রতিহত করতে সক্ষম।
বিশেষ করে, সীমান্তে এবং পাহাড়ি এলাকায় পাকিস্তান একটি বড় কৌশলগত সুবিধা লাভ করে, যেখানে তারা প্রতিরোধ করতে পারে এবং শত্রু বাহিনীকে বিপর্যস্ত করতে পারে।
ড্রোন এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার
পাকিস্তান সাম্প্রতিক সময়ে তার সামরিক প্রযুক্তি অনেক উন্নত করেছে। ড্রোন ব্যবহার এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি পাকিস্তানকে একটি বড় কৌশলগত সুবিধা প্রদান করেছে। বিশেষ করে, পাকিস্তানের বায়রাকতার টিবি- ২ এবং উইং লুং-২ ড্রোনগুলো ভারতীয় বাহিনীর সরবরাহ লাইন এবং কমান্ড সেন্টারগুলোতে আক্রমণ করতে সক্ষম।
এই ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পাকিস্তান যুদ্ধের ক্ষেত্রে একটি উচ্চতর অবস্থানে থাকতে পারে।
বিশ্বের সমর্থন এবং কূটনৈতিক চাপ
পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তার সমর্থন লাভে সফল হয়েছে, বিশেষ করে চীন ও মুসলিম দেশগুলোর থেকে। চীন পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায় এবং ভারতের প্রতি কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে সাহায্য করতে পারে।
এছাড়া, মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন তুরস্ক এবং সৌদি আরব পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলেছে। এটি পাকিস্তানের জন্য কৌশলগতভাবে বড় একটি সুবিধা। অন্যদিকে ভারত এককভাবে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়তে পারে।
জাতীয় মনোবল এবং জনগণের সমর্থন
পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে দেশপ্রেমের অনুভূতি এবং সেনাবাহিনীর প্রতি সমর্থন অতুলনীয়। যখনই কোনো সংকটের মুহূর্ত আসে, পাকিস্তানিরা তাদের সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়ায় এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকে।
এটি পাকিস্তানের জন্য একটি শক্তিশালী মনোবল তৈরি করে, যা যুদ্ধে বিজয় অর্জনে সহায়ক হতে পারে। জাতীয় ঐক্য এবং দেশপ্রেমের শক্তি পাকিস্তানকে যুদ্ধে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা
ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা যেমন ধর্মীয় অশান্তি, কাশ্মীর সমস্যা, এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোর কারণে ভারত যুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হতে পারে। ভারতের মধ্যে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা যুদ্ধের সময় একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে, যা পাকিস্তানকে কৌশলগতভাবে লাভজনক অবস্থানে নিয়ে আসবে।
নাসর পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার
পাকিস্তান তার ‘নাসর’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ভারতে শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছে। এটি একটি কৌশলগত পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা পাকিস্তানকে একটি সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেয়। পারমাণবিক অস্ত্রের ঝুঁকি ভারতের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে, যা পাকিস্তানের বিজয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে।
যদিও যুদ্ধের ফলাফল কখনও নিশ্চিত করা যায় না, তবে পাকিস্তান যে কারণে বিজয়ী হতে পারে তা অনেকগুলো কৌশলগত এবং সামরিক সুবিধার উপর নির্ভরশীল। শক্তিশালী সেনাবাহিনী, আধুনিক প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক সমর্থন, এবং জাতীয় ঐক্য- এসব পাকিস্তানকে একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে তৈরি করে। তবে, কোনো যুদ্ধের পরিণতি অনিশ্চিত, এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানই সবসময় সেরা পথ।