শুক্রবার, ০৬ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সিএনএন

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৫, ০২:০৬ পিএম

চীন যদি অ্যামোক্সিসিলিন রপ্তানি বন্ধ করে, যুক্তরাষ্ট্রের তখন কী হবে?

সিএনএন

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৫, ০২:০৬ পিএম

চলতি বছরের শুরুতে দক্ষিণ-পূর্ব চীনের জিয়াংসি প্রদেশের জি’আনে একটি ওষুধ উৎপাদন কেন্দ্রে কর্মীরা কাজ করেন। ছবি- এপি

চলতি বছরের শুরুতে দক্ষিণ-পূর্ব চীনের জিয়াংসি প্রদেশের জি’আনে একটি ওষুধ উৎপাদন কেন্দ্রে কর্মীরা কাজ করেন। ছবি- এপি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক হলো অ্যামোক্সিসিলিন। নিউমোনিয়া, পেটের আলসার ও স্ট্রেপ থ্রোটের মতো ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ চিকিৎসায় প্রতি বছর কোটি কোটি মানুষ এটি ব্যবহার করে।

তবে অনেকেই জানেন না যে, এই পেনিসিলিন-জাতীয় ওষুধটি যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র একটিমাত্র কোম্পানি তৈরি করে। এবং এর উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের ৮০ শতাংশ আসে চীন থেকে।

এটি এখন বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওষুধ আমদানিতে শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছেন। এতে করে বিদেশনির্ভর ওষুধ সরবরাহ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতা সামনে এসেছে।

জ্যাকসন হেলথকেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও রিক জ্যাকসন বলেন, ‘যদি চীন সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, তবে যেকোনো বাণিজ্যিক উত্তেজনা বা দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত অ্যামোক্সিসিলিনের প্রাপ্যতা ধ্বংস করে দিতে পারে।’ জ্যাকসন হেলথকেয়ার পুরো মার্কিনজুড়ে অ্যামোক্সিসিলিন তৈরির একমাত্র কোম্পানি।

সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে হাইড্রোকরটিসন আমদানির ৯৬ শতাংশ, আইবুপ্রোফেনের ৯০ শতাংশ এবং অ্যাসিটামিনোফেনের ৭৩ শতাংশ আসে চীন থেকে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, চীন এই নির্ভরতাকে ভবিষ্যতে চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, বিশেষ করে বাণিজ্য যুদ্ধের আবহে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সাময়িকভাবে ৯০ দিনের জন্য উচ্চ শুল্ক স্থগিত করেছে, তবুও সম্পর্কের টানাপোড়েন অব্যাহত রয়েছে।

ওয়াশিংটন-বেইজিং অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা পর্যালোচনা কমিশনের কমিশনার লিল্যান্ড মিলার বলেন, “চীন যেসব ‘চোকপয়েন্ট’ বা নিয়ন্ত্রণের জায়গায় রয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর।”

চীন এখনো ওষুধ রপ্তানিতে সরাসরি হুমকি দেয়নি। তবে ট্রাম্প যদি এই খাতে শুল্ক আরোপ করেন, তাহলে ওষুধের ঘাটতি ও দাম বাড়তে পারে, যা তার স্বাস্থ্যসেবা খরচ কমানোর প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত ওষুধের ৯০ শতাংশই জেনেরিক (অর্থাৎ মূল ওষুধের অনুরূপ ও কমদামি)। এসব ওষুধের বড় অংশ তৈরি করে ভারত, কিন্তু তারাও অনেক সময় কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি করে।

তবে কী পরিমাণে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর নির্ভরশীল, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। বড় ওষুধ কোম্পানিগুলো এমন তথ্য প্রকাশে আগ্রহী নয়। এই কারণেই ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ওষুধ আমদানির ওপর তদন্ত শুরু করেছে।

বড় ঝুঁকি

জ্যাকসনের মতে, অ্যামোক্সিসিলিন তৈরির কাঁচামালের ৮০ শতাংশ তৈরি হয় চীনে। এর মানে হলো, এই ওষুধের সরবরাহ চীনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, ‘চীনের সরবরাহ ব্যবস্থায় সামান্য কোনো ব্যাঘাতও ভয়াবহ হতে পারে, বিশেষ করে যদি কোনো ব্যাকটেরিয়াল মহামারি দেখা দেয়।।’

২০২১ সালে জ্যাকসন একটি দেউলিয়া ওষুধ কারখানা কিনে সেটিকে ‘ইউএসএন্টিবায়োটিক্স’ নামে চালু করেন। কোম্পানিটি ১৯৭০-এর দশকে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এক সময় পুরো আমেরিকার জন্য অ্যামোক্সিসিলিন তৈরি করত।

২০০২ সালে পেটেন্টের মেয়াদ শেষ হলে, প্রতিষ্ঠানটি জেনেরিক ওষুধ তৈরি শুরু করে। তখন বিদেশি কমদামি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে তারা দেউলিয়া হয়।

চীনা ওষুধের ওপর আমেরিকার নির্ভরতা নতুন বিষয় নয়। ২০১৯ সালেই একটি সরকারি কমিশন কংগ্রেসকে এ নিয়ে সতর্ক করেছিল। ২০২১ সালে জ্যাকসন কারখানা কেনার সময় জাতীয় নিরাপত্তা ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা

ট্রাম্প বলেছেন, ওষুধ কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রেই উৎপাদন করতে হবে, নাহলে ‘শুল্কের দেয়াল’ পেরোতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটি তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধের ৭২ শতাংশ আমদানি করে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেনেরিক ওষুধের মতো কম মুনাফার খাতে শুধু শুল্ক আরোপ করে উৎপাদন আমেরিকায় ফেরানো কঠিন। বরং এতে খরচ বাড়বে এবং ঘাটতি আরও বাড়তে পারে।

চীনের আধিপত্যের পেছনে মূল কারণ হলো সস্তায় উৎপাদন, শিথিল পরিবেশ বিধি এবং রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা। অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মূল কেমিক্যাল (কেএসএম) উৎপাদনে চীন বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়।

চীন ও ভারত মিলে এপিআই তৈরির ৮২ শতাংশ লাইসেন্স যুক্তরাষ্ট্রে জমা দেয়। ২০২১ সালের পর চীনের অংশ ৩২ শতাংশে পৌঁছেছে।

২০০০ সাল থেকেই চীনের সরকার ফার্মা খাতে ভর্তুকি ও নীতি সহায়তা দিয়েছে, যার ফলে সস্তায় ও ভালো মানে উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে কঠোর পরিবেশনীতি রয়েছে, যা উৎপাদনের খরচ বাড়ায়।

এমনকি ভারতও তাদের এপিআই’র ৭০ শতাংশ আমদানি করে চীন থেকে।

চীনের কৌশলগত লক্ষ্য

২০১৫ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ‘মেইড ইন চায়না ২০২৫’ নীতিমালার আওতায় জৈবপ্রযুক্তি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম খাতকে উন্নয়নের জন্য চিহ্নিত করেন। ২০২০ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘চীনকে এমন জায়গায় নিতে হবে, যাতে অন্য দেশ চীনের ওপর নির্ভর করে এবং চীন তাদের কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ করে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে।’

২০১৫ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার স্বাক্ষরিত ‘মেড ইন চায়না ২০২৫’ শিল্প কৌশল উন্মোচন করেন। ছবি- সংগৃহীত

২০২১ সালে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা কমিশন এপিআই’কে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় একটি বড় শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে।

জেনেরিক খাতে বিনিয়োগ অনিশ্চিত

অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও জনসন অ্যান্ড জনসনসহ কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করছে। তবে তারা মূলত পেটেন্টযুক্ত ওষুধ তৈরি করে। জেনেরিক ওষুধের মুনাফা কম হওয়ায় তারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে অনিশ্চিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেনেরিক খাতে শুল্ক আরোপ করলে এর দায় গিয়ে পড়বে সাধারণ রোগীর ওপর। কারণ, এসব ওষুধ মূল ওষুধের তুলনায় ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত সস্তা, দরিদ্র ও বীমাহীন মানুষ মূলত এসব ওষুধের ওপর নির্ভর করে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলে বছরে আমদানিকৃত ওষুধের খরচ ৫০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বাড়বে এবং দাম ১২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে যাবে। এছাড়া, একটি ক্যানসারের জেনেরিক ওষুধে শুল্ক বসালে ২৪ সপ্তাহের খরচ ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

বিকল্প প্রণোদনা জরুরি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু শুল্ক নয়—সরকারি প্রণোদনা, গবেষণা সহায়তা, ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। কারণ, ওষুধের ঘাটতি মানুষের জীবন-মৃত্যুর বিষয়, যেমনটা ঘটে না যদি কোনো সাধারণ পণ্যের অভাব হয়।

ইউএসপি’র সিইও পিয়েরভিনচেঞ্জি বলেন, ‘একটি ওষুধ যদি ঘাটতিতে পড়ে এবং একটি শিশু ক্যানসারের চিকিৎসা না পায়, সেটি একটা ভয়াবহ বিপর্যয়। সে তুলনায় আপনি যদি আপনার প্রিয় কেচাপ (আচার) দোকানে না পান, আপনি হয়তো বিরক্ত হবেন, কিন্তু আপনার জীবন বিপন্ন হবে না।’

Link copied!