ঢাকা রবিবার, ০৮ জুন, ২০২৫

নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দিলেন ইলন মাস্ক

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৫, ০৬:৫৮ পিএম
ইলন মাস্ক। ছবি- সংগৃহীত

টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বড় ধরনের এক পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধের জেরে মাস্ক একটি নতুন রাজনৈতিক দল, ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠনের প্রস্তাব করেছেন।

গত বছর ট্রাম্পকে জোরালোভাবে সমর্থন জানানো এবং গত মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পপন্থী একটি রাজনৈতিক গ্রুপকে ২৬০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান দেওয়ার পর, এবার মাস্ক তার অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। 

এমনকি চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প তাকে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি’ (ডজ)-এর সহ-প্রধান হিসেবেও নিয়োগ দিয়েছিলেন, যার কাজ ছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অকার্যকর ব্যয় কমানো এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসান ঘটানো।

তবে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্য বিবাদের কারণে ইলন মাস্ক এই সব সম্পর্ক থেকে সরে এসেছেন। এই পরিস্থিতির মধ্যেই মাস্ক তার এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ২২ কোটি অনুসারীর মধ্যে একটি জরিপ চালান। 

তিনি তার পোস্টে লেখেন—‘আমেরিকায় কি এমন একটি নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করার সময় এসেছে যা আসলে মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা ৮০ ভাগ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবে?’ এই জরিপে ৫৬ লাখের বেশি সাড়া পড়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই মাস্কের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন।

মাস্ক পরে আরেকটি পোস্টে বলেন, ‘মানুষ তাদের মতামত দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন।’ এ সময় তিনি দলের নাম প্রস্তাব করেন ‘আমেরিকা পার্টি’।

মাস্ক সম্প্রতি ট্রাম্পের ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের কর ও ব্যয় বিলকে ‘জঘন্য ও বেহায়াপনা’ বলে সমালোচনা করেন, যা তাদের ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। 

জবাবে ট্রাম্প হুমকি দেন, স্পেসএক্স ও টেসলাসহ মাস্কের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সব ধরনের ফেডারেল চুক্তি বাতিল করে দেবেন।

এই বিরোধ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। মাস্ক সেখানে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জেফরি অ্যাপস্টেইনের কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনেন এবং তার অভিশংসনের দাবিও জানান। 

অ্যাপস্টেইন ছিলেন এক বিতর্কিত অর্থলোভী ব্যক্তি, যিনি শিশু পাচারের অভিযোগে দণ্ডিত হয়েছিলেন এবং ২০১৯ সালে কারাগারে রহস্যজনকভাবে তার মৃত্যু হয়।

এই বিরোধ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, মাস্ক রাজনৈতিকভাবে নতুন দিকে ঝুঁকছেন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ বলেছেন, ‘এই দুটি বিশাল ইগো একসঙ্গে থাকার জন্য জন্মায়নি। এই বিচ্ছেদ বহু আগেই হওয়া উচিত ছিল।’

জানা গেছে, ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে বিরোধের প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারেও। বিরোধ প্রকাশ্য হওয়ার পর টেসলার শেয়ার ১৪ শতাংশ এবং ট্রাম্প মিডিয়ার শেয়ার ৮ শতাংশ পড়ে যায় বলে সংবাদমাধ্যমগুলো খবর প্রকাশ করেছে। 

তবে শেয়ার পড়ে যাওয়ার পরদিনই কোম্পানিগুলো কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের দ্বন্দ্ব নিয়ে রসিকতা করেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। তিনি ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে ‘শান্তিচুক্তি’ করিয়ে দিতে প্রস্তুত। 

এক্সে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ডি এবং ই–এর মধ্যে শান্তি চুক্তির জন্য আমরা সহায়তা করতে প্রস্তুত। পারিশ্রমিক হিসেবে স্টারলিঙ্কের শেয়ার নিলেই চলবে। মারামারি কোরো না বন্ধুরা!’