রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৫, ০৮:৫৩ পিএম

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ

মার্কিনিদের সঙ্গে বাড়ছে ঘনিষ্ঠতা, চীন-ইরান ইস্যুতে কঠিন পরীক্ষায় পাকিস্তান

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৫, ০৮:৫৩ পিএম

৪ দেশের সরকার প্রধান। ছবি- এআইয়ের সহায়তায় তৈরি

৪ দেশের সরকার প্রধান। ছবি- এআইয়ের সহায়তায় তৈরি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক বরফ গলছে পাকিস্তানের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের হোয়াইট হাউসে দুই ঘণ্টারও বেশি সময়ব্যাপী বৈঠক নতুন করে আলোচনায় এনেছে দুই দেশের দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের সম্পর্ক।

এমন একসময় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো, যখন ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যে বিগত কয়েক বছর ধরে অবিশ্বাস ও উত্তেজনার সম্পর্ক বিরাজ করছিল। বিশেষ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ইতিহাসের অন্যতম ‘নিম্ন পর্যায়ে’ ছিল বলে মুনির নিজেই উল্লেখ করেছেন।

তবে এই নতুন ঘনিষ্ঠতার আড়ালে আরও বড় পরীক্ষায় পড়তে হতে পারে পাকিস্তানকে। চীনের বিপুল বিনিয়োগ, সামরিক নির্ভরতা এবং ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের কৌশলগত অবস্থান আরও স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে।

দুই মহাশক্তির মধ্যে নিজেদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখবে ইসলামাবাদ? এই প্রশ্নের উত্তরই নির্ধারণ করবে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক গতিপথ।

নতুন কূটনৈতিক উষ্ণতা

বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন, ‘পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করে আমি সম্মানিত বোধ করছি।’ 

যদিও হোয়াইট হাউস থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি এবং বৈঠকে মিডিয়ার প্রবেশাধিকার ছিল না। যা ইঙ্গিত দেয়, দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আসিম মুনির এই বৈঠকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, খনিজ ও খনিজসম্পদ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জ্বালানি, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং উদীয়মান প্রযুক্তি নিয়ে সহযোগিতার প্রসঙ্গ তোলেন।

এ ছাড়াও সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান চারদিনের সীমান্ত সংঘাতের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতার ভূমিকাকে মুনির ‘গভীর কৃতজ্ঞতা’ জানিয়েছেন।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, তা হলো চলমান ইসরায়েল-ইরান সামরিক উত্তেজনা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘পাকিস্তানিরা ইরানকে খুব ভালো জানে, অধিকাংশের চেয়ে ভালো। এবং তারা মোটেই খুশি নয়।’

বৈঠকের পেছনের কূটনৈতিক বার্তা

ওয়াশিংটনের থিংক ট্যাঙ্ক ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বৈঠকের পেছনে ওয়াশিংটনের বিশেষ আগ্রহ ছিল পাকিস্তানের অবস্থান জানার বিষয়ে। বিশেষ করে চলমান ইরান-ইসরায়েল পরিস্থিতিতে।

মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো মারভিন ওয়েইনবাউম মনে করেন, ‘যেহেতু বৈঠকে মিডিয়ার প্রবেশাধিকার ছিল না, এটি বোঝায়—উভয় পক্ষই আলোচনার কিছু বিষয় গোপন রাখতে চেয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র জানতে চেয়েছে, চলমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তান কী ভূমিকা নিতে পারে।’

কূটনৈতিক ডিনারে মুনিরের বার্তা

বুধবার (১৮ জুন) সন্ধ্যায় পাকিস্তান দূতাবাসে অনুষ্ঠিত নৈশভোজেও মুনিরের বার্তা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে উপস্থিত নীতিনির্ধারক, থিংক ট্যাঙ্ক গবেষক এবং কূটনীতিকদের সঙ্গে মুনির স্পষ্ট করেন। বিগত বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ পর্যায়ে ছিল, তবে এবার তিনি আশাবাদী যে সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন দ্বার খুলছে।

তিনি আরও জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্র জানে, ইরান নিয়ে কী করতে হবে, তবে পাকিস্তানের অবস্থান সবসময় কূটনৈতিক এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে।’

পাকিস্তানের ইতিহাস ও সম্পর্কের টানাপোড়েন

পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় এবং ২০০১ সালের ৯/১১ পরবর্তী মার্কিন অভিযানে পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদান করলেও বারবার ‘দ্বিচারিতা’ এবং ‘অবিশ্বস্ত অংশীদার’ আখ্যায়িত করেছে।

পাকিস্তানও অভিযোগ করে বলেছে, তারা অনেক ক্ষয়ক্ষতি সহ্য করেও ‘আরও কিছু করতে হবে’ এই চাহিদার মুখোমুখি হয়।

চীন, কৌশলগত বড় চ্যালেঞ্জ 

বর্তমানে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ও সামরিক অংশীদার চীন। দুই দেশের মধ্যে ৬২ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প রয়েছে এবং পাকিস্তানের ৮০% সামরিক সরঞ্জাম চীন থেকে আসে।

বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাতে চীনা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।

এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা পাকিস্তানকে কৌশলগত ভারসাম্যের বড় পরীক্ষা দিচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. মুহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদে উভয় দেশের (যুক্তরাষ্ট্র ও চীন) সঙ্গে সম্পর্ক পাকিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামাবাদ চাইবে  কোনো শিবিরে পড়া নয় বরং উভয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা।’

ইরান সংকট, পাকিস্তানের কূটনৈতিক ভারসাম্য

বর্তমানে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা আরেক বড় চ্যালেঞ্জ। পাকিস্তান এরই মধ্যেই ইরানের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে মুনির তেহরান সফরে যান এবং ইরানের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যিনি সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।

অভ্যন্তরীণ দিক থেকেও বিষয়টি স্পর্শকাতর। পাকিস্তানে ১৫-২০ শতাংশ শিয়া জনগোষ্ঠী রয়েছে, যারা ইরানের ধর্মীয় নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাহার খান বলেন, ‘পাকিস্তানের স্বার্থে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেওয়া সবচেয়ে উপযুক্ত পথ। পশ্চিম সীমান্তে আরেকটি বিরোধ এড়ানো এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

কোন পথে যাবে ইসলামাবাদ?

এখন প্রশ্ন হলো, ইসলামাবাদ কেমন কৌশল গ্রহণ করবে? বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ কাজে লাগাতে চাইবে; অন্যদিকে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং ইরান ইস্যুতে নিজেদের নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখবে।

এই ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ হবে না। তবে একদিক থেকে বলা যায় ইসলামাবাদ এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ চাহিদাসম্পন্ন অবস্থানে রয়েছে। কারণ, উভয় পক্ষই পাকিস্তানকে নিজেদের পাশে চায়। ফলে, সাবলীল কূটনৈতিক কৌশল গ্রহণ করে ইসলামাবাদ নিজস্ব স্বার্থই এগিয়ে নিতে পারে।

Link copied!