স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বা চ্যাটজিপিটির ওপর নির্ভর করা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তা তুলে ধরেছে ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা।
মার্কিন মেডিকেল জার্নাল ‘অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিন’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, চ্যাটজিপিটির পরামর্শে খাবার লবণ পরিবর্তন করে তিনি ‘ব্রোমিজম’ বা ব্রোমাইড বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই ব্যক্তি সাধারণ খাবার লবণের (সোডিয়াম ক্লোরাইড) স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। বিকল্প জানতে চাইলে চ্যাটজিপিটি তাকে সোডিয়াম ব্রোমাইড ব্যবহারের পরামর্শ দেয়।
এরপর তিনি প্রায় তিন মাস ধরে এই রাসায়নিকটি গ্রহণ করেন, যা বর্তমানে মূলত পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যদিও বিংশ শতকের শুরুতে এটি ঘুমের ওষুধ হিসেবে প্রচলিত ছিল।
ফলে তার মধ্যে গুরুতর শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। হাসপাতালে ভর্তির সময় তিনি বিশ্বাস করছিলেন যে তার প্রতিবেশী তাকে বিষ দিয়েছে, এমনকি তৃষ্ণার্ত থাকা সত্ত্বেও পানি পান করতে ভয় পাচ্ছিলেন। তাকে মানসিক রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সুস্থ হওয়ার পরও তার মুখে ব্রণ, অস্বাভাবিক তৃষ্ণা ও অনিদ্রার মতো লক্ষণগুলো রয়ে যায়, যা ব্রোমিজমের প্রধান উপসর্গ।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই ঘটনাকে ‘এআই দ্বারা সৃষ্ট প্রতিরোধযোগ্য স্বাস্থ্যঝুঁকির’ একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তারা জানান, একজন চিকিৎসক এমন পরামর্শ দেওয়ার আগে রোগীর অবস্থা ও কারণ জানতে চাইতেন, কিন্তু চ্যাটজিপিটি কোনো সতর্কতা ছাড়াই সরাসরি এই বিপজ্জনক পরামর্শ দেয়। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এআই অ্যাপগুলো প্রায়ই অসম্পূর্ণ বা ভুল তথ্য দেয় এবং মানুষের মতো পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে পারে না।
ওপেনএআই ও চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ঘটনাটি তাদের পুরনো সংস্করণে ঘটেছিল এবং নতুন সংস্করণ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে আরও সতর্ক। তবে তারা স্পষ্টভাবে বলেছে, চ্যাটজিপিটি রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসার জন্য তৈরি নয় এবং এটি কখনোই পেশাদার চিকিৎসকের বিকল্প হতে পারে না।
এই ঘটনাটি স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শের জন্য যাচাইবিহীন এআই ব্যবহারের বিপদ সম্পর্কে একটি জোরালো সতর্কবার্তা দিচ্ছে এবং পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শের গুরুত্বকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান