ইসরায়েলে সফলতার সঙ্গে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইয়েমেন। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) আল-মাসিরাহ টিভিতে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি হামলার কথা নিশ্চিত করেন। বলেন, ‘‘আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট বৃহস্পতিবার একটি ‘প্যালেস্টাইন-২’ সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে দখলকৃত নেগেভ অঞ্চলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে।’’
বিবৃতিতে এই অভিযানকে সফল বলে আখ্যায়িত করে ‘ইসরায়েলি’ কর্মকাণ্ড এবং ইয়েমেনি ভূখণ্ডে আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, হামলার কারণে অনেক ‘ইসরায়েলি’ বসতি স্থাপনকারী আশ্রয়কেন্দ্রে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সারি আরও জানান, তাদের ড্রোন ইউনিট দুটি পৃথক হামলা চালিয়েছে— প্রথমটি ছিল দুটি ড্রোন ব্যবহার করে এলাত (উম্ম আল-রাশরাশ) সংলগ্ন রামন বিমানবন্দরে এবং দ্বিতীয়টি একটি ড্রোন দিয়ে নেগেভের আরেকটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে।
এর আগে হুথি আনসারুল্লাহর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন, ইয়েমেনের পাল্টা হামলা ‘ইসরায়েলি’-দখলকৃত ভূখণ্ডের দখলদার বাহিনী এবং চরমপন্থি বসতি স্থাপনকারীদের জন্য আর কোনো স্থান নিরাপদ রাখবে না। বৃহস্পতিবার হুথি-নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনি গণমাধ্যম সম্পর্ক পরিচালক আবদুল্লাহ আল-আহনুমি বলেন, ‘রাজধানী সানার তাহরির স্কোয়ারে নাগরিকদের লক্ষ্য করে চালানো জায়নিস্ট শাসনের ‘ভয়াবহ অপরাধ’ কোনোভাবেই জবাবহীন থাকবে না।’
ইয়েমেনের পাল্টা হামলায় সামরিক ঘাঁটি, বিমানবন্দর, বসতি স্থাপনকারীদের সমাবেশ ও অন্যান্য সংবেদনশীল স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু হবে বলে জানান তিনি।
এই বিবৃতিটি এসেছে ‘ইসরায়েলি’ যুদ্ধবিমান ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও উত্তরাঞ্চলীয় আল-জওফ প্রদেশে একাধিক বিমান হামলা চালানোর একদিন পর। ওই হামলায় প্রায় তিন ডজন বেসামরিক মানুষ নিহত এবং ১৩০ জনের বেশি আহত হন।
ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বুধবারের হামলায় সানার তাহরির পাড়ার বাড়িঘর, শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৬০তম সড়কের একটি চিকিৎসাকেন্দ্র এবং জওফ প্রদেশের রাজধানী হাজমের সরকারি ভবনকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। দেশটির নাগরিক সুরক্ষা দল জানিয়েছে, তারা হামলার পর সৃষ্ট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা এবং ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছিল।
এদিকে ইয়েমেনে ইসরায়েলের ক্রমাগত বিমান হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, বিশেষ করে সর্বশেষ হামলায় তাদের একটি কার্যালয়ের কাছে থাকা স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু হওয়ার পর। এই আক্রমণটি হয়েছে ২৮ আগস্ট ‘ইসরায়েলি’ বিমান হামলায় সানায় ইয়েমেনের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ গালেব নাসের আল-রাহাউই ও আরও কয়েকজন মন্ত্রী নিহত হওয়ার কয়েক দিন পর।
এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় গণহত্যার মতো আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর ইয়েমেনি বাহিনী কৌশলগত সামুদ্রিক অবরোধ চালু করে। এর উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলের কাছে সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছানো বন্ধ করা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকট মোকাবিলায় আহ্বান জানানো।
একই সময়ে তারা ‘ইসরায়েল’-অধিকৃত অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়, যা গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থনেরই প্রকাশ। ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ‘ইসরায়েল’ গাজায় স্থল ও আকাশপথে হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত তারা তাদের অভিযান চালিয়ে যাবে।