ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাটজ নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার এক দিনেরও কম সময় পর ঘোষণা দিয়েছেন যে, অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির পর ইসরায়েল আবারও গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করবে। তার এই ঘোষণা নতুন সম্মত যুদ্ধবিরতি কাঠামোর প্রকাশ্য লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) কাটজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে বলেছেন, ‘জিম্মিদের মুক্তির মাধ্যমে চুক্তির প্রথম ধাপ শেষ হলে, ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করার জন্য তাদের সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার পর ইসরায়েলের বড় চ্যালেঞ্জ হবে গাজায় হামাসের সব সন্ত্রাসী সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা- সরাসরি আইডিএফের মাধ্যমে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে এ কাজটি সম্পন্ন করা হবে।’
কাটজ-এর মতে, গাজাকে নিরস্ত্রীকরণ এবং হামাসকে অস্ত্র থেকে নিরপেক্ষ করার নীতি বাস্তবায়নই এই চুক্তির প্রধান উদ্দেশ্য। এ পোস্টে তিনি আইডিএফ বাহিনীকে নতুন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।
এই ঘোষণা এমন এক সময় এল যখন- কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সংগঠিত হয়েছে।
এ যুদ্ধবিরতির লক্ষ্য গাজায় দুই বছর ধরে চলমান ধ্বংসযজ্ঞ ও রক্তপাত বন্ধ করা।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, কাটজের এই বক্তব্য স্পষ্ট করে যে, ইসরায়েল এই যুদ্ধবিরতিকে স্থায়ী শান্তির পদক্ষেপ হিসেবে নয়, বরং সামরিক আক্রমণ পুনরায় শুরু করার আগে একটি অস্থায়ী বিরতি হিসেবে দেখছে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, কাটজের এমন বক্তব্য আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের আশঙ্কা তৈরি করেছে। কারণ, যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকা অবস্থায় নতুন অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া এবং পুনরায় বৃহৎ আকারের হামলার ঘোষণা দেওয়া আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি।
গাজার বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ। ইসরায়েলের টানা আক্রমণে এখন পর্যন্ত ৬৭ সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
এ ছাড়াও প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। হাসপাতাল, স্কুল ও আশ্রয়কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় গাজায় এখন তীব্র খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট বিরাজ করছে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ) দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা গণহত্যা মামলার শুনানি অব্যাহত রেখেছে, যেখানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বেসামরিক জনগণকে ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা, অনাহার সৃষ্টি এবং গাজার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অবকাঠামো ধ্বংস করার প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, কাটজের এই বক্তব্য স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরায়েল স্থায়ী শান্তি নয়, বরং সামরিক আধিপত্য বজায় রাখাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে উঠছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন