ঢাকা শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫

ইউক্রেনে টমাহক মিসাইল

কিউবা বিপর্যয়ের ছায়া কি ঘনিয়ে আসছে?

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৫, ০৩:৪৭ পিএম
প্রতীকী ছবি।

দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ লক্ষ্যে দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দেখাও করেন তিনি। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। তাই রাশিয়াকে বাগে আনতে এবার ইউক্রেনের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম দূরপাল্লার টমাহক মিসাইল তুলে দিতে চলেছে ওয়াশিংটন। তার আগে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ফোনে কথা বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) হোয়াইট হাউজে দেখা করবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে। সেখানে সিদ্ধান্ত হতে পারে ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দু’দেশের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধের ইন্ধন দিচ্ছেন। যার ফলে গোটা বিশ্ব ফের প্রত্যক্ষ করতে পারে কিউবা বিপর্যয়ের ভয়ানক সেই দিনগুলি। 

টমাহক মিসাইলের বিশেষত্ব কী ?

আমেরিকার তৈরি ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র জাহাজ বা সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপ করা হয়। অত্যাধুনিক এই ক্ষেপণাস্ত্রটির বিশেষত্ব হল , এটি খুব বেশি উচ্চতায় ওড়ে না। তাই ব়্যাডারেও ধরা পড়ে না। শুধু তাই নয়, এটি সাধরাণ এবং পারমাণবিক উভয় মিসাইল হিসাবেই ব্যবহার করা যেতে পারে।

এক একটি টমাহক মিসাইলের ওজন প্রায় ১.৫ টন এবং একসঙ্গে ৪৫৪ কেজি বিস্ফোরক বহন করতে সক্ষম। প্রতিটি মিসাইলের দাম প্রায় ১.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে প্রথম এই টমাহক মিসাইল ব্যবহৃত হয়। পরে ইরাক, আফগানিস্তান, সোমালিয়া, লিবিয়া এবং সিরিয়ার যুদ্ধেও এটির ব্যবহার হয়। সাম্প্রতিক সময়ে হুথিদের উপর হামলা চালাতে এবং ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটিগুলিতে হামলা চালাতে এই ক্ষেপণাস্ত্রটির ব্যবহার করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্প যদি ইউক্রেনের হাতে টমাহক মিসাইল তুলে দেয়, তাহলে ১৯৬২-র কিউবা বিপর্যয়ের ভয়ানক সেই দিনগুলি ফের প্রত্যক্ষ করতে পারে গোটা বিশ্ব, যা একেবারেই সুখকর নয়। রাশিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং রুশ ফেডারেশনের নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, ‘আমেরিকা ইউক্রেনের হাতে টমাহক মিসাইল তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। আমাদের সকলের জন্য এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টই।’

যদিও ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমেরিকা এই টমাহক মিসাইল সরাসরি ইউক্রেনকে বিক্রি করবে না। তারা ন্যাটোর হাতে তুলে দেবে। ন্যাটো তা ইউক্রেনকে দিতে পারে।

উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে স্নায়ু যুদ্ধের সময় আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে একটি বড় সংঘাতের ঘটনা ঘটে। কিউবায় গোপনে সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমাণবিক অস্ত্র মজুত করতে থাকে। তাতেই অস্বস্তিতে পড়ে আমেরিকা। কারণ, কিউবা আমেরিকার খুব কাছে অবস্থিত এবং তারা আশঙ্কা করছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন সেগুলি দিয়ে তাদের উপর হামলা চালাতে পারে।

এই ঘটনার পরই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি পালটা কিউবার চারপাশে মার্কিন নৌসেনা পাঠায়। যুদ্ধের একদম কাছাকাছি পৌঁছে যায় দুই দেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দু’পক্ষই শান্তিপূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবা থেকে পারমাণবিক অস্ত্রগুলি প্রত্যাহার করে নেয়। অন্যদিকে, আমেরিকাও প্রতিশ্রুতি দেয় যে তারা কিউবা আক্রমণ করবে না। গোটা ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ওই সময় বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত দু’দেশের সংঘাত হয়নি। এই ঘটনাটিই ‘কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস’ নামে পরিচিত।

বর্তমানে ইউক্রেনে টমাহক মিসাইল পাঠানোর সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে আবারও উত্তেজনা বাড়ছে। ফলে কিউবার মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।