কম্বোডিয়া অভিযোগ করেছে, থাইল্যান্ড তাদের যৌথ সীমান্ত এলাকায় রাতের অন্ধকারে ‘ভূতের আওয়াজ’ বাজিয়ে একধরনের মানসিক যুদ্ধ শুরু করেছে। দেশটির সিনেট প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন এই অভিযোগ তুলেছেন এবং বিষয়টি জাতিসংঘে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।
হুন সেন জানান, কম্বোডিয়ার মানবাধিকার কমিশন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্কের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১০ অক্টোবর থেকে সীমান্তের কাছে উচ্চমাত্রার শব্দ বাজানো হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের এসব শব্দের মধ্যে রয়েছে ভূতের আর্তনাদ, শিশুদের কান্না, কুকুরের হুক্কাহুয়া, শিকলের ঝনঝনানি ও হেলিকপ্টারের গর্জন। এসব শব্দ রাতভর বাজানো হচ্ছে, যা সীমান্তের আশপাশের বাসিন্দাদের ঘুম, মানসিক স্থিরতা ও শারীরিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এই তীব্র ও কটু শব্দগুলো দীর্ঘ সময় ধরে বাজানো হয়, যা নারী, শিশু, প্রবীণ, অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে আতঙ্ক ও শারীরিক অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। এটি মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।
হুন সেন জানান, তিনি বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আহমাদ জাহিদ হামিদির সঙ্গে কথা বলেছেন এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন গত জুলাই মাসে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সংঘর্ষ বন্ধে মধ্যস্থতার জন্য। তবে তিনি বলেন, সীমান্তের পরিস্থিতি এখনো উত্তেজনাপূর্ণ।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, শক্তিশালী মাইক ব্যবহার করে উচ্চশব্দ প্রয়োগ একধরনের মানসিক ভয় দেখানোর কৌশল। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তে একে অপরের দিকে মাইক তাক করে এভাবে শব্দ প্রয়োগের লড়াই বহু বছর ধরে চলেছে।
কম্বোডিয়ার শিশু অধিকারবিষয়ক একটি সংস্থা জানিয়েছে, এ ধরনের ভয়ংকর শব্দ শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যে গভীর প্রভাব ফেলছে—অনেক শিশু দুঃস্বপ্ন দেখছে, রাতে আতঙ্কে ঘুম ভাঙছে, এমনকি স্কুলে যেতেও ভয় পাচ্ছে। সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ইয়ান লি বলেন, এই শব্দ শুধু শিশুদের ঘুমই নষ্ট করছে না, শিক্ষার মনোযোগও নষ্ট করছে।
এদিকে থাই নাগরিক ও সীমান্ত রক্ষাকারী হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিতি লাভ করা ইনফ্লুয়েন্সার কান্নাওয়াত পংপাইবুলওয়েচ দাবি করেছেন, তিনি থাই সেনাবাহিনীর অনুমতিতে এই শব্দ সম্প্রচারের দায় স্বীকার করছেন। তিনি জানান, এ ধরনের শব্দ প্রয়োগের উদ্দেশ্য হলো, থাই ভূখণ্ডে প্রবেশ করা কম্বোডিয়ার বসতিগুলোকে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুলাই মাসে সীমান্তে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে পাঁচ দিনব্যাপী সংঘর্ষে প্রায় ৪০ জন নিহত হয় এবং লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। পরে মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় গত ২৮ জুলাই যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও এখন আবার এই ‘শব্দযুদ্ধ’ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা নতুন করে বাড়িয়ে তুলেছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন