যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী বিদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য আরও কঠোর নিয়ম চালুর প্রস্তাব করেছে দেশটির শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা দপ্তর (সিবিপি)। প্রস্তাবটি কার্যকর হলে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৪২টি দেশের নাগরিকদের গত পাঁচ বছরের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের তথ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য জমা দিতে হবে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় ফেডারেল রেজিস্টার–এ প্রকাশিত নথিতে সিবিপি জানায়, ভবিষ্যতে ভ্রমণ অনুমোদনের আবেদনকারীদের কাছ থেকে আরও বিস্তৃত ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হতে পারে। সামাজিক মাধ্যমের হিসাব ছাড়াও গত ১০ বছরের ই-মেইল ঠিকানা, পরিবারের সদস্যদের নাম, জন্মতারিখ, জন্মস্থান ও ঠিকানার মতো ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে হতে পারে।
এই নিয়ম মূলত ভিসা মওকুফ কর্মসূচির (ভিসা ওয়াবার প্রোগ্রাম) আওতাভুক্ত ৪২ দেশের নাগরিকদের জন্য। এসব দেশের নাগরিকেরা এখন ইলেকট্রনিক সিস্টেম ফর ট্রাভেল অথরাইজেশন (ইএসটিএ) ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য ভিসা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারেন।
বাংলাদেশ কি এই তালিকায়?
বর্তমানে বাংলাদেশ ভিসা মওকুফ কর্মসূচিভুক্ত কোনো দেশ নয়। ফলে নতুন প্রস্তাব কার্যকর হলেও বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের ওপর তা সরাসরি প্রযোজ্য হবে না। তবে বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে সব ধরনের ভিসার ক্ষেত্রেই ডিজিটাল নজরদারি বাড়াচ্ছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে অন্যান্য দেশের ভ্রমণকারীরাও বাড়তি তথ্য দেওয়ার চাপে পড়তে পারেন।
এর আগে মার্কিন সরকার এইচ–১বি, শিক্ষার্থী ও গবেষক ভিসার ক্ষেত্রে সামাজিকমাধ্যম যাচাই বাধ্যতামূলক করেছে।
শিল্পখাতের আপত্তি ও উদ্বেগ
প্রস্তাবিত নীতির বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ ও পর্যটনশিল্প। গত নভেম্বর মাসে ২০টির বেশি সংগঠনের একটি জোট চিঠি দিয়ে জানায়, এমন কঠোর নিয়মে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন। বিশেষ করে ফুটবল বিশ্বকাপের মতো বড় ইভেন্টে যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু আয়োজক, এতে পর্যটন খাতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা রয়েছে।
একজন শীর্ষ পর্যটন কর্মকর্তা বলেন, সিবিপি এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনাও করেনি। তিনি প্রক্রিয়াটিকে যাত্রী যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ‘গুরুতর বাড়াবাড়ি’ বলে মন্তব্য করেছেন।
‘বাকস্বাধীনতার জন্য হুমকি’
ডিজিটাল অধিকার সংগঠন ইলেক্ট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের আইনজীবী সোফিয়া কোপ বলেন, বাধ্যতামূলক সামাজিক মাধ্যম নজরদারি নাগরিক স্বাধীনতার জন্য বড় হুমকি। তার মতে, এই পদ্ধতি সন্ত্রাসবাদ দমনে কার্যকর প্রমাণিত হয়নি, বরং সাধারণ মানুষের গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন করে।
চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্র ৮৫ হাজারের বেশি অভিবাসীর ভিসা বাতিল করেছে। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। প্রস্তাবটি নিয়ে মন্তব্য চাইলে সিবিপি তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন