পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সেনাবাহিনী কয়েক ডজন সৈনিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার (১০ আগস্ট) একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
২০২০ ও ২০২১ সালে পরপর দুটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে মালি চরম জিহাদি সহিংসতা এবং অস্থিরতার মুখে রয়েছে। এরই মধ্যে জান্তা সমালোচকদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন বাড়িয়ে তুলেছে।
মালির একটি নিরাপত্তা সূত্র জানায়, ‘তিন দিন আগে থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ জনকে আটক করা হয়েছে।’ সেনাবাহিনীর আরেকটি সূত্রও এই ‘অস্থিতিশীলতার প্রচেষ্টা’ নিশ্চিত করে জানায়, ‘প্রয়োজনীয় গ্রেপ্তার কার্যক্রম চলছে।’
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন জেনারেল আবাস ডেম্বেলে যিনি কেন্দ্রীয় মোপ্তি অঞ্চলের প্রাক্তন গভর্নর এবং সম্মানিত সামরিক কর্মকর্তা। তার ঘনিষ্ঠ একজন জানান, ‘রোববার ভোরে রাজধানী বামাকোর উপকণ্ঠে কাটিতে সৈন্যরা এসে তাকে গ্রেপ্তার করে। কেন তাকে আটক করা হয়েছে, তা জানানো হয়নি।’
জান্তা-সমর্থিত সংসদ ‘জাতীয় পরিবর্তন কাউন্সিল’-এর একজন সদস্য জানিয়েছেন, প্রায় ৫০ জন সৈন্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার ভাষায়, ‘তাদের লক্ষ্য ছিল জান্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা।’
দীর্ঘদিনের অস্থিরতা ও নতুন উত্তেজনা
২০১২ সাল থেকে মালি একাধিক সংকটে জর্জরিত। আল-কায়েদা ও ইসলামিক স্টেট-সংযুক্ত জঙ্গিরা দেশজুড়ে হামলা চালাচ্ছে, পাশাপাশি অপরাধ ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতাও তীব্র। অর্থনীতি চরম সংকটে রয়েছে।
অভ্যুত্থানের পর জান্তা ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং প্রাক্তন ঔপনিবেশিক প্রভাব থেকে মুক্তির আহ্বান জানায়, যেমনটি প্রতিবেশী নাইজার ও বুরকিনা ফাসোও করেছে। এরপর তারা রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে।
রাশিয়ার আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ ও এর উত্তরসূরী ‘আফ্রিকা কর্পস’-এর ভাড়াটে সৈন্যরা মালি সেনাবাহিনীকে জিহাদি ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সহায়তা দিচ্ছে।
তবুও নাইজার ও বুরকিনা ফাসোর মতো মালি এখনও জিহাদি হুমকি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। একইসঙ্গে মালি সেনা ও তাদের রুশ মিত্রদের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নৃশংসতার অভিযোগও উঠছে।
মালির সমাজবিজ্ঞানী ওমার মাইগা বলেন, এই সর্বশেষ গ্রেপ্তার অভিযান দেখায় যে ‘অফিসাররা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছেন এবং সেনাবাহিনীর মধ্যেও অসন্তোষ রয়েছে।’ তার মতে, কিছু সৈন্য রুশ ভাড়াটেদের বিশেষ সুবিধা এবং মালিয়ান সেনাদের অবমূল্যায়নে ক্ষুব্ধ।
ক্ষমতায় আঁকড়ে ধরা জান্তা
জুলাই মাসে সামরিক-নিযুক্ত আইনসভা একটি আইন পাস করে, যাতে জান্তা প্রধান জেনারেল আসিমি গোইতাকে পাঁচ বছরের প্রেসিডেন্টের মেয়াদ দেওয়া হয়, যা প্রয়োজনে বারবার নবায়নযোগ্য, এমনকি নির্বাচন ছাড়াই। অথচ প্রথমে সামরিক সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ২০২৪ সালের মার্চে বেসামরিক শাসনে ফিরে যাবে।