ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

এবার চীন-ভারত পানিযুদ্ধের শঙ্কা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২৫, ০৭:২২ পিএম
ভারতের অরুণাচল প্রদেশের সিয়াং জেলার সিয়াং নদীর একটি দৃশ্য। ছবি- সংগৃহীত

চীনের তিব্বতে নির্মাণাধীন মেগা বাঁধ ভারতের কৌশলগত পরিকল্পনায় সরাসরি প্রভাব ফেলছে। শুষ্ক মৌসুমে ইয়ারলুং জাংবো নদীর পানিপ্রবাহ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে নয়াদিল্লি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতের নিজস্ব জলাধার ও বাঁধ প্রকল্প ত্বরান্বিত করা হচ্ছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে চারটি সূত্র এবং সরকারি বিশ্লেষণ উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ভারতের লক্ষ্য এখন নদীর পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং চীনের পানিসম্পদ নিয়ন্ত্রণের সম্ভাব্য কৌশল প্রতিহত করা। আপার সিয়াং মাল্টিপারপাস স্টোরেজ বাঁধের নির্মাণ ত্বরান্বিত করা হচ্ছে, যা সম্পন্ন হলে দেশের বৃহত্তম বাঁধ হবে এবং শুষ্ক মৌসুমে গুয়াহাটিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরে পানির সরবরাহ বজায় রাখবে।

জানা গেছে, ২০০০ সালের দিকে ভারত সরকার তিব্বতের আংসি হিমবাহ থেকে নদীর জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা তৈরি করতে শুরু করে। এই হিমবাহ থেকে উৎপন্ন নদীর পানি চীন, ভারত ও বাংলাদেশের ভাটিতে ১০ কোটিরও বেশি মানুষের জীবিকা ও জীবনযাত্রার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত।

তবে সীমান্তবর্তী অরুণাচল প্রদেশে স্থানীয়দের তীব্র প্রতিবাদ ও নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, কোনো বাঁধ নির্মাণ হলে তাদের গ্রাম পানিতে তলিয়ে যেতে পারে এবং জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে।

ভারতের নিরাপত্তা ও পানি বিষয়ক সিনিয়র কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই এই বছরের জন্য একাধিক বৈঠক করেছেন। জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কার্যালয়ের আয়োজিত বৈঠকেও বিষয়টি উঠে এসেছে। এই উদ্যোগ মূলত চীনের আংশিক পানিবাহিত ক্ষমতার প্রভাব কমাতে এবং ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের জনগণকে সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে নেওয়া হয়েছে।

দেশটির বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ সংস্থা গত মে মাসে আপার সিয়াং মাল্টিপারপাস স্টোরেজ বাঁধের জন্য সশস্ত্র পুলিশ সুরক্ষা সরঞ্জাম স্থানান্তর করেছে। সম্পন্ন হলে এটি দেশের বৃহত্তম বাঁধ হবে। সিনিয়র ভারতীয় কর্মকর্তারা এই বছর প্রকল্পের নির্মাণ ত্বরান্বিত করতে বৈঠক করেছেন। জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কার্যালয়ও এ বিষয়ে বৈঠক আয়োজন করেছিল।

সরকারি বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চীনা বাঁধ বছরে ৪০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি সরাতে সক্ষম হবে। ভারতের নিজস্ব প্রকল্প না থাকলে গুয়াহাটিসহ পানিঘনিষ্ঠ শিল্প ও কৃষি অঞ্চলগুলোতে সরবরাহ ২৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। আপার সিয়াং বাঁধের ১৪ বিসিএম ধারণক্ষমতা এই হ্রাস কমাবে এবং শুষ্ক মৌসুমে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সরবরাহ বজায় রাখবে।

বাঁধের ন্যূনতম ড্রডাউন স্তরে থাকলে অতিরিক্ত পানি শোষণ সম্ভব হবে। ভারত অপ্রত্যাশিত জলোচ্ছ্বাসের জন্য বাঁধের ৩০ শতাংশ খালি রাখার পরিকল্পনা করছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, প্রকল্পগুলো পরিবেশ এবং নিরাপত্তার দিক থেকে বৈজ্ঞানিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তারা বলেন, ‘চীন আন্তঃসীমান্ত নদীর ব্যবহার নিয়ে দায়িত্বশীল এবং ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী যোগাযোগ বজায় রেখেছে।’

এ বিষয়ে ভারতের পানি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এনএইচপিসিও কোনো মন্তব্য করেননি।