ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নেপালে কারাগার থেকে পালিয়েছে ১৫ হাজার কয়েদি

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ০১:৩৭ পিএম
পালিয়ে যাওয়া এক কয়েদিকে গেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি- সংগৃহীত

নেপালে জেন-জি বিক্ষোভের মধ্যে দেশজুড়ে কারাগার থেকে পালিয়ে গেছে কমপক্ষে ১৫ হাজার কয়েদি। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছে ৩ কয়েদি। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগ করলে আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নেপালি সেনাবাহিনী দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে এবং বুধবার সকাল থেকে কারফিউ কার্যকর করে। এই অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে বন্দিরা বিভিন্ন কারাগারে দাঙ্গা ও সংঘর্ষের মাধ্যমে পালানোর চেষ্টা করে। এর ফলে দেশজুড়ে বহু কারাগারে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, প্রাণহানিও ঘটে।

‘দ্য রাইজিং নেপাল’ জানায়, মঙ্গলবার রাতে বাঁকে জেলার বৈজনাথ রুরাল মিউনিসিপালিটি-৩ এর নওবাস্তা সংশোধনাগারে বন্দিরা নিরাপত্তা কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশের গুলিতে পাঁচ কিশোর বন্দি নিহত এবং চারজন গুরুতর আহত হয়। কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্দিরা পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে এ সংঘর্ষ বাধে। সংশোধনাগারের ১৭৬ বন্দির মধ্যে ৭৬ জন পালিয়ে যায়। পাশাপাশি ওই অঞ্চলের আরেকটি কারাগার থেকে ১৪৯ জন বন্দি পালানোর তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

‘মাইরিপাবলিকা’পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে প্রায় ৭ হাজার বন্দি বিভিন্ন কারাগার থেকে পালিয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের সংখ্যা নিচের প্রধান কারাগারগুলোতে সবচেয়ে বেশি। দিল্লিবাজার কারাগার (১ হাজার ১০০), চিতওয়ান (৭০০), নাখু (১ হাজার ২০০), সুনসারির ঝুমকা (১ হাজার ৫৭৫), কাঞ্চনপুর (৪৫০), কৈলালী (৬১২), জলেশ্বর (৫৭৬), কাস্কি (৭৭৩), ডাং (১২৪), জুমলা (৩৬), সোলুখুম্বু (৮৬), গৌর (২৬০) ও বাঝাংসহ (৬৫) বেশ কয়েকটি কারাগার থেকে বন্দি পালানোর খবর পাওয়া গেছে।

আলাদা একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ নেপালের বাগমতী প্রদেশের সিন্ধুলিগাদি জেলা কারাগার থেকে ৪৩ জন নারীসহ মোট ৪৭১ জন বন্দি পালিয়ে গেছে। তারা ভেতরে আগুন লাগিয়ে, প্রধান ফটক ভেঙে বেরিয়ে যায়। পুলিশ সুপার লালধ্বজ সুবেদি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

‘দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট’ জানিয়েছে, নওয়ালপারাসি পশ্চিম জেলা কারাগার থেকে ৫০০ জনের বেশি বন্দি পালিয়ে গেছে। বন্দিরা আগুন ধরিয়ে দিয়ে মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে দিতে পালায়। এদিকে, কাঠমান্ডুর দিল্লিবাজার কারাগার থেকেও পালানোর চেষ্টা করে এক বন্দি। তবে তাকে স্থানীয় যুবকরা ধরে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে।

সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে। বিক্ষোভকারীদের দমন করতে পুলিশ কড়া পদক্ষেপ নেয়, এমনকি গুলিও চালায় বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

এই সহিংসতা গত কয়েক দশকের মধ্যে নেপালের সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্র তুলে ধরেছে। ভারত ও চীনের মাঝখানে অবস্থিত এই দরিদ্র হিমালয় রাষ্ট্রটি ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পর থেকেই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় ভুগছে। ২০০৮ সালের পর থেকে ১৭ বছরে দেশটিতে ইতোমধ্যে ১৩টি পৃথক সরকার ক্ষমতায় এসেছে, যার মধ্যে স্থিতিশীলতা খুবই অল্প সময়ের জন্য বজায় ছিল।