মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ শুক্রবার আলাস্কায় এক গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানো।
বৈঠকের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করেন পুতিন একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী। তবে এজন্য শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে হতে পারে।
ট্রাম্পের এই ‘ভূমি বিনিময়ের’ পরামর্শ কিয়েভসহ পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
ফক্স নিউজ রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এই বৈঠকের সফলতার সম্ভাবনা ৭৫ শতাংশ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি পুতিনকে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আরও আগ্রহী করেছে।
ট্রাম্পের মতে, পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সম্ভাব্য দ্বিতীয় বৈঠকটিই হবে চূড়ান্ত। তিনি বলেন, “দ্বিতীয় বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে, কারণ সেখানেই তারা একটি চুক্তি করবে। আমি ‘বিভাজন’ শব্দটি ব্যবহার করতে চাই না, তবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে এটি একটি খারাপ শব্দ নয়।”
ট্রাম্পের এই মন্তব্য মূলত ‘ভূমি বিনিময়ের’ দিকেই ইঙ্গিত করে, যার অর্থ হতে পারে রাশিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড হস্তান্তর করা। এর মধ্যে বর্তমানে রাশিয়ার দখলে না থাকা অঞ্চলও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
এদিকে, এই শীর্ষ বৈঠকের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে দেখা করেছেন। ডাউনিং স্ট্রিটে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা ট্রাম্প ও ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত ভিডিও কলের ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেন।
ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের মনোভাবে কিছুটা স্বস্তি পেলেও তার অপ্রত্যাশিত কর্মপন্থা নিয়ে সতর্ক রয়েছেন। তারা আশা করছেন, ট্রাম্প ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে পাশ কাটিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।
ব্রিটিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেলেনস্কি ও স্টারমার একটি টেকসই যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ‘সতর্ক আশাবাদ’ ব্যক্ত করেছেন, তবে তা নির্ভর করছে পুতিন শান্তি প্রতিষ্ঠায় কতটা আন্তরিক তার ওপর। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, ক্রেমলিন সহযোগিতায় ব্যর্থ হলে রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য তারা একটি নতুন প্যাকেজ তৈরি করছে।
বৈঠকের প্রেক্ষাপট ও প্রত্যাশা
রাশিয়ার অবস্থান: মস্কো চাইছে, এই বৈঠকটি কেবল ইউক্রেন কেন্দ্রিক না হয়ে মার্কিন-রাশিয়ান অর্থনৈতিক সহযোগিতা পুনরায় শুরু করার বিষয়েও আলোচনা হোক, যা রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল: ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, পুতিন যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হলে রাশিয়ার জন্য ‘খুব গুরুতর পরিণতি’ অপেক্ষা করছে, যা মূলত রাশিয়ার তেল রপ্তানির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধির একটি প্রচ্ছন্ন হুমকি।
বৈঠকের কাঠামো: আলাস্কায় স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হতে যাওয়া এই বৈঠকে প্রথমে ট্রাম্প ও পুতিন দোভাষীদের নিয়ে একান্তে কথা বলবেন। পরবর্তীতে এতে উভয় দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যোগ দেবেন। রুশ প্রতিনিধিদলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভ এবং অর্থমন্ত্রী আন্তন সিলুয়ানভ উপস্থিত থাকবেন।
এই শীর্ষ সম্মেলনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ট্রাম্পের ব্যক্তিগত কূটনীতির ওপর অগাধ আস্থা থাকলেও, পুতিনকে যুদ্ধ বন্ধে রাজি করানোর প্রক্রিয়াটি যে অত্যন্ত জটিল হবে, তা নিয়ে একমত প্রায় সব পক্ষই।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান