ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

অবশেষে অনাস্থা ভোটে টিকে গেলেন ফরাসি প্রধানমন্ত্রী

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ০৯:১৬ পিএম
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নু। ছবি- সংগৃহীত

অবশেষে সংসদে টিকে গেলেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নু। কয়েক মাস ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেই টানা দুটি আস্থা প্রস্তাবে জয় পেয়েছেন তিনি। নতুন সরকার গঠনের পরই এই ভোট ছিল তার জন্য প্রথম বড় পরীক্ষা। দুই বছরেরও কম সময়ে ফ্রান্সের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী লেকর্নু। 

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) অতি ডানপন্থি নেতা মেরিন লে পেনের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল র‌্যালি দল সংসদে লেকর্নুর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব তোলে।

আল-জাজিরা জানায়, তবে ৫৭৭ সদস্যের জাতীয় পরিষদে সেই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে মাত্র ১৪৪টি। তার কিছুক্ষণ আগে বামপন্থি জোট ফ্রান্স আনবোয়েডের অনাস্থা প্রস্তাবও ব্যর্থ হয়। অর্থাৎ ২৭১ জন আইনপ্রণেতার সমর্থন পেলেও সরকার পতনের জন্য প্রয়োজনীয় ২৮৯ ভোটের ঘাটতি থাকে ১৮টি।

মঙ্গলবার লেকর্নু ২০২৩ সালের বিতর্কিত পেনশন সংস্কার স্থগিতের ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়েই তিনি কিছুটা সমর্থন টানতে সক্ষম হন। মূলত বামপন্থি সমাজতান্ত্রিক দল (পিএস) সতর্ক করেছিল, অবসরের বয়স ৬৪ বছরে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে তারা প্রধানমন্ত্রী অপসারণে ভোট দেবে।

অনাস্থা প্রস্তাব দুটি ব্যর্থ হওয়ার পরও বিরোধীরা লেকর্নুর সামনে নতুন বাজেট পাসের পথে কঠিন সময় দেখছেন। পিএস নেতা লরেন্ট বাউমেল বলেন, ‘এই ভোট কোনো স্থায়ী সমঝোতা নয়। বরং বাজেট আলোচনায় সরকারকে আরও ছাড় দিতে হবে।’

তবে সংসদের স্পিকার ও প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইয়েল ব্রাউন-পিভেট বলেন, ‘আজ জাতীয় পরিষদে সহযোগিতা ও সংলাপের মানসিকতা কাজ করেছে, এটা ইতিবাচক সংকেত।’

গত মাসে লেকর্নুকে নিয়োগ দিয়েছিলেন ম্যাক্রোঁ। তিনি দুই বছরেরও কম সময়ে ফ্রান্সের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী। এখন তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ গভীরভাবে বিভক্ত সংসদের মধ্য দিয়ে ২০২৬ সালের জন্য ব্যয়-সংকোচন বাজেট পাস করানো।

আল-জাজিরার প্যারিস প্রতিনিধি নাতাচা বাটলার বলেন, ‘এই ভোটে লেকর্নু আপাতত স্বস্তি পেলেও বিপদ কেটে যায়নি। পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ হবে তার জন্য কঠিনতম সময়।’ তিনি আরও বলেন, ‘লেকর্নুকে এখন এমন একটি বাজেট তৈরি করতে হবে যা সংসদের বিভিন্ন দলের মন জোগাতে পারে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়া কার্যত অসম্ভব।’

৩৯ বছর বয়সি লেকর্নু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাজেট পাসে কোনো সাংবিধানিক শর্টকাট ব্যবহার করবেন না। বরং সংসদীয় বিতর্কের মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেন, ‘সরকার আলোচনা করবে, সংসদে বিতর্ক করবে, তারপর ভোট হবে।’

তবুও বিরোধীরা আশাবাদী নন। মেরিন লে পেন লেকর্নুর বিরুদ্ধে ‘ম্যাক্রোঁর নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার’ অভিযোগ তুলে বলেন, ‘আমরা সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচনের অপেক্ষায় আছি।’

বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরেই অতি ডানপন্থিরা এখন সবচেয়ে সক্রিয়। ম্যাক্রোঁর শেষ মেয়াদ শেষে তারা ক্ষমতা দখলের বাস্তব সুযোগ দেখছে।

বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চাপ রয়েছে ঘাটতি ও ঋণ কমানোর বিষয়ে। ফ্রান্সের ঋণ-জিডিপি অনুপাত এখন ইইউর তৃতীয় সর্বোচ্চ, গ্রিস ও ইতালির পরেই। তাই ব্যয় সংকোচন না করলে অর্থনীতি আরও চাপের মুখে পড়তে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কেবল ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ম্যাক্রোঁর ভাবমূর্তিকে নড়বড়ে করে তুলেছে। সম্প্রতি মিশরে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যঙ্গ মন্তব্য সেই দুর্বল অবস্থানই স্পষ্ট করেছে।