অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একটি জনপ্রিয় সমুদ্রতীরবর্তী ক্যাফেতে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ৫০০ পাউন্ডের (২৩০ কেজি) বোমা ব্যবহার করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, গত সোমবার পশ্চিম গাজা সিটির ওই ক্যাফেতে হামলা চালানো হয়, যেখানে অধিকার কর্মী, সাংবাদিক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াত রয়েছে।
আল-বাকা নামের ক্যাফেটির ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, শিশু, নারী এবং বয়স্ক ব্যক্তিসহ অরক্ষিত বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণ করার জন্য একটি এমকে-৮২ বোমা ব্যবহার করেছে ইসরায়েল।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন অনুসারে, বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ মানুষের ওপর এত শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবহার করা, যা বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটায় এবং চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধ। এটি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
জেনেভা কনভেনশনের অধীনে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন সামরিক বাহিনীকে এমন আক্রমণ চালানো থেকে বিরত রাখে যা ‘বেসামরিক জীবনের আকস্মিক ক্ষতি’ ঘটায়।
একসময়ের ব্যস্ততম সমুদ্রতীরবর্তী ওই স্থানে হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন নিহত হন, যার মধ্যে ছিলেন বিশিষ্ট যুদ্ধ প্রতিবেদক ও ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা ইসমাইল আবু হাতাব, ৩৫ বছর বয়সি এক গৃহবধূ এবং চার বছরের একটি শিশু।
বলা হচ্ছে, ওই হামলার আগে কোনো ধরনের সতর্কবার্তাও দেয়নি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
আইডিএফের দাবি, ওই ক্যাফেতে হামলার ঘটনা পর্যালোচনাধীন ও ‘হামলার আগে, আকাশপথে নজরদারি ব্যবহার করে বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল’।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গেরি সিম্পসন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঠিক কাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তা নির্দিষ্ট করেনি, তবে বলেছে যে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কমাতে তারা আকাশপথে নজরদারি ব্যবহার করেছে। যার অর্থ তারা জানত যে, ক্যাফেটিতে তখন (হামলার সময়) গ্রাহকদের ভিড় ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এটাও জানত যে আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা ওই বোমায় সেখানকার অনেক বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং পঙ্গু হয়ে যাবেন। স্পষ্টতই জনাকীর্ণ একটি ক্যাফেতে এত বড় অস্ত্রের ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ। এটি একটি বেআইনি, অসামঞ্জস্যপূর্ণ বা নির্বিচার আক্রমণ। এ ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে তদন্ত করা উচিত।