ঢাকা সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫

সত্যিই কি ফোরাত নদীতে সোনা পাওয়া গেছে?

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০৯:৪৬ পিএম
ফোরাত নদীতে ‘সোনার খোঁজ’ করছেন লোকজন। ছবি- সংগৃহীত

সিরিয়ার রাক্কা প্রদেশে ইউফ্রেটিস তথা ফোরাত নদীর তীরে ‘সোনা খুঁজে পাওয়ার খবরে’ কয়েক ডজন মানুষ মাটি খুঁড়ে চলছে। কয়েক দিন আগে নদীর পানির স্তর কমে যাওয়ায় তলদেশে ঝলমলে মাটির ঢিবি দেখা যায়। এরপরই স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে জড়ো হয়ে সোনা উত্তোলনের চেষ্টা শুরু করেন।

স্থানীয়রা নদীর তীরে অস্থায়ী শিবির গড়ে তুলেছেন। তাঁবু খাটিয়ে বেলচা ও মৌলিক সরঞ্জাম দিয়ে ২৪ ঘণ্টা খনন চলছে। এ নিয়ে ছোটখাটো বাজারও তৈরি হয়েছে, ব্যবহৃত খনন সরঞ্জামের দাম বেড়েছে, আর আশপাশের গ্রামে দালালদের আনাগোনা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, ইউফ্রেটিস নদীর সংকোচন যত বাড়ছে, ততই শুষ্ক নদীর তীরের চেয়ে বেশি কিছু প্রকাশ পাচ্ছে। রাক্কার আল-বুখামিদ গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে নদীর ধারে সোনার ঝলমলে দাগ দেখা দিয়েছে। কয়েক ডজন তরুণ সিরিয়ান হাতে বেলচা নিয়ে এবং ভাগ্যের স্বপ্নে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে।

তবে তারা যা পেয়েছে তা আসলে সোনা নয়, এটি ছিল পাইরাইট, যা সাধারণত ‘বোকার সোনা’ নামে পরিচিত। খনিজটির সোনালি আভা প্রথমে আশা জাগালেও পরে হতাশা ছড়ায়। পাইরাইট একটি সালফার-ভিত্তিক যৌগ, যা সালফিউরিক অ্যাসিড উৎপাদনে ব্যবহার হয় এবং বিদ্যুৎ সঞ্চালনও করতে পারে, তবে গ্রামবাসীর জন্য এর প্রকৃত কোনো আর্থিক মূল্য নেই।

ফোরাত নদীতে ‘সোনার খোঁজ’ করছেন লোকজন। ছবি- সংগৃহীত

তবে এখনো এ এলাকায় কোনো সরকারি তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ নেই। বাড়তে থাকা ভিড়, পরিবেশগত ক্ষতি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি সত্ত্বেও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কোনো বক্তব্য দেয়নি।

ভূতাত্ত্বিক প্রকৌশলী খালেদ আল-শাম্মারি বাগদাদ ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম শাফাক নিউজকে জানান, ইউফ্রেটিস তীরে খনিজ পলি অস্বাভাবিক নয়। তবে ঝলমলে মাটিকে দেখে সোনা রয়েছে বলে ধরে নেওয়া বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক নয়। কেবল বিস্তারিত ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণেই বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব।

অন্যদিকে, বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে ধর্মীয় আলোচনাও উসকে দিয়েছে। বহুজন নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর একটি সুপরিচিত হাদিসের কথা স্মরণ করছেন। যেখানে বলা হয়েছে, ‘ফোরাত নদী থেকে সোনার পাহাড় বের হলে মানুষ তা নিয়ে সংঘাতে জড়াবে, তারপর কেয়ামত আসবে।’

ইসলামি পণ্ডিত আসাদ আল-হামদানী অবশ্য সতর্ক করে বলেছেন, এ ধরনের হাদিস ব্যাখ্যায় গভীর জ্ঞান প্রয়োজন, সরাসরি সর্বনাশের লক্ষণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা সঠিক নয়।

তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকজুড়ে প্রবাহিত ইউফ্রেটিস নদী প্রাচীনকাল থেকেই অঞ্চলের কৃষি ও বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর পানির স্তর নাটকীয়ভাবে কমছে। এর পেছনে তুরস্কের বাঁধ নির্মাণ, আন্তঃসীমান্ত পানি নিয়ে বিরোধ ও খরা পরিস্থিতি দায়ী।

নদীর শুকনো তলদেশে সত্যিই সোনা আছে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে সম্ভাবনার আশায় রাক্কার মানুষজন কোদাল চালিয়ে যাচ্ছেন।