ঢাকা শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫

ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে জিম্মি ফ্লোটিলার তিন জাহাজ

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ১০:২৫ পিএম
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজ। ছবি- সংগৃহীত

গাজাগামী ত্রাণবাহী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার নৌবহরে বৃহস্পতিবার ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল। শান্তিপূর্ণ ও অহিংস এই নৌবহরে ছিল খাদ্য, শিশু সূত্র, ওষুধ এবং  ৪৭ দেশের অন্তত ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক। ইসরায়েলের দাবি, বৈধ নৌ অবরোধ ভেঙে সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশের চেষ্টা করছিল এসব জাহাজ।

অন্যদিকে, ফ্লোটিলা কর্তৃপক্ষ বলছে, শত শত মানুষকে বেআইনিভাবে আটক করে আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের নগ্ন লঙ্ঘন। অভিযানের পর একদিকে শুরু হয়েছে নির্বাসন প্রক্রিয়া, অন্যদিকে উঠেছে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ।

ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানা গেছে, অন্তত ৪০টি নৌকা আটক করা হয়েছে এবং একের পর এক জাহাজ আশদোদ বন্দরে পৌঁছাচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের ইউরোপে নির্বাসিত করা হবে। তবে তাদের কেউই ইসরায়েলে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন না; বরং গাজা উপকূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন বলে স্পষ্ট করেছে ফ্লোটিলা।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা (জিএসএফ) জানিয়েছে, তাদের একটি ছাড়া বাকি সব জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শুধু পোলিশ পতাকাবাহী ম্যারিনেট নামক জাহাজের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ আছে, যা শেষবার মিশরের উপকূলে দেখা গিয়েছিল।

আল-জাজিরার ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সি সানাদ নিশ্চিত করেছে, অন্তত তিনটি গাজাগামী ত্রাণবাহী জাহাজ বর্তমানে ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে আটকে রয়েছে। ওয়েবসাইট মেরিন ট্র্যাফিক থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গ্রিক পতাকাবাহী ক্যাপ্টেন নিকোস, স্প্যানিশ পতাকাবাহী এস্ট্রেলা ওয়াই ম্যানুয়েল এবং আদারাকে দক্ষিণ ইসরায়েলে টেনে নেওয়া হয়েছে।

সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, ইসরায়েলি নৌবাহিনী গাজায় যাওয়ার পথে ক্যাপ্টেন নিকোস ও অন্যান্য নৌকাকে ‘অবৈধভাবে’ আটক করে জাহাজে ওঠে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতা ও ক্যাপ্টেন নিকোস-এর যাত্রী রিমা হাসান আগে ইসরায়েলের বাধাদানের ফুটেজ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি সেনারা কর্মীদের ‘অবৈধভাবে’ আটক করেছে।

ফ্লোটিলার দাবি, আটক হওয়া কর্মীদের এমএসসি জোহানেসবার্গ নামক বৃহৎ নৌযানে স্থানান্তর করা হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়ায় তাদের ওপর জলকামান, স্কাঙ্ক ওয়াটার এবং অন্যান্য আগ্রাসী কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে।

তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের আগ্রাসন, আইনজীবীর উপস্থিতি ছাড়া শুনানি শুরু করা ও আটক ব্যক্তিদের ভাগ্য গোপন করা আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন। ফ্লোটিলা কর্তৃপক্ষ এটিকে ‘বেআইনি অপহরণ’ আখ্যা দিয়েছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক মহলকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

অন্যদিকে ইসরায়েল বলেছে, এটি হামাসের সহযোগিতায় পরিচালিত ‘উসকানিমূলক নৌযাত্রা’ এবং বৈধ নৌ অবরোধ ভাঙার প্রচেষ্টা। তারা দাবি করেছে, একটি জাহাজ এখনও দূরে রয়েছে, সেটি যদি কাছে আসে তবে সেটিকেও প্রতিহত করা হবে।

এদিকে আটক স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রথমে আইনজীবীদের প্রবেশাধিকার অস্বীকার করা হলেও পরে আদালাহ আইনি কেন্দ্রের একটি দলকে বন্দরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, অভিবাসন কার্যক্রম আইনজীবীদের উপস্থিতি ছাড়াই পরিচালিত হওয়া স্পষ্টতই বেআইনি পদক্ষেপ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ছোট ছোট নৌযান আশদোদ বন্দরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের পেছনে রয়েছে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর একটি বড় যুদ্ধজাহাজ এবং আরও কয়েকটি ছোট নৌযান। ঘটনার পর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য না করলেও তাদের অনলাইন ট্র্যাকিং ব্যবস্থা হঠাৎ অচল হয়ে যায়।