যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ শুক্রবার এক চাঞ্চল্যকর নির্দেশনা জারি করে জানান, পেন্টাগনের বেশিরভাগ এলাকায় এখন থেকে সাংবাদিকদের প্রবেশের জন্য সরকারি অনুমোদন ও আনুষ্ঠানিক দায়িত্বপ্রাপ্ত এসকর্ট বাধ্যতামূলক।
এই নির্দেশনা সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়েছে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের আওতায় গণমাধ্যমের ওপর ধারাবাহিক নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের সর্বশেষ সংযোজন।
আর্লিংটন ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তরে ক্রেডেনশিয়ালপ্রাপ্ত সাংবাদিকদেরও এখন অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ তার স্মারকলিপিতে বলেন, ‘যদিও প্রতিরক্ষা বিভাগ স্বচ্ছতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবু শ্রেণিবদ্ধ গোয়েন্দা তথ্য ও সংবেদনশীল বিষয় রক্ষা করা আমাদের অটল দায়িত্ব—যার অপব্যবহার মার্কিন সেনাদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।’
তিনি এ ধরনের তথ্য রক্ষা করাকে ‘প্রতিরক্ষা বিভাগের জন্য এক অনড় অগ্রাধিকার’ হিসেবে অভিহিত করেন।
তবে এই সিদ্ধান্তকে ‘সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত’ হিসেবে দেখছে পেন্টাগন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন।
তারা বলছে, ‘অপারেশনাল নিরাপত্তার অজুহাতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও, ৯/১১ পরবর্তী সময়েও ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় প্রশাসন সাংবাদিকদের অনিরাপদ, অশ্রেণিবদ্ধ এলাকায় পেন্টাগনে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল—যেখানে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজনীয়তা কখনো দেখা যায়নি।’
পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল বলেন, ‘এই আপডেটকৃত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংবেদনশীল তথ্য রক্ষার জন্য ও মার্কিন সেনা সদস্যদের প্রতিরোধযোগ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা করার জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।’
চলতি বছরের জানুয়ারিতে পুনরায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পেন্টাগন থেকে তথ্য ফাঁস হওয়া নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এরই মধ্যে তথ্য ফাঁস সংক্রান্ত তদন্তে তিনজন কর্মকর্তাকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, সিএনএন ও এনবিসি নিউজের মতো ঐতিহ্যবাহী গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে পেন্টাগনে স্থায়ী কার্যালয় থেকে সরিয়ে দিয়ে নতুন ‘রোটেশনাল সিস্টেম’ চালু করা হয়েছে, যেখানে ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক পোস্ট, ব্রেইটবার্ট, ডেইলি কলার এবং ওয়ান আমেরিকা নিউজ নেটওয়ার্কের মতো গণমাধ্যমগুলোকে জায়গা দেওয়া হয়েছে।
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন কোনোভাবেই সংবাদমাধ্যমে তথ্য ফাঁস সহ্য করবে না এবং যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পেন্টাগনে সাংবাদিকদের নতুন কার্ড ইস্যু করা হবে, যেখানে আরও স্পষ্টভাবে তাদের প্রেস সদস্য হিসেবে পরিচয় তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি নিরাপত্তা প্রটোকলের অংশ হিসেবে নতুন স্ক্রুটিনি ও যাচাই-বাছাইয়ের ঘোষণাও শীঘ্রই আসতে পারে বলে স্মারকলিপিতে জানানো হয়েছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এই সিদ্ধান্ত, যা ট্রাম্প প্রশাসনের সংবাদ-নীতিতে একটি নাটকীয় মোড় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।