গত বছরের ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাদের মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেছেন। তিন আসামির মধ্যে একমাত্র তিনিই কারাগারে আটক আছেন, বাকি দুজনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার কার্যক্রম চলছে।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল বৃহস্পতিবার হাসিনা ও কামালের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। সেই সঙ্গে প্রসিকিউশনের প্রারম্ভিক বিবৃতির (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) ৩ আগস্ট এবং মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য ৪ আগস্ট দিন রেখেছেন আদালত।
আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট ৫ অভিযোগ আনা হয়েছে তিন আসামির বিরুদ্ধে। এর পক্ষে আন্দোলনকারীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া-সংক্রান্ত শেখ হাসিনার অডিও টেপ এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন।
এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলার বিচার শুরু হলো। আর তা শুরু হলো সেই আদালতে, যে আদালত তার সরকার গঠন করেছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য। ‘পলাতক’ শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে অভিযোগ গঠনের শুনানিতে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। দুই আসামির পক্ষে তিনি অব্যাহতির আবেদন করেছিলেন।
অন্যদিকে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে কোনো আবেদন করেননি। তার বদলে তিনি দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন। মামুন যেহেতু দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন, সে জন্য নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে আলাদা রাখার আবেদন করেন তার আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ। আদালত সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক আছেন। তৃতীয় আসামি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন সাহেব আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় অভিযোগ বিষয়ে তার বক্তব্য কী। তিনি তার দোষ স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি একজন সাক্ষী হিসেবে এই যে মানবতাবিরোধী অপরাধ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে হয়েছিল সেই অপরাধের সব কিছু যেহেতু তার জানার কথা, সেহেতু সমস্ত তথ্য তিনি আদালতকে উদঘাটনের ব্যাপারে সহায়তার মাধ্যমে তিনি অ্যাপ্রুভার হতে চেয়েছেন। তার প্রার্থনা আদালত মঞ্জুর করেছেন। তিনি সাক্ষী হিসেবে গণ্য হবেন। বাংলায় এটাকে বলে রাজসাক্ষী। কিন্তু আইনে যেটাকে বলা হয়েছে ‘অ্যাপ্রুভার’। রাজসাক্ষী হলে মামুনকে ক্ষমা করা হবে কি না জিজ্ঞেস করা হলে তাজুল বলেন, তার বক্তব্যের মাধ্যমে পুরোপুরি সত্য প্রকাশিত হলে আদালত তাকে ক্ষমা করতে পারেন অথবা অন্য কোনো আদেশও দিতে পারেন।
৫ অভিযোগ: ট্রাইব্যুনালে এ মামলা উপস্থাপন করা হয়েছে ‘চিফ প্রসিকিউটর বনাম আসামি শেখ হাসিনা গং’ মামলা হিসেবে। গত ১ জুন প্রসিকিউশনের দেওয়া অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে গত ১২ মে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সেখানে শেখ হাসিনাকে জুলাই-আগস্টের নৃশংসতার ‘মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
অভিযোগ-১ : তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের রাজাকার এবং রাজাকারের বাচ্চা বলে তাদের নির্মূল করার জন্য যে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন, তারই ধারবাহিকতায় বাংলাদেশজুড়ে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর যে আক্রমণ শুরু হয়, তাতে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়, প্রায় ২৫ হাজার ছাত্র-জনতাকে আহত করা হয়। অনেকে অন্ধত্ববরণ করেছেন, অনেকে অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন। তার উসকানিমূলক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আইজিপি চৌধুরী আল-মামুনের নেতৃত্বে আক্রমণ পরিচালনা করা হয়। সেই অভিযোগে প্রথম অভিযোগটি গঠন করা হয়।
অভিযোগ-২ : গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদনীন্তন উপাচার্য মাকসুদ কামালের সাথে কথোপকথন এবং ১৮ তারিখে তার ভাতিজা শেখ ফজলে নূর তাপসের সাথে আরেকটি টেলিফোন কনভারসেশনে তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যা করার জন্য। মারণাস্ত্র ব্যবহার করে তাদের হত্যা বা নির্মূল করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন হেলিকপ্টার এবং ড্রোন ব্যবহার করে দেখামাত্র গুলি করে হত্যা করার জন্য। সেই নির্দেশের কথা তিনি দুটি টেলিফোন কনভারসেশনে উল্লেখ করেছেন। আদের আশ্বস্ত করেছেন, আমি নির্দেশ দিয়েছি, সুতরাং এ বিক্ষোভ দমন হয়ে যাবে, নির্মূল হয়ে যাবে। তার এ আদেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের মাধ্যমে সমস্ত বাহিনীগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের কাছে কনভে করা হয়েছে, ছাত্রলীগ-যুবলীগের কাছে কনভে করা হয়েছে এবং সেই নির্দেশের আলোকে দেশব্যাপী দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। ২৫ হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছে। এ হত্যাকা-ের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটির আওতায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
অভিযোগ-৩ : ১৬ জুলাই রংপুরে নিরস্ত্র আবু সাঈদকে পুলিশ পরপর অনেকগুলো গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এটি হয়েছিল শেখ হাসিনার নির্দেশের পরিপেপ্রক্ষিতে এবং এ নির্দেশটি প্রকাশ হয়েছিল তার টেলিফোন কনভারসেশন থেকে। ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে তিনি যে বলেছিলেন ‘রাজাকারের বাচ্চা’, তারই ধারাবাহিকতায় রংপুরে আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়। হত্যা করার পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রংপুর মেডিকেল কলেজে। সেখানে হত্যার প্রকৃত কারণ গোপন করার জন্য পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট চারবার পরিবর্তন করা হয়। এ হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ষড়যন্ত্র, নির্দেশের মাধ্যমে এই আসামিরা তাদের সুপিরিয়র স্ট্যাটাস ব্যবহার করে রংপুরের পুলিশ প্রশাসন এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যবহার করে সেখানে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন সে দায়ে তৃতীয় অভিযোগটি গঠন করা হয়েছে।
অভিযোগ ৪: আগস্টের ৫ তারিখ যখন সারা বাংলাদেশ থেকে ছাত্র-জনতাকে ঢাকা আসার আহ্বান জানানো হয়েছিল, সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে যখন ছাত্র-জনতা আসছিল, সে সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় সকাল ১০টা থেকে আড়াইটার মধ্যে এ তিন আসামির নির্দেশে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনারের মাধ্যমে ও অন্যান্য পুলিশ ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করে। তার মধ্যে শহিদ শহরিয়ার খান আনাজ, জুনাইদসহ আরও চারজন রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি এবং তাদের অধীনস্থদের মাধ্যমে হত্যাকা- ঘটানোর দায়ে চতুর্থ অভিযোগ গঠন করা হয়।
অভিযোগ-৫ : তাদের নির্দেশে সাভারের এমপিসহ অধীনস্থদের সাহায্যে সাভারের আশুলিয়া থানার সামনে ৫ আগস্ট বিকেলবেলা লেথাল উইপন ব্যবহার করে ছয়জনকে হত্যা ও লাশ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ গঠন করা হয়। একটি গলির মধ্যে ঠান্ডা মাথা০য় সাব মেশিনগান এবং চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ছয়জনকে একটি পুলিশ ভ্যানে তুলে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পোড়ানোর সময় একজন নড়াচড়া করছিল, তাকে উদ্ধার না করে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
কারাগারে একক সেলে সাবেক আইজিপি: নিরাপত্তার স্বার্থে কারাগারে একক সেলে রাখা হলো আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে তাকে সরাসরি সেই নতুন সেলে নেয়া হয়। এর আগে দুপুরে নিজের দোষ স্বীকার করে নিজেকে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন ট্রাইব্যুনালে। সেখানে তিনি বলেন, তিনি জুলাই হত্যায় অপরাধবোধ করছেন। তিনি সব খুলে বলতে চান। এ জন্যই তিনি সাক্ষী হতে চান। পরে তার আইনজীবী ট্রাইব্যুনালকে বলেন, তিনি যেহেতু অন্য বন্দিদের সঙ্গে থাকেন সেখানে তার নিরাপত্তার ঘাটতি আছে। কাজেই তাকে অন্য সেলে রাখা হোক। পরে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল ১ চৌধুরী মামুনের নিরাপত্তা বাড়াতে নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে তাকে ভিন্ন সেলে নিরাপত্তা দিতে বলা হয়।
রাজসাক্ষী কী?
বহুকাল থেকেই অপরাধ জগৎ বড় বিচিত্র। অপরাধীকে খুঁজে বের করা পুলিশের বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর অর্পিত। কিন্তু কখনো কখনো অপরাধের রহস্য উদঘাটন করা পুলিশের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। ধৃত আসামি সহজে মুখ খুলতে চায় না। তখন পুলিশ অপরাধীকে মুক্তির প্রলোভন দেখিয়ে সত্য ঘটনা বলার জন্য সাক্ষী করার প্রস্তাব দেয়। আসামি রাজি হলে তাকে রাষ্ট্রের পক্ষে সাক্ষী করা হয়।
সুতরাং বলা যায় ‘রাজসাক্ষী’ মানে রাজ্যের সাক্ষী। যেহেতু সাক্ষ্য আইন প্রণয়নের সময় রাজার ‘রাজ্য প্রথা’ ছিল, সেহেতু এ ধরনের সাক্ষীকে ‘রাজসাক্ষী’ বলা হতো। এখন রাজাও নেই রাজত্ব প্রথাও নেই। তাই রাজসাক্ষীকে বতর্মানে ‘রাষ্ট্রের সাক্ষী’ বলা হয়। যাকে ‘রাজসাক্ষী’ করা হয় তার বক্তব্য গ্রহণ করার জন্য অন্যান্য নিরপেক্ষ সমথর্নযোগ্য সাক্ষীও থাকে।
সাধারণ অর্থে বলা যায়, যে অপরাধী, প্ররোচক বা জড়িত হিসেবে অপরাধের বিষয়ে বা প্রত্যেকসহ অপরাধীর বিষয়ে তার জ্ঞানের মধ্যে থাকা সব ঘটনার সম্পূর্ণ ও সত্য বিবরণ প্রকাশ করবে, এই শর্তে তাকে বিচারক ক্ষমার প্রস্তাব দিতে পারেন। ফৌজদারি মামলাতে এই সুযোগপ্রাপ্ত অপরাধীকে রাজসাক্ষী বলা হয়। যদিও সাক্ষ্য আইনে রাজসাক্ষী কথাটি সংজ্ঞায়িত করা নেই।
কোনো আসামি রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে রাজি হলে প্রথমে তাকে ‘রাজসাক্ষী’ হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং পরে কারাগারে রাখা হয়, যাতে অন্য কোনো অপরাধী বা ব্যক্তি তাকে প্রভাবিত করতে না পারে। এ প্রসঙ্গে সাক্ষ্য আইনের ১৩৩ ধারায় বলা হয়েছে, অপরাধী অন্য সহযোগী অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করার উপযুক্ত ব্যক্তি বলে বিবেচিত হতে হবে। দুষ্কর্মের সহযোগীর অসমর্থিত সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আসামিকে সাজা দেওয়া হলে তা বেআইনি বলে গণ্য হবে না। এ ধারা মতে, আসামিকে যিনি রাজসাক্ষী হবেন, তাকে ক্ষমা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে আসামি সাক্ষী হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারেন।
অন্যদিকে সাক্ষ্য আইনের ১৪৪ ধারার বিধান মোতাবেক রাজসাক্ষীর একক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আসামিকে শাস্তি প্রদান করা আইনত যুক্তিসংগত হবে না। কেননা সে অন্যান্য সহযোগী অপরাধীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে থাকে। কাজেই রাজসাক্ষীর মতো একজন বিশ্বাসঘাতক সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণে আদালত বেশ সতর্কতা অবলম্বন করেন। আর আসামির সংখ্যা বেশি হলে এমনভাবে সাক্ষ্য প্রদান করতে হবে, যাতে প্রত্যেক আসামির পৃথকভাবে অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।
অপরাধ দমনের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আর এ কারণে অধিকাংশ অপরাধের মামলার বাদী রাষ্ট্র হয়ে থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে জনগণের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। ব্রিটিশ শাসনামলে বাদী হতেন রাজা। তাই গুরুতর অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তি যারা আইনের সুযোগ নিয়ে সাক্ষী হয়ে রাজার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করতেন তারাই ‘রাজসাক্ষী’ হিসেবে গণ্য হতেন। কোনো একটি অপরাধ সংঘটনে যেসব ব্যক্তি জড়িত থাকে তাদের প্রত্যেককে অপরাধের সহযোগী বলা চলে।