সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের তেঘরী গ্রাম সংলগ্ন প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের সরকারি ভূ-সম্পত্তি দখল নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত কয়েকবার চেষ্টা করলেও গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে মূল্যবান এ সম্পত্তি ভূমিখেকোরা দখল করতে পারেনি। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।
সূত্র জানায়, রেকর্ড ও মামলার কাগজপত্রে দেখা যায়, তেঘরি মৌজার রেকর্ড অনুযায়ী, এখানে ৬ একর ৭০ শতক ভূমি রয়েছে। ভূমির মালিক ছিলেন সিলেট শহরের খাজাঞ্চি বাড়ির জমিদারগণ। পাকিস্তান আমল থেকে বর্ণিত এ ভূমিতে তেঘরি গ্রামের লোকজন জমিদারগণের সম্মতিতে গোচারণ ভূমি ও খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। পরবর্তীতে এ ভূমি সরকারের ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। কিন্তু তেঘরী গ্রামের চান মিয়া জাল কাগজপত্র দিয়ে বিশ্বনাথ সহকারী জজ আদালতে স্বত্ব ০৭/২০১২ইং মামলাটি দায়ের করলে, আদালত খারিজ করে দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে চান মিয়া দেওয়ানি আপিল ৩০৪/২০১২ইং দায়ের করলে আপিলটিও খারিজ করে দেন আদালত। তেঘরী গ্রামের আফতাব মিয়া নামক ব্যক্তি বর্ণিত ভূমি তার নামে নামজারি করতে আপিল ৭৪/৯১ইং দায়ের করলে এ আবেদনও খারিজ হয়ে যায়। আদালতে হেরে চালাকচতুর চান মিয়া অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে মিছ আপিল ৫৮/২০১১ইং দায়ের করলে সেটিও খারিজ হয়ে যায়।
সেটেলমেন্ট জরিপের সময় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ঘোষ দিয়ে বর্ণিত ভূমির মন্তব্য কলামে চান মিয়া, পিতা আয়াত উল্লার নামে বিএস রেকর্ডভুক্ত করে। এই বিএস রেকর্ড বাতিল করে সরকারের বিপুল পরিমাণ ভূ-সম্পত্তি উদ্ধার করতে সিলেটের জেলা প্রশাসক ২০১৬ সালে সিলেটের ল্যান্ডসার্ভে ট্রাইব্যুনালে ১২৪৯/২০১৬ইং মামলাটি দায়ের করেন এবং আদালতে এখনো মামলাটি বিচারাধীন। চান মিয়ার মৃত্যুর পর তার ভাতিজা অ্যাডভোকেট শামিম গংরা বর্ণিত ভূমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করে আসছে।
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অ্যাডভোকেট শামিম বহিরাগত লোকজন নিয়ে বর্ণিত ভূমি জোরপূর্বক গভীর রাতে দখলের চেষ্টা করলে গ্রামবাসীরা বাধা দিলে তারা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় বিশ্বনাথ থানা পুলিশ উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে প্রসিকিউশন দাখিন করেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সরকারি এ ভূমিতে গ্রামবাসীরা গোচারণ ও খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। ভূমি দখল করতে না পেরে চান মিয়া ও তার ভাতিজা অ্যাডভোকেট শামিম ইতিমধ্যে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে ৬-৭টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করে গ্রামবাসীকে হয়রানি করে আসছেন।
ভূমি দখলের ব্যাপারে অ্যাডভোকেট শামিম আহমদের কাছে জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় দিলে কোনো কথা না বলে ফোন কেটে দেন। তেঘরি গ্রামের নুরুল হক ও আঙ্গুর মিয়া জানান, সরকারি ভূমি রক্ষায় আমরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছি। চান মিয়া, তার ছেলে সাজ্জদুর রহমান ও ভাতিজা অ্যাডভোকেট শামিম আহমদ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে ৬-৭টি ফৌজদারি মামলা করে চরম হয়রানি ও গ্রামবাসীকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আশরাফুজ্জামান সরেজমিনে তদন্ত করে চান মিয়া তার পুত্র সাজ্জাদ ও তার ভাতিজা শামিম কর্তৃক গ্রামবাসীকে হয়রানির অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পেয়ে জিআইজি বরাবর প্রতিবেদনও দাখিল করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনন্দা রায় জানান, আগামী মঙ্গলবার গ্রামবাসীকে আমার অফিসে ডেকেছি বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন