লামিয়াদের বাড়ির উঠানটা বেশ বড়। উঠানের ঠিক পরেই আছে লাউয়ের জাঙলা। লাউগাছ উঠান থেকে বেয়ে জাঙলার ওপর উঠেছে। নতুন লাউয়ের ডগাগুলো সাপের ফণার মতো মাথা উঁচু করে চারপাশে ছড়িয়ে গেছে। এখনো লাউ ধরেনি, তবু গাছটা দেখতে যেন একেবারে সবুজের রাজ্য। বড় বড় গোল পাতাগুলো সবুজ প্লেটের মতো জাঙলার গায়ে সাজানো। পাতার গোড়ায় ছোট ছোট জালির মতো শিরা দেখা যাচ্ছে। দেখে মনে হয়, অচিরেই এখানে লাউ ধরে ঝুলতে শুরু করবে।
এই লাউয়ের জাঙলাতেই বাস করে দুটি দোয়েল পাখি। দোয়েল তো গানের পাখি, তার ডাক শুনলে মন ভরে যায়। সকালবেলা উঠানে দাঁড়ালে শোনা যায় তাদের মিষ্টি সুরেলা গান। কখনো গাছের ডগায় বসে আবার কখনো উঠানের মাটিতে নেমে খেলে বেড়ায়। ওরা এক জায়গায় বসে থাকতে পারে না। এ ডালে, ও ডালে লাফিয়ে বেড়ায়। কখনো আবার গাছের পাতার ফাঁকে উড়ে বেড়ায়। এভাবেই তাদের দিন কেটে যায়।
লামিয়ার খুব ভালো লাগে দোয়েলদের এই চঞ্চলতা। আশ্চর্যের বিষয় হলো, লামিয়া কাছে গেলেও তারা ভয় পেয়ে উড়ে যায় না। বরং কাছাকাছি চলে এলে আরও জোরে গান গেয়ে ওঠে। মনে হয় যেন তারা লামিয়ার সঙ্গেই গল্প করছে। একদিন লামিয়া দেখতে পেল লাউয়ের জাঙলার এক কোণে দোয়েলরা বাসা বাঁধছে। খড়কুটো, শুকনো পাতা, আর ছোট ছোট ডগা এনে জোড়াতালি দিয়ে তারা গোল একটা বাসা বানিয়েছে। লামিয়া অবাক হয়ে দেখছিল, এত সুন্দরভাবে যে পাখিরা বাসা তৈরি করতে পারে, সে যেন নিজের চোখেই বিশ্বাস করতে পারছিল না। কিছুদিন পর লামিয়া দেখল বাসার ভেতর কয়েকটা ছোট্ট ডিম রাখা। সাদা সাদা ছোট ডিমগুলো দেখে তার মনে হলো যেন মুক্তার দানা। সে দারুণ খুশি হলো। প্রতিদিন বিকেলে সে গিয়ে জাঙলার নিচে দাঁড়িয়ে দেখত, মা দোয়েল ডিমে তা দিচ্ছে। বাবা দোয়েল সারাদিন গাছ থেকে পোকামাকড় ধরে নিয়ে এসে মাকে খাওয়াচ্ছে।
দিন যায়। লামিয়ার মনে কৌতূহল, ডিম থেকে কবে বাচ্চা ফুটবে? এক সকালে সে ছুটে গিয়ে দাঁড়াল লাউয়ের জাঙলার কাছে। হঠাৎ শুনলো চিঁ চিঁ শব্দ। ছোট ছোট বাচ্চা দোয়েল জন্ম নিয়েছে। তাদের এখনো পালক গজায়নি। লামিয়া বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল। বাবা-মা দোয়েল সারাক্ষণ ব্যস্ত হয়ে বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছে।
লামিয়ার মনে হলো, এ যেন এক অদ্ভুত আনন্দ। তার নিজের লাউয়ের জাঙলাই হয়ে গেছে দোয়েল পরিবারের সুখের আশ্রয়। প্রতিদিন সে যতœ করে গাছের আশপাশে পানি দেয়, যেন গাছ শুকিয়ে না যায়। সেভাবে, গাছটা বাঁচলেই দোয়েলদের সুখের সংসারও টিকে থাকবে। কিছুদিন পর বাচ্চা দোয়েলদের ডানা গজাল। তারা এ ডাল থেকে ও ডালে লাফাতে শুরু করল। লামিয়া আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠল। যেন নিজের ছোট ভাইবোনদের বড় হতে দেখছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন