শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সেলিম আহমেদ ও এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৫, ১০:৫২ পিএম

গণভোটের সময়-জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য

আলোচনার টেবিলে ছোট দলগুলো, বড়রা নীরব

সেলিম আহমেদ ও এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৫, ১০:৫২ পিএম

আলোচনার টেবিলে ছোট  দলগুলো, বড়রা নীরব

জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও গণভোটের সময় নিয়ে সমাঝোতা করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। যদিও গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়দল, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ ছোট দলগুলো এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানের জন্য ইতোমধ্যেই বৈঠক করেছে।

তবে বিএনপি, জামায়াতসহ বড় দলগুলোর এখনো তাদের সিদ্ধান্তে অটল। বিএনপি সাফ জানিয়েছে, নির্বাচন ও গণভোট এক দিনে হতে হবে। আর জামায়াতের কড়া দাবি, জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজন করতে হবে। ফলে আপাতত দৃষ্টিতে এই দুল দলের মধ্যে সমঝোতার কোনো কার্যত লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ফের জানানো হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা না হলে সরকার নিজেই একটা সিদ্ধান্ত নেবে। এ নিয়ে সরকার নিজেদের মধ্যে একাধিক বৈঠকও করেছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার। গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষাকে মাথায় রেখে সাধারণ মানুষ থেকে সরকার, রাজনৈতিক দল সব মহল থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের তাগিদ ওঠে। এরপর সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থাসহ সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি কমিশন গঠন করে সরকার। সব সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ এই কমিশনের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় সাড়ে আট মাস ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে টানা বৈঠক করে জুলাই সনদ প্রণয়ন করে ঐকমত্য কমিশন। অধিকাংশ দলই তাতে সই করে।

জুলাই সনদে সই করলে কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা নিয়ে দেখা দেয় ধোঁয়াশা। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের তিনটি স্তর। এগুলো হচ্ছেÑ আদেশ জারি, গণভোট এবং আগামী সংসদকে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদের ক্ষমতা দেওয়া। এ তিনটি স্তর নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মতপার্থক্য আছে। তবে মূল মতবিরোধ গণভোটের সময় এবং সংস্কার প্রস্তাবে ভিন্নমত রাখা না রাখা নিয়ে।

বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল চায় ত্রয়োদশ নির্বাচনের দিন গণভোট আর জামায়াতসহ কিছু দল চায় আগে গণভোট পরে নির্বাচন। অন্যদিকে এনসিপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল চায় আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পরে নির্বাচন। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ত্রিমুখী অবস্থানের কারণে বিপাকে পড়ে সরকার। হুমকির মধ্যে পড়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন। সরকারের তরফ থেকে ঐকমত্য কমিশনে সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

গত সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভায়’ এই সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জুলাই জাতীয় সনদ, সংবিধান সংস্কার চূড়ান্ত করা এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় লক্ষ করা হয়, দীর্ঘদিন আলোচনা করার পরেও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশের বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। এ ছাড়া গণভোট কবে ও তার বিষয়বস্তু কী হবেÑ এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।’

আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘এর পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, কবে অনুষ্ঠিত হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমত প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবেÑ এগুলোসহ ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন বলে সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয়। এসব ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো নিজ উদ্যোগ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে, সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। দিকনির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত সহজ হবে।’

এদিকে গণভোট নিয়ে সরকারের এই স্পষ্টবার্তার পরও বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার কোনো উদ্যোগ নেই। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত গণভোট নিয়ে তাদের অবস্থানে অনড়। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি ও নভেম্বরে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে সমাবেশ করে জামায়াতসহ ৮ সমমনা দল। সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘আমরা সরকারের চালাকি বুঝি। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করব। ঘি আমাদের লাগবেই। প্রয়োজনে আবার জীবন দেব। জুলাইয়ের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হতে দেব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে এক দিনে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়, তা দিয়েই প্রতিদিন গণভোট আয়োজন সম্ভব। তাই আমরা বলব, নো হাঙ্কিপাঙ্কি, জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজন করতে হবে।’

অন্যদিকে একই দিন যশোরের টাউন হল ময়দানে এক সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে বানচাল করতে চক্রান্ত করছে। তারা ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমে দেশকে আবারও অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। ফ্যাসিবাদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। এ দেশের জনগণ কোনোভাবেই তা মেনে নেবে না। নির্বাচনের আগে কোনো গণভোট নয়। গণভোট হবে নির্বাচনের দিনই।’ এ সময় দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা তাগিদ দেন তিনি।

গণভোট নিয়ে দুই দল বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত বা সমাঝোতা করতে আলোচনার টেবিলে চোখ দলগুলোর। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট প্রশ্নে বিএনপি, জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব ঘোঁচাতে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়টি দলের সঙ্গে আছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও গণঅধিকার পরিষদ। সংকট সমাধানে গত বুধবার বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান কার্যালয়ে এসব দলের নেতারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। দেড় ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার আলোচনা শেষে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্ব নিতে বলেছে। কোন পথে বিষয়টার সমাধান করা যায়, তা নিয়ে মতবিনিময়ের জন্য আমরা বসেছি। কিছু বিষয়ে কাছাকাছি এসেছি। অন্য দলগুলোর সঙ্গেও কথা বলা অব্যাহত রাখব। সংস্কার বাস্তবায়ন প্রশ্নে কাছাকাছি আসার চেষ্টা করব।’

সার্বিক বিষয়ে ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) গণতন্ত্রমঞ্চ ও অন্য তিনটি দলের শীর্ষ নেতারা বসেছিল। আমরা মতবিরোধ নিরসনে একটা কাছাকাছি জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করেছি। একইসঙ্গে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা করারও একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিরোধ নিরসনে আমাদের আন্তরিক চেষ্টা থাকবে।’

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘রাজনৈতিক সংকট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিকতা দেখিয়ে ভালো একটি উদ্যোগ নিয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা করে সরকারকে সিদ্ধান্ত জানানোর বিষয়ও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আমরা এরইমধ্যে রাজনৈতিক ঐকমত্যের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছি। উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমরা এ বিষয়ে বিএনপিকেও আলোচনার আহ্বান জানিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপিসহ অন্যান্য দল সাড়া দিলে সরকারকে মধ্যস্থতাকারির ভূমিকা নিতে হবে। একইসঙ্গে জামায়াতসহ আটটি দল এ বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতার আগ্রহ দেখিয়েছে। সবাই আগ্রহ দেখালে এটি ফলপ্রসূ হবে।’

সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় সেক্ষেত্রে জামায়াতের অবস্থান কী হবেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত যদি জনআকাক্সক্ষা এবং জুলাই সনদের বাইরে চলে যায়, সেক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান কী হবে তা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে হবে। আমরা চাচ্ছি জুলাই সনদের বাস্তবায়ন।’

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিএনপি একটি উদার রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনার বিষয়ে সব সময় আমরা উদার। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কথা বলার প্রয়োজন হলে আমরা আলোচনা করব।’

সরকারের ভাষ্য :

রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে সমঝোতায় আসতে না পারলে সরকার এ বিষয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তবে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাবে বলে এখনো আশা করছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন শফিকুল আলম। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিনের সময় দিয়েছে সরকার। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ-সংক্রান্ত অগ্রগতির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ‘আনঅফিসিয়ালি কিছু তো ডিসকাশন হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পলিটিক্যাল পার্টিগুলো যদি কোনো ডিসিশন না নেয়, তাহলে তো আগেই আমাদের আইন উপদেষ্টা বলেছিলেন যে, সে ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেই একটা ডিসিশন নেবে। আর কী ডিসিশন হবে সে বিষয়েও এখন প্রস্তুতিমূলক অনেক মিটিং হচ্ছে। কিন্তু আমরা আশা করব, পলিটিক্যাল পার্টিগুলো নিজেরা নিজেরাই একটা ডিসিশনে আসবে।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!