রাজধানীর আগারগাঁওয়ে একটি সরকারি কোয়ার্টারে ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকায় গ্যাস বিস্ফোরণে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার গ্যাস বিস্ফোরণ থেকে উভয় স্থানেই আগুনের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
উভয় ঘটনায় ৩ শিশুসহ ১১ জন দগ্ধ হয়েছেন। দগ্ধদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে একই দিন নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি মার্কেটে আগুন লেগে একটি মার্কেটের ৩৫টি দোকান পুড়ে গেছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সরকারি কোয়ার্টারে গ্যাসলাইন লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে শিশুসহ একই পরিবারের ৭ জন দগ্ধ হয়েছেন। গতকাল ভোর সাড়ে ৪টার দিকে আগারগাঁও পাকা মার্কেট সড়ক এলাকার সরকারি কোয়ার্টারের একটি টিনশেড বাসায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেনÑ শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মো. আব্দুল জলিল মিয়া (৫০), তার স্ত্রী আরনেজা বেগম (৪০), ছেলে আসিফ (১৯), সাকিব (১৬), আসিফের স্ত্রী মনিরা (১৭) ও নাতনি ইভা (৬) ও ইশা (৬)। এই ঘটনায় প্রতিবেশী ফিরোজুল আলম (৩৫) ২১ শতাংশ দগ্ধ হয়েছেন। তাকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, গ্যাসের লাইন লিকেজ থেকে এই অগ্নিকা- ঘটেছে। জানা গেছে, আহত পরিবারটি সরকারি কোয়ার্টারের ওই বাসায় ভাড়া থাকত।
দগ্ধ জলিল মিয়ার মেয়ে জামাই মো. আরফান মিয়া জানান, রাতে টিনশেড বাসায় পাশাপাশি কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন পরিবারটির ৭ সদস্য। ভোরের দিকে তার শাশুড়ি আরনেজা বেগম রান্না করতে যান। দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালাতেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এতে ৭ জনই পুড়ে যান। আরফান ও তার স্ত্রী জনিভা আক্তার পাশের কক্ষে ছিলেন। তার দুই মেয়ে ইভা ও ইশা নানার কক্ষে ছিল। আসিফের স্ত্রী মনিরা আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
তিনি জানান, তাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরাও ছুটে আসেন। দগ্ধ ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বাসায় গ্যাস লিকেজ থেকে এই আগুনের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন তিনি।
দগ্ধ আসিফ বলেছেন, আগারগাঁও সরকারি কোয়ার্টারের বাসায় তারা ভাড়া থাকেন। দেড় মাস ধরে ঘরে গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছিলেন। বাড়িওয়ালাকে বারবার বললেও কোনো প্রতিকার পাননি।
বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. হারুনুর রশীদ বলেন, ‘জলিলের ১২ শতাংশ, আরনেজার ১০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। বাকিদের হাত-পা দগ্ধ হয়েছে। এ ছাড়া আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর হাত-পা দগ্ধ হয়েছে। তাকে চিকিৎসা দিয়ে গাইনি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। জলিল ও আরনেজা বেগমকে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অবজারভেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।’
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকার একটি বাসায় গ্যাসের চুলা থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। গতকাল ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সোনারগাঁয়ের পাটাত্তা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেনÑ আলাউদ্দিন (৩৫), তার দুই মেয়ে শিফা আক্তার (১৪) ও সিমলা আক্তার (৪) এবং আলাউদ্দিনের মা জরিনা বেগম (৬৫)।
দগ্ধ আলাউদ্দিনের বোন সালমা আক্তার বলেন, তার মা, ভাই ও ভাইয়ের দুই মেয়ে ওই বাসার নিচতলায় ভাড়া থাকেন। ভোরে তার ভাই আলাউদ্দিন ওয়াশরুমে যান। এ সময় তাদের রান্নাঘরে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। তার ভাই রুমে ঢুকতেই আগুনে ঝলসে যান। এ সময় ঘরে থাকা তিনজন দগ্ধ হয়। পরে তাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে উদ্ধার করে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসেন। সালমা আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, রান্নাঘরে গ্যাসের চুলা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান জানান, সকালে নারায়ণগঞ্জের একটি বাসায় গ্যাসের চুলার আগুন থেকে চারজন দগ্ধ হয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেছে। তাদের মধ্যে আলাউদ্দিনের ৪০ শতাংশ, শিফার ১২ শতাংশ, শিমলার ৩০ শতাংশ ও জরিনা বেগমের ২০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। চারজনকে ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা রয়েছে।
একই দিন ভোর ৫টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের নতুন পালপাড়া এলাকায় অবস্থিত সমীর কর মার্কেটের হোসিয়ারি ও বডি নিটিংয়ের দোকানে আগুন লাগে। এতে মার্কেটের ৩৫টি দোকান পুড়ে গেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভায়।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরিফিন বলেন, ‘ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভায়। এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। তবে ওই মার্কেটের সেমিপাকা ৩৫টি দোকান পুড়ে গেছে।’ আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত করে পরে বলা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন