একীভূত হওয়ার তালিকায় থাকা এক্সিম ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে আরও দুই বছর সময় চায়। এরই মধ্যে কুঋণ ও খেলাপি ঋণ কমাতে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন। গতকাল রোববার শরিয়াহভিতিক পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের একীভূত করার বিষয়ে শুনানির প্রথম দিনে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসে এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। তবে গভর্নর অসুস্থ থাকায় অনুষ্ঠিত হয়নি নির্ধারিত বৈঠক। পরে সাংবাদিকদের এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান জানান, দুই বছর সময় পেলে এক্সিম ঘুরে দাঁড়াবে। আগামী চার দিনে শুনানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। শুনানিতে ব্যাংকগুলোর মূলধন, তারল্য সহায়তা, খেলাপি ঋণ, নগদ সংরক্ষণ অনুপাত ও প্রভিশন ঘাটতির সবশেষ অবস্থা জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘একীভূত হওয়ার কারণে এখন আর কোনো ডিপোজিট হয় না। ডিপোজিট না হওয়ার কারণে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। যার যতটুকু আছে, সেটা দিয়ে প্রচ- কাজ করছি, ব্রাঞ্চ, সবাই চেষ্টা করছে। যতটুকু পারি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
সভার সূচি অনুযায়ী, গভর্নরের সঙ্গে সোমবার বৈঠক হবে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের, পরদিন হবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক। এরপর বুধবার ইউনিয়ন ব্যাংকের সঙ্গে এবং বৃহস্পতিবার গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকপ্রধান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সভায় যোগ দেওয়ার আগে ব্যাংকগুলোকে পর্ষদ সভা করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন বলেন, একীভূত কোন প্রক্রিয়ায় হচ্ছে তার নীতিমালা প্রকাশ করলে বোঝা যাবে, কী হতে যাচ্ছে। বিস্তারিত জানা গেলেই বোঝা যাবে এ উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ হবে।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে ব্যাংক খাতের অনিয়ম, ঋণ কেলেঙ্কারির প্রকৃত অবস্থা জানতে আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আলোচিত পাঁচ ব্যাংকের তারল্য ঘাটতি, প্রভিশন পার্থক্য এবং সম্পদের মান কমে যাওয়াসহ সার্বিক বিষয়ে তাদের একটি করে একিউআর (অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ) প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সেই তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় তুলে ধরা হবে। একিউআর প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংকের কাছে মোট আমানত রয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে মোট ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকায। খেলাপির পরিমাণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। ঋণের ৭৭ শতাংশই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ ৯৭.৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৯৬.৩৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৬২.৩ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪৮.২ শতাংশ। তবে ইউনিয়ন ব্যাংক এখনো ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেনি। নিরীক্ষা চলমান থাকায় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো অবস্থা হয়নি বলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির।
একীভূতকরণে সায় রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বাংলাদেশের আর্থিক খাতে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে মার্জার। যদি একীভূতকরণ সফল হয়, তাহলে সংকট-পীড়িত খাতটি একটি সুযোগে পরিণত হতে পারে। এ ব্যাংকগুলোর এখনো উল্লেখযোগ্য সম্পদ রয়েছে একসঙ্গে তারা আবার শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াতে পারে। একীভূতকরণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা লাগবে বলে মূল্যায়ন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে দেড় লাখ কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে।
ব্যাংকের বিপরীতে বিল ও বন্ড ইস্যু করে সরকারের কাছ থেকে এই অর্থ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’ এদিকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে অন্য পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত থেকে বাদ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি দিয়েছেন ব্যাংকটির ৯ জন শেয়ারধারী। তাদের মধ্যে রয়েছেন ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মো. রেজাউল হক। চিঠিতে তারা উল্লেখ করেন, ২০১৭ সাল থেকে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটি দখলের পর থেকে নানা অনিয়ম হয়েছে। তারা আরও বলেন, প্রকৃত উদ্যোক্তাদের হাতে ব্যাংক পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হলে এসআইবিএল ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন