অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গত অর্থবছরে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন (৩ হাজার ৩৩ কোটি) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা; যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে; মোট রেমিট্যান্সের ১৬ শতাংশই এসেছিল দেশটি থেকে। সেখানে অবস্থানরত প্রবাসীরা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪৭৩ কোটি ৩১ লাখ (৪.৭৩ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন, যা ছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। তার আগের অর্থবছরে (২০২৩-২৪) সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে, ৪৬০ কোটি (৪.৬০ বিলিয়ন) ডলার।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বা আমিরাত থেকে রেমিট্যান্সের সেই চমক আর নেই; এক ধাক্কায় যুক্তরাষ্ট্র নেমে এসেছে পঞ্চম স্থানে; আমিরাত তৃতীয় স্থানে। আবার সেই সৌদি আরব থেকেই এখন বেশি রেমিট্যান্স আসছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স প্রবাহের দেশভিত্তিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৪৯০ কোটি (৪.৯০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্সে পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮২ কোটি ১৩ লাখ ডলার এসেছে সৌদি আরব থেকে। হিসাব বলছে, এ দুই মাসে মোট রেমিট্যান্সের ১৭ শতাংশই এসেছে সৌদি থেকে। সৌদি আরবের ধারেকাছেও নেই অন্য দেশগুলো। জুলাই-আগস্ট সময়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাজ্য থেকেÑ ৫৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। আমিরাত থেকে এসেছে ৫৪ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ৫৪ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ৪৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সৌদি আরব থেকে ৪২ কোটি ৬৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। আমিরাত থেকে এসেছিল ২৮ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে আসে ২৮ কোটি ২৫ লাখ ডলার। মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে যথাক্রমে ২৬ কোটি ৬৯ লাখ ও ২২ কোটি ২২ লাখ ডলার। দ্বিতীয় মাস আগস্টে সৌদি আরব থেকে এসেছে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। আমিরাত থেকে এসেছিল ২৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে আসে ২৭ কোটি ৯৫ কোটি ডলার। মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে যথাক্রমে ২৭ কোটি ৬৪ লাখ ও ২৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার।
শুধু এ দুই মাস নয়, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ তিন মাসও (এপ্রিল, মে ও জুন) সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব থেকে। জুন মাসে দেশটিতে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৪৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার দেশে পাঠান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৬ কোটি ২০ লাখ ডলার আসে যুক্তরাজ্য থেকে। মালয়েশিয়া থেকে আসে তৃতীয় সর্বোচ্চ, ৩৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসে ৩২ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে ২৩ কোটি ৮১ লাখ ডলার। মে মাসে সৌদি আরব থেকে আসে ৫৩ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। আরব আমিরাত থেকে এসেছে ৩৫ কোটি ১৫ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ৩৪ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ৩৪ কোটি ৪ লাখ ডলার। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২ কোটি ৩৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এপ্রিল মাসে সৌদি আরব থেকে এসেছিল ৪৯ কোটি ১৪ লাখ ডলার। আরব আমিরাত থেকে এসেছিল ৩৭ কোটি ২২ লাখ ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ৩৩ কোটি ৭ লাখ ডলার।
যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ২৯ কোটি ৪১ লাখ ডলার। আর মালয়েশিয়া থেকে এসেছিল ২১ কোটি লাখ ডলার। অথচ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আগের মাসগুলোতে (জুলাই থেকে মার্চ) সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে; ধারেকাছেও ছিল না সৌদি আরব। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত আগস্ট মাসে ইতালি থেকে ১৬ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, ওমান থেকে ১৪ কোটি ৬৪ লাখ ডলার, সিঙ্গাপুর থেকে ১১ কোটি ৬ লাখ ডলার, কুয়েত থেকে ১০ কোটি ৮৪ লাখ ডলার, কাতার থেকে ৯ কোটি ১৯ লাখ ডলার, বাহরাইন থেকে ৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৪ কোটি ৮৩ লাখ ডলার, ফ্রান্স থেকে ৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ২ কোটি ২৪ লাখ ডলার, গ্রিস থেকে ১ কোটি ৬৭ লাখ ডলার, জর্ডান থেকে ১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, কানাডা থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার, অস্ট্রেলিয়া থেকে ১ কোটি ৩১ লাখ ডলার, স্পেন থেকে ১ কোটি ২৯ লাখ ও জার্মানি থেকে ১ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী অবস্থান করেন, সেখান থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসবে এটাই স্বাভাবিক। বছরের পর বছর তা-ই তো হয়ে আসছে। মাঝে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে সৌদি আরব পেছনে পড়ে গিয়েছিল। এখন সেটা ঠিক করা হয়েছে। তাই সৌদি থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসছে। বিষয়টির ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, এখন থেকে ব্যাংকগুলোকে যে দেশের রেমিট্যান্স, সেই দেশের আয় হিসাবে দেখানোর নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যে কারণে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে।