প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে:
- ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে
- রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার ৪৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে
- সম্পদের গুণগত মান যাচাই করলে আরও ঝুঁকি ধরা পড়তে পারে,
- যা স্থিতিশীলতা ও ঋণ প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে
- কঠোর নজরদারি, পুনর্গঠন ও পুনর্মূলধনীকরণের পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি
বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রবৃদ্ধির সম্ভাব্য এই হার আগের বছরের চেয়ে সামান্য বেশি হলেও রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা বাড়তি শুল্ক প্রবৃদ্ধিকে চাপে ফেলতে পারে বলে সতর্ক করেছে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি। ঘটনাবহুল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। আর সাময়িক হিসাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেটে সরকার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে।
এডিবির সর্বশেষ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষি ও সেবা খাত প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নেবে। মূল্যস্ফীতি কমে আসা, গৃহস্থালি ক্রয়ক্ষমতা বাড়া, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক সরকারি ব্যয় তাতে সহায়ক হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র গত অগাস্টে বাংলাদেশের সব ধরনের রপ্তানি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমে আসবে বলে ধারণা দিয়েছে এডিবি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন করে শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের গড় রপ্তানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তৈরি পোশাকের শুল্ক ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ। কিছু পণ্যে শুল্কের হার ৫২ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশ এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ৯ শতাংশ ছিল। এডিবি মনে করছে, নতুন শুল্ক রপ্তানির চাহিদা কমিয়ে দিতে পারে এবং বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের নারী শ্রমিকেরা তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
এডিবির হিসাবে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ শতাংশ, যা আগের বছরের ৪ দশমিক ২ শতাংশের চেয়ে কম। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বারবার বন্যা, শ্রম অসন্তোষ, সরবরাহ ব্যাহত হওয়া, টাকার অবমূল্যায়ন এবং বৈশ্বিক চাহিদা দুর্বল হওয়ার প্রভাবেই প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর হয়ে যায়।
গত অর্থবছর ত্রৈমাসিক হিসাবে প্রবৃদ্ধি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। প্রথম প্রান্তিকে যেখানে প্রবৃদ্ধি ছিল ২ শতাংশ, সেখানে তৃতীয় প্রান্তিকে তা বেড়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ হয়। এর পেছনে মূল চালিকাশক্তি ছিল উৎপাদন খাত। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আর্থিক দুর্বলতায় সেবা খাত মন্থর থাকে আর বন্যার কারণে কৃষি খাত সংকুচিত হয়।
গত এপ্রিলে এডিবি তাদের পূর্বাভাসে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমিয়ে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ করেছিল। সে সময় তারা সতর্ক করে বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলতে পারে।
এডিবির হিসাবে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশ, যা আগের বছরের ৯ দশমিক ৭ শতাংশের তুলনায় বেশি। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
তবে অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমে আসে। এডিবির পূর্বাভাস, অনুকূল পরিবেশ ও আঁটসাঁট মুদ্রানীতির ফলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
এডিবি বলছে, ব্যাংক খাতের ঝুঁকি বাড়ছে। ২০২৪ সালের জুনে খেলাপি ঋণের হার যেখানে ছিল ১২ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০২৫ সালের মার্চে তা বেড়ে ২৪ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়ায়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে এই হার ৪৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্পদের গুণগত মান যাচাই করলে আরও ঝুঁকি ধরা পড়তে পারে, যা স্থিতিশীলতা ও ঋণ প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে। সে জন্য কঠোর নজরদারি, পুনর্গঠন ও পুনর্মূলধনীকরণের পরামর্শ দিয়েছে এডিবি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ভেতরে নানা চ্যালেঞ্জ থাকার পরও প্রবাসী আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৩০ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। তাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ২৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই অর্থ দিয়ে ৪ দশমিক ২ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানি বেড়েছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, তাতে আগের বছরের সংকোচনের ধারা কাটিয়ে ওঠার আভাস মিলেছে। আমদানি বেড়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি হিসাবে শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশ জিডিপি উদ্বৃত্ত হয়েছে, যা আগের বছরের ১ দশমিক ৫ শতাংশ ঘাটতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন