২০২৫-২৬ অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এর মধ্যে ঢাকায় রেমিট্যান্স এসেছে সর্বোচ্চ ৭০০ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে চট্টগ্রাম বিভাগে। জুলাই-নভেম্বর মাসে বিভাগটিতে এসেছে ৩৩৮ কোটি ৭৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। এ ছাড়া সিলেট বিভাগে ১০৩ কোটি ২৫ লাখ ডলার, খুলনা বিভাগে ৫১ কোটি ৮৪ লাখ ডলার, রাজশাহী বিভাগে ৪০ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, বরিশাল বিভাগে ৩১ কোটি ২৮ লাখ ডলার, ময়মনসিংহ বিভাগে ২২ কোটি ৬ লাখ ডলার ও রংপুর বিভাগে ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
সদ্য বিদায়ি নভেম্বর মাসে প্রবাসীরা দেশে ২৮৮ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় রেমিট্যান্স এসেছে ১৪৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার। গত নভেম্বর মাসে সৌদিপ্রবাসীরা দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৩ কোটি ৫ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। এ ছাড়া শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় আরও রয়েছে যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ওমান, কুয়েত, কাতার ও সিঙ্গাপুর। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ কোটি ১২ লাখ ৮০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। আর যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ওমান, ইতালি, কুয়েত, কাতার ও সিঙ্গাপুর থেকে নভেম্বর মাসে যথাক্রমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৭ কোটি ৮৩ লাখ ৬০ হাজার, ৩৩ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার, ২০ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার, ১৭ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার, ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ১০ হাজার, ১৪ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার, ১৪ কোটি ৬২ লাখ ৮০ হাজার ও ১১ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।
নভেম্বর মাসে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৮ কোটি ৭৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৯ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স।
এর আগে গত নভেম্বরে এসেছে চলতি অর্থবছরের সর্বোচ্চ ২৮৮ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স। আর গত অক্টোবর ও সেপ্টেম্বরে দেশে এসেছিল যথাক্রমে ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ও ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। আর গত আগস্ট ও জুলাইয়ে যথাক্রমে দেশে এসেছিল ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার ও ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। এদিকে, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরজুড়ে দেশে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৩২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স, যা দেশের ইতিহাসে কোনো নির্দিষ্ট অর্থবছরে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়ের রেকর্ড।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলোতে যে পরিমাণ আয় আসছে, তার চেয়ে বেশি আসার কথা। কিন্তু অনেক প্রবাসী বিদেশে স্থায়ী হয়ে গেছেন, সে কারণে তা হচ্ছে না। তারা বরং উলটো দেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন এবং এতে অর্থ পাচার বাড়ছে। গত বছরের বেশির ভাগ সময়ে প্রবাসী আয় পরিস্থিতি খুব বেশি ভালো ছিল না। রেমিট্যান্সের সুবাতাসের বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর হুন্ডির মাধ্যমে ডলার পাঠানো কমেছে। এর বদলে অফিসিয়াল চ্যানেলে (ব্যাংকিং) ডলার বেশি পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, রেমিট্যান্সে ডলারের দর বেড়ে যাওয়াই বড় কারণ। মাঝে রেমিট্যান্সের দর বেড়েছে, আবার কমেছে। এখন ডলারের টানা দর বাড়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে।
আয়ে শীর্ষ পাঁচ জেলা
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা জেলায়। এরপর রয়েছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও নোয়াখালী জেলার অবস্থান। জুলাই থেকে নভেম্বর ঢাকা জেলায় ৫১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার এবং চট্টগ্রাম জেলায় ১০৩ কোটি ৫৫ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। এ ছাড়া কুমিল্লায় ৬৯ কোটি ৬৬ লাখ, সিলেটে ৫৫ কোটি ২৫ লাখ ডলার এবং নোয়াখালী জেলায় ৩৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে একই সময়ে। সব মিলিয়ে জুলাই-নভেম্বর সময়ে মোট প্রবাসী আয়ের ৫৪ শতাংশই এসেছে এই পাঁচ জেলায়।
কম আয় যেসব জেলায়
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে প্রবাসী আয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে লালমনিরহাট জেলা। এই জেলায় গত পাঁচ মাসে রেমিটেন্স এসেছে ৬৪ লাখ ডলার। প্রবাসী আয়ে একেবারে শেষ দিকে থাকা অপর চারটি জেলা হলোÑ পঞ্চগড়, রাঙামাটি, বান্দরবান ও ঠাকুরগাঁও। গত পাঁচ মাসে পঞ্চগড়ে ৭৪ লাখ ডলার, রাঙামাটিতে ৭৫ লাখ ডলার, বান্দরবানে ৮০ লাখ ডলার এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ১ কোটি ২৮ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে।

