ঢাকা বুধবার, ২১ মে, ২০২৫

নানা কাণ্ডে বারবার বিতর্কিত নোবেল

রুহুল আমিন ভূঁইয়া
প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৫, ০১:৫৮ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ক্যারিয়ারের শুরুতে সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে দুই বাংলার মানুষকেই মোহিত করেছিলেন জনপ্রিয় গায়ক মইনুল আহসান নোবেল। কিন্তু ধীরে ধীরে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠতে শুরু করে। অতীতে মাদকাসক্তি থেকে শুরু করে অন্যের স্ত্রীকে অপহরণসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। ব্যক্তিগত নানা আচরণের কারণে বিভিন্ন সময়ে আলোচিত-সমালোচিত হন তিনি। একাধিক বিয়ে করেও আলোচনায় এসেছিলেন এই গায়ক। কিন্তু কোনো সংসারই স্থায়ী হয়নি। ২০১৯ সালে সালসাবিল মাহমুদকে বিয়ে করে আলোচনার সৃষ্টি করেন নোবেল। কিন্তু মাদক ত্যাগ না করায় সেই সংসার টেকেনি। এরপর ২০২৩ সালের শেষে ফের নোবেলের বিয়ের খবর সামনে আসে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জি-বাংলার গানের শো ‘সা রে গা মা পা’য় অংশ নিয়ে সবার নজরে আসেন নোবেল। তার গান দর্শকের মনে স্থান করে নেয়। পরে তার বেশ কিছু গান জনপ্রিয়তা পায়। তবে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বরাবরই সমালোচিত এই গায়ক। একটা সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে শো করতে গেলে সেখানেও তাকে নিয়ে সমালোচনা হয়। 

২০২৩ সালে কুড়িগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন তিনি। সে সময় নোবেলের আচরণে বিরক্ত হয়ে উপস্থিত দর্শক জুতা ও পানির বোতল ছুড়ে মারেন শিল্পীর দিকে। সেই ঘটনা মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। নোবেলের বিতর্ক এখানেই শেষ নয়। এর আগে জনপ্রিয় পর্যটনস্থল বান্দরবানে গিয়ে নেশা করা থেকে শুরু করে পর্যটকদের মারধর, অভব্য আচরণের অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। এমনকি বিতর্কের রাজা নোবেল রাস্তার পাশে প্রকাশ্যে গাঁজা খাওয়ার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেও সমালোচিত হন। বিতর্ক সৃষ্টি করা যেন তার নেশা, পেশা। 

‘খ্যাত’ থেকে হঠাৎই ‘কুখ্যাত’ নোবেলকে নিয়ে এখন বিতর্কই বেশি। প্রায়দিনই থাকেন চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে। একাধিক বিয়ে, নারীর সঙ্গে সম্পর্ক, মাদক বিতর্ক সবই জুটেছে তার নামের পাশে। বারবার নিজেকে গানে মগ্ন রাখার কথা জানালেও কিছুতেই সমালোচনা পিছু ছাড়েনি এই গায়কের।

২০১৯ সালে কলকাতার টিভি চ্যানেল জি-বাংলায় প্রচারিত গানের প্রতিযোগিতামূলক রিয়্যালিটি শো ‘সা রে গা মা পা’য় নাম লেখানোর আগে গোপালগঞ্জের ছেলে নোবেলকে সেভাবে কেউই চিনতেন না। যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি দুই বাংলায় ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন, সেখান থেকেই তাকে নিয়ে বিতর্কের সূচনা। এই শোতে সবচেয়ে বেশি পারফর্ম করেন বাংলাদেশের নন্দিত গীতিকার ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদের সৃষ্টি করা কিছু গানে। কিন্তু নোবেল শুরুর দিকে একটি গানেও প্রিন্স মাহমুদের নাম বলেননি, যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। এ নিয়ে সে সময় ফেসবুক লাইভে নোবেলকে নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন স্বয়ং প্রিন্স মাহমুদ।

এরপর নোবেল জড়িয়ে পড়েন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বিতর্কে। এ নিয়েও কম সমালোচনা হয়নি। ‘সা রে গা মা পা’র মঞ্চে এক বিচারককে কটাক্ষ করে মন্তব্য করার অভিযোগে কিছুদিন শো থেকে সাসপেন্ড ছিলেন এই গায়ক। গত বছরের ৩০ জুলাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে পুনরায় সমালোচনায় জড়ান নোবেল। সে সময় ওপার বাংলার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত জনপ্রিয় গায়িকা ইমন চক্রবর্তী ‘নোবেলকে কাছে পেলে থাপড়াবেন’ বলে হুঁশিয়ারি দেন। এ ছাড়া চারদিক থেকে ওঠে নোবেলের উপযুক্ত শাস্তির দাবি। নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এই গায়কের বিরুদ্ধে আছে গান চুরির অভিযোগও।

সম্প্রতি আবারও বিতর্কে দেশের জনপ্রিয় এই গায়ক। অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে ডেমরা থানার পুলিশ। দুই বছর আগেও নোবেলকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। সেবার প্রতারণার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। একটা অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছিলেন নোবেল। কিন্তু পরে আর তিনি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। এ ঘটনায় ২০২৩ সালে নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় এক দিনের রিমান্ডসহ কয়েক দিন কারাভোগ করতে হয় তাকে। পরে জামিন পান।

এর আগে ২০২১ সালে এক সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে নোবেলের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরিও হয়েছিল। সে বছরই তার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছিলেন প্রাক্তন স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদও।

আট মাস আগেই নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে বেরিয়েছেন এই বিতর্কিত গায়ক। সে সময় প্রকাশ্যে নিজের ভুল স্বীকার করেছিলেন তিনি। একের পর এক ঘটনায় যে তিনি অনুতপ্ত, সে কথাও জানিয়েছিলেন। তার পরেও আবার এই বিতর্ক নোবেল অনুরাগীদের ভাবাচ্ছে।

গায়ক নোবেল আর বিতর্ক যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও গানের জগতে এই গায়ক নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি শুধু তার বিশৃঙ্খল জীবনযাপনের কারণে। উল্টো বারবার জড়িয়েছেন বিতর্কে, হয়েছেন সমালোচিত।