শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৫, ১১:৪২ পিএম

ধ্বংসস্তূপে ফিরছে গাজাবাসী, সরছে ইসরায়েলি সেনারা

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৫, ১১:৪২ পিএম

ধ্বংসস্তূপে ফিরছে গাজাবাসী, সরছে ইসরায়েলি সেনারা

  • আজ শনিবার ভোর থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হচ্ছে 
  • যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্দিদের মুক্তি
  • হামাসের হাতে আটক ২০ ইসরায়েলির বিনিময়ে শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গত দুই বছরের ক্রমাগত ইসরায়েলি হামলা শেষ হতে চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে শান্তির সুবাতাস বইছে উপত্যকাজুড়ে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গতকাল শুক্রবার হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়ি-ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন।  এদিকে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদেরও সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির পক্ষ থেকে।  হামাস ও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চুক্তি অনুমোদনের ২৪ ঘণ্টা পর স্থানীয় সময় আজ শনিবার ভোর থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে যাচ্ছে।

চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০ জন ইসরায়েলি বন্দি এখনো জীবিত আছেন। এর বিনিময়ে শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দিকে ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।

চুক্তির আগে এক সংসদীয় বৈঠকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান, যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মধ্যস্থতা ও চুক্তি সম্পন্ন করতে সহায়তার জন্য। অন্যদিকে হামাসের নির্বাসিত গাজাপ্রধান খলিল আল-হাইয়া জানিয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পেয়েছেন যে, এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছে।

এদিকে গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলি সেনারা গাজার কিছু এলাকা থেকে পিছু হটা শুরু করলে গাজাবাসী দলে দলে ধুলায় মোড়া রাস্তায় হেঁটে গাজা সিটির দিকে ফিরতে থাকেন, যা কয়েক দিন আগেই ইসরায়েলের বড় হামলায় ধ্বংস হয়।

গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকার বাসিন্দা ৪০ বছর বয়সি ইসমাইল জায়দা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার বাড়িটা এখনো দাঁড়িয়ে আছে। এ জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু চারপাশের সব শেষ। আমার প্রতিবেশীদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে; পুরো পাড়া-পড়শি নিশ্চিহ্ন।’

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আজ (শুক্রবার) স্থানীয় সময় দুপুরে যুদ্ধবিরতি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে। ইসরায়েল সরকার ভোরের দিকে হামাসের সঙ্গে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করে; যার ফলে আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহার এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুরোপুরি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার পথ খুলে যায়।

গাজায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রথম ধাপে ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজার প্রধান শহরগুলো থেকে সরে আসতে বলা হয়েছে; যদিও তারা এখনো উপত্যকার প্রায় অর্ধেক এলাকার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

চুক্তি কার্যকর হলে খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী বহনকারী ট্রাকগুলো গাজায় ঢুকতে পারবে। এর ফলে ত্রাণ দেওয়া যাবে সেই লাখো নাগরিককে, যারা ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিল।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরের বাসিন্দাদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, কিছু ইসরায়েলি সেনা গাজার পূর্ব দিকে সীমান্তসংলগ্ন এলাকা থেকে পিছু হটেছে; যদিও সেখান থেকে ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা গেছে।

গাজার কেন্দ্রস্থল নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরে কিছু ইসরায়েলি সেনা তাদের সামরিক অবস্থান গুটিয়ে ইসরায়েলি সীমান্তের দিকে চলে যায়। তবে আজ ভোরের দিকে গোলাগুলির শব্দ শোনার পর বাকি সেনারা সেই এলাকাতেই থেকে যায়।

রয়টার্স জানিয়েছে, ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল ধরে গাজা সিটির দিকে যাওয়ার রাস্তা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সরে এসেছে। গত মাসজুড়ে ইসরায়েলি আক্রমণের শিকার এই অঞ্চলে ফিরে যাওয়ার আশায় সেখানে আজ শত শত মানুষ জড়ো হয়।

তবে কাছাকাছি গোলাগুলির শব্দ শুনে অনেকে সামনে এগোনোর বিষয়ে দ্বিধান্বিত ছিল। বাসিন্দারা জানান, হাতেগোনা কয়েকজন হেঁটে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছিল।

গাজা সিটিতে উদ্ধারকর্মীরা সেই এলাকাগুলোতে কাজ শুরু করেছেন, যেখানে তারা আগে পৌঁছতে পারেননি। স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, আগের হামলায় নিহত অন্তত ১০টি মৃতদেহ তাঁরা উদ্ধার করেছেন।

দীর্ঘ দুই বছর পর বাড়ি ফেরার অনুভূতি জানিয়ে ৪০ বছর বয়সি মাহদি সাকলা বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতি এবং অস্ত্রবিরতির খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই খুব খুশি হয়েছিলাম। গাজা সিটিতে আমাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলাম। অবশ্য এখন আর বাড়ি নেই; সব ধ্বংস হয়ে গেছে।

কিন্তু ধ্বংসস্তূপ হলেও সেখানে ফিরে যেতে পারলে আমরা খুশি। এটাও এক দারুণ আনন্দ। গত দুই বছর আমরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বাস্তুচ্যুত হয়ে কষ্ট সহ্য করেছি।’

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সর্বশেষ তথ্য মতে, আইডিএফ বর্তমানে গাজা উপত্যকার ৫৩ শতাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যার অধিকাংশই শহরাঞ্চলের বাইরে অবস্থিত।

এদিকে, এখন থেকে প্রতিদিন ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির আর্মি রেডিওর এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে, যুদ্ধ চলাকালে গাজা ছেড়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের রাফাহ সীমান্ত দিয়ে ঘরে ফেরারও অনুমতি দেওয়া হবে।

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ দিক থেকে গাজার উত্তরাঞ্চলে এই ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো সালাহ আল-দিন ও আল-রাশিদ সড়ক দিয়ে চলাচল করবে। এসব ট্রাকের মাধ্যমে খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম, আশ্রয়সামগ্রী ও জ্বালানি সরবরাহ করা হবে।

ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে থাকবে জাতিসংঘ, স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত একটি ব্যবস্থা, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আর্মি রেডিওর তথ্য মতে, গাজার বাসিন্দারা রাফাহ সীমান্ত দিয়ে মিসরেও যাতায়াত করতে পারবেন, যা ২০২৫ সালের জানুয়ারির চুক্তির আওতায় আগেও সীমিতভাবে অনুমোদিত ছিল। তবে এই যাতায়াত ইসরায়েলের অনুমোদনসাপেক্ষে হবে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) তত্ত্বাবধান ও পরিদর্শনের অধীনে পরিচালিত হবে, বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির বাস্তবায়ন তদারকিতে ইসরায়েলে ২০০ সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনটাই নিশ্চিত করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর (পেন্টাগন)। এই সেনারা মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের অধীনে কাজ করবে।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন গঠিত টাস্কফোর্সটির নাম হবে সিভিল-মিলিটারি কো-অর্ডিনেশন সেন্টার, যা গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অগ্রগতি এবং মানবিক সহায়তার প্রবাহ তদারকি করবে।

অফিসিয়াল সূত্র বলছে, সেনারা ইসরায়েলে অবস্থান করলেও তারা গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করবে না। তাদের কাজ হবে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মানবিক সহায়তা, নিরাপত্তা সমন্বয় ও অবকাঠামো পুনর্গঠনে সহায়তা করা।

যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে ইসরায়েল ও হামাস সমঝোতায় পৌঁছালেও, এখনো বহু জটিল ইস্যু অনিষ্পন্ন রয়ে গেছেÑ সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, হামাস কি তার সব অস্ত্র সমর্পণ করবে?

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য হামাসকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্র হতে হবে, পাশাপাশি গাজা শাসন থেকে সরে গিয়ে সংগঠন হিসেবে নিজেদের বিলুপ্ত করতে হবে।

অন্যদিকে, হামাস প্রকাশ্যে অস্ত্র সমর্পণের দাবি প্রত্যাখ্যান করলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, তারা অংশিকভাবে অস্ত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে গোপনে কিছু নমনীয়তা দেখিয়েছে।

ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিশেষজ্ঞ হিউ লাভাট বলেন, নিরস্ত্রীকরণের প্রশ্নে হামাসের অবস্থানেই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন দেখা গেছে। গোপনে তারা ইঙ্গিত দিয়েছে যে, আক্রমণাত্মক অস্ত্রগুলোর একটি অংশ তারা নিষ্ক্রিয় করতে রাজি হতে পারে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই ইস্যুটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে বিপন্ন করে তুলতে পারেÑ যদি হামাস সম্পূর্ণভাবে অস্ত্র ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে ইসরায়েল আবারও হামলা শুরু করতে পারে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের গাজাভিত্তিক গবেষক আজমি কেশাওয়ি বলেন, হামাস হয়তো স্বল্প ও দীর্ঘ পাল্লার রকেটের মতো আক্রমণাত্মক অস্ত্র সমর্পণ করতে পারে। কিন্তু ছোট অস্ত্র বা গোপন টানেল নেটওয়ার্কের মানচিত্র কখনোই দেবে না।

তার মতে, হামাস শুধু তখনই অস্ত্র ছাড়বে, যখন একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ইসরায়েল তার দখল শেষ করবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!