রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় আহমাদ ওয়াদুদ নামে এক সাংবাদিককে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। ছিনতাইকারীরা তার কাছ থেকে মোবাইল ও মানিব্যাগ কেড়ে নেয়। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ তিন সড়কের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী তাৎক্ষণিকভাবে মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা জানান। সেখানেও তিনি ভোগান্তির শিকার হন বলে অভিযোগ করেছেন।
ঘটনা শুনে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান ভুক্তভোগীকে বলেন, আমি ওসি হয়েও এই কম দামি ফোন ব্যবহার করি, আপনি এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই! আবার ঘটনাস্থলে যাওয়ার বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করে এসআই জসিম বলেন, ‘ওখানে ছিনতাইকারীরা বসে থাকবে নাকি? আপনার কমন সেন্স নাই?’
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন নজরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা ভুক্তভোগীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ এ বিষয়ে কঠোর। এরই মধ্যে মোহাম্মদপুর থানার এসআই জসিম ও এএসআই আনোয়ারুলসহ চার পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে তেজগাঁও জোনের উপপুলিশ কমিশনার ইবনে মিজান বলেন, ইতিমধ্যে এই ঘটনায় আমরা তদন্ত শুরু করেছি। বিষয়টি আমাদের সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তারা অবগত রয়েছেন। আমরা ওই সাংবাদিকের যে মোবাইল ছিনতাই হয়েছে সেটি উদ্ধারের চেষ্টা করছি। আশা করি, আপনাদের ভালো সংবাদ দিতে পারব।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘটনার বিবরণ দিয়ে একটি পোস্টও দিয়েছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক। পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। ক্ষুব্ধ নেটিজেনরা পুলিশের ব্যবহার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে চার পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী সাংবাদিক জানান, ছিনতাইকারীরা তার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও টাকা-পয়সা নিয়ে যায় এবং চাপাতি দিয়ে সামান্য আঘাত করে। সৌভাগ্যবশত তার স্ত্রী অক্ষত ছিলেন। ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী ও তার স্ত্রী মোহাম্মদপুর থানায় যান। ডিউটি অফিসার এসআই জসিমের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তিনি প্রথমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং অভিযোগ লেখার লোক নেই বলে জানান। পরে ভুক্তভোগী নিজেই অভিযোগ লিখলেও তার কোনো কপি দেওয়া হয়নি। তাকে এএসআই আনারুলের সাথে ফোনে কথা বলতে বলা হয়, যিনি ঘটনাস্থলে যেতে পারবেন।
ভুক্তভোগী তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের অনুরোধ জানালে এসআই জসিম তা সম্ভব নয় বলে জানান এবং ছিনতাইকারীদের ঘটনাস্থলে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেন। এরপর ভুক্তভোগী ওসি ইফতেখার হাসানের কক্ষে যান। ওসি তার দামি ফোন ব্যবহার নিয়ে মন্তব্য করেন এবং এএসআই আনারুলের সাথে যোগাযোগ করে তাকে বাসস্ট্যান্ড মোড়ে অপেক্ষা করতে বলেন।
ছিনতাই হওয়া মোবাইলসহ গ্রেপ্তার ৩মোহাম্মদপুরে আহমাদ ওয়াদুদ নামে এক সাংবাদিককে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে মোবাইল-মানিব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনায় সন্দেহভাজন তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলেনÑ ইউসুফ (২৬), সিয়াম (২৩) ও জহুরুল (২২)। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তেজগাঁও জোনের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইবনে মিজান।
তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা নিয়ে ওই সাংবাদিকের একটি ফেসবুক পোস্ট আমাদের নজরে আসে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়। পরে আমরা এ ঘটনায় অভিযান পরিচালনা করি ও ছিনতাই হওয়া মোবাইলটি উদ্ধার করতে সক্ষম হই এবং সন্দেহভাজন তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করি। এই ঘটনায় চার পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
আপনার মতামত লিখুন :